বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক সারজিস আলম বলেছেন, ‘বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব কেড়ে নিতে ভারত গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত রয়েছে। তাদের দোসর আওয়ামী লীগকে পুনরায় ক্ষমতায় বসাতে উঠেপড়ে লেগেছে। তাই দেশের জনগণ এক বিন্দু রক্ত থাকতে ভারতের সব ষড়যন্ত্র প্রতিহত করে যাবে। আগামী দিনে আমাদের লড়াই হবে কঠিন ও দীর্ঘ সময়ের। ভারতের তাঁবেদারি বাংলাদেশের জনগণ করে না এবং আগামী দিনেও করবে না।’
আজ মঙ্গলবার বিকেলে নীলফামারীর সৈয়দপুর শহরের বিমানবন্দর সড়কের অফিসার্স কলোনি ফাইভ স্টার মাঠে মতবিনিময় সভা ও পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সারজিস আলম এ কথা বলেন। মহান বিজয় দিবস ও জুলাই-আগস্ট গণ-অভ্যুত্থান উপলক্ষে আয়োজিত মতবিনিময় সভা ও চিত্রাঙ্কন, কবিতা আবৃত্তি ও রচনা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণী উপলক্ষে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
সারজিস আলম বক্তব্যে আরও বলেন, ‘এত দিন মহান বিজয় দিবস ছিল আওয়ামী লীগের বিজয় দিবস। বিজয় দিবসে শুধু দুটি গান বাজত, যা আপনারা সবাই জানেন। বিজয় দিবস, স্বাধীনতা, সংবিধান ও রাষ্ট্র কারও কোনো একক দল, ব্যক্তি কিংবা পরিবারের হতে পারে না। কিন্তু ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার এসব নিজের পারিবারিক সম্পদ মনে করেছিল। গত ১৬ বছরে আমরা কেউ এসবের বিরুদ্ধে কথা বলতে পারিনি। যাঁরাই এসবের বিপক্ষে কথা বলেছেন, তাঁদের গুম, খুন ও হত্যা করা হয়েছে। এমনকি মামলা, হামলা ও নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে।’
সারজিস আলম বলেন, ‘হাসিনা সরকারের পতন হয়েছে তার অত্যাচারের কারণে। এমন লজ্জাজনক পতন বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো প্রধানমন্ত্রী কিংবা সরকারপ্রধানের হয়নি। আগামী দিনেও এমন ঘটনার অবতারণা বাংলাদেশের মাটিতে হবে না। ১৫ ডিসেম্বর গুম কমিশনের একটি রিপোর্ট এসেছে, সেখানে বলা হয়েছে, যারা খুনি হাসিনা রেজিমের বিরোধিতা করেছে, তাদের গুম করা হয়েছে। টর্চার সেলে নিয়ে নির্যাতনের মাধ্যমে গুম করা হয়। তারপর যখন ট্রেন আসে, তখন নির্জন জায়গায় নিয়ে রেললাইনের ওপর দেহ রেখে দেহ ছিন্নবিচ্ছিন্ন করা হয়েছে। পরে সেটিকে দুর্ঘটনা হিসেবে দেখানো হয়েছে। এমন অসংখ্য মানুষের নির্যাতনের ঘটনা ওই রিপোর্টে উঠে এসেছে।’
সৈয়দপুর শহরে বসবাসরত উর্দুভাষী (বিহারী) মানুষেরা দুর্দশাগ্রস্তভাবে জীবন যাপন করছে বলে উল্লেখ করে সারজিস বলেন, তাঁদের আবাসন সমস্যাসহ সব সমস্যার জন্য প্রয়োজনে সব উপদেষ্টার সঙ্গে কথা বলে সেসব আশু সমস্যা সমাধান করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সৈয়দপুরের উদ্যোগে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য দেন সৈয়দপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. নুর-ই-আলম সিদ্দিকী, বিএনপি সৈয়দপুর রাজনৈতিক জেলা শাখার সভাপতি মো. আবদুল গফুর সরকার, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সহসমন্বয়ক মো. রেদোয়ান ইসলাম প্রমুখ।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন সৈয়দপুরের সদস্য জাবেদ আত্তারীর সভাপতিত্বে এ সময় মঞ্চে সৈয়দপুর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আমিনুল ইসলাম, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে সৈয়দপুরের নিহত সাজ্জাদ হোসেনের বাবা মাওলানা মো. আলমগীর হোসেন, জামায়াতে ইসলামী সৈয়দপুর পৌর শাখার আমির মো. শরফুদ্দিন খান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।