ময়মনসিংহের হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুর উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তবে বন্যার পানি কমছে ধীরগতিতে। পানি নেমে গিয়ে ভেসে উঠছে দুর্গত এলাকার ক্ষয়ক্ষতির চিত্র। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, এত দীর্ঘ সময়ের বন্যা তাঁরা দেখেননি।
বন্যাকবলিত এলাকায় কৃষি, মৎস্য, প্রাণিসম্পদ ও সড়ক বিভাগের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা মনে করছেন। জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, হালুয়াঘাট, ধোবাউড়া ও ফুলপুরে ৮৯ হাজার ৫৫০ জন কৃষক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ৩১ হাজার ৬৮০ হেক্টর জমির আমন ধান। শুধু আমন ধানে ৩১৩ কোটি টাকা ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়া মৎস্য খাতে তিনটি উপজেলায় ১৪ হাজার ৯৪৫ মাছের খামার তলিয়ে প্রায় ৮৫ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।
ধোবাউড়া উপজেলার ২৬টি গ্রামে ২ হাজার ২০০ পরিবার এখনো পানিবন্দী। এ উপজেলার পোড়াকান্দুলিয়া, বাঘবেড়, গোয়াতলা ও ধোবাউড়া সদরে ধীরে ধীরে পানি কমছে। মানুষের ঘর থেকে পানি নামলেও উঠানে রয়েছে পানি। আশ্রয়কেন্দ্রেও রয়েছেন অনেক মানুষ। পানি সরতে শুরু করায় বন্যার ক্ষতচিহ্ন ভেসে উঠছে। আজ শনিবার বন্যার নবম দিনে মানুষের খাদ্য ও সুপেয় পানির সংকট দেখা দিয়েছে।
আজ সকালে গোয়াতলা ইউনিয়নের তারাইকান্দি গ্রামের রুমেছা খাতুনের বাড়ির উঠানে পানি দেখা গেছে। রুমেছা বলেন, ‘আগেও পানি আইছে, কিন্তু এই রহম পানি আর আইছে না। পানি কমনের নামই নাই। আল্লায় জানে আর কই দিন পানিত কষ্টে থাহন লাগব।’
ধোবাউড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিশাত শারমিন বলেন, পানি খুব ধীরে ধীরে কমছে। গ্রামগুলোতে মানুষের ঘর থেকে পানি নেমেছে, তবে উঠানে পানি আছে। ১৯৮৮ সালের পর এমন পরিস্থিতি হয়নি। কবে নাগাদ পানি সরতে পারে তা ধারণা করা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে ত্রাণ কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।
ফুলপুর উপজেলার বন্যাকবলিত ছনধরা, সিংহেশ্বর, ফুলপুর সদর, বালিয়া ও রূপসী ইউনিয়নের ৩২টি গ্রামে ৪ হাজার ৫০০ পরিবার এখনো পানিবন্দী হয়ে আছেন। খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট চলছে বন্যাকবলিত গ্রামগুলোতে। তবে প্রশাসন ও বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ করা হচ্ছে। ফুলপুরের ইউএনও এ বি এম আরিফুল ইসলাম বলেন, বন্যা পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তবে পানি খুব ধীরগতিতে নামছে। পানি নেমে যেতে কত সময় লাগবে তা বলা সম্ভব নয়।
ভারী বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে বোরাঘাট নদীর পানি বেড়ে হালুয়াঘাট উপজেলার ১২টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। উপজেলার নড়াইল, বিলডোরা ও শাকুয়াই ইউনিয়নে পরিস্থিতি উন্নতির দিকে। তবে এখনো অনেক মানুষ পানিবন্দী আছেন। উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আলাউদ্দিন বলেন, ঘরের ভেতরে পানি, চৌকির ওপর বসে থাকতে হচ্ছে। তবে কংস নদীর তীরবর্তী নিচু এলাকার বাড়িঘরে পানি আছে।