রাস্তার পাশে বসে নিহত পাঁচজনের স্বজনদের আহাজারি

রাস্তার পাশে একটি ভবনের সিঁড়িতে বসে কাঁদছন নিহত ব্যক্তিদের স্বজনেরা। তাঁদের শান্ত্বনা দিচ্ছিলেন পুলিশসহ স্থানীয় জনতা। সোমবার উত্তরার জসীমউদ্‌দীন রোডে
ছবি: প্রথম আলো

রাজধানী উত্তরার জসীমউদ্‌দীন রোডের মোড়ে বিপণিবিতান আড়ংয়ের সামনে হাজারো মানুষের জটলা। কয়েক ঘণ্টা আগে সামনের সড়কে ঝরে গেছে তাজা পাঁচটি প্রাণ। উৎসুক জনতার ভিড় ছাপিয়ে চোখ আটকে গেল আড়ংয়ের পাশের প্যারাডাইস ভবনের পাশে। সেখান থেকে ভেসে আসছিল আহাজারির শব্দ। ভিড় ঠেলে ভবনটির সিঁড়ির পাশে যেতেই দেখা গেল স্বজনদের কান্নার রোল, যা আশপাশের সবাইকে ভারাক্রান্ত করছিল।

সোমবার বিকেল সোয়া চারটার দিকে প্যারাডাইস ভবনের সামনের রাস্তায় বিআরটি প্রকল্পের কাজের একটি গার্ডার প্রাইভেট কারের ওপর পড়ে পাঁচজন নিহত হন। আহাজারি করা সবাই নিহত ব্যক্তিদের স্বজন।

নিহত ফাহিমার ছেলের ফাহাদের আহাজারি

স্বজনেরা জানান, রাজধানীর কাওলার বাসিন্দা মো. হৃদয়ের সঙ্গে আশুলিয়ার রিয়ামনির গত শনিবার বিয়ে হয়। আজ ছিল হৃদয়ের কাওলার বাড়িতে বউভাত। অনুষ্ঠান শেষে হৃদয়ের শাশুড়ি ফাহিমা, শাশুড়ির বোন ঝরনা, ঝরনার ছেলে জাকারিয়া ও মেয়ে জান্নাতুল, হৃদয়, তাঁর স্ত্রী রিয়ামনি ও হৃদয়ের বাবা সবুজ একটি প্রাইভেট কারে করে আশুলিয়ায় যাচ্ছিলেন।

দুর্ঘটনায় ফাহিমা, ঝরনা, জান্নাতুল, জাকারিয়া ও হৃদয়ের বাবা সবুজ ঘটনাস্থলেই নিহত হয়েছেন। হৃদয় ও তাঁর স্ত্রী রিয়ামনিকে গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

হৃদয়ের খালাতো ভাই মো. রাকিব স্বজনদের হারিয়ে বিলাপ করছিলেন। স্বজনেরা একটু পরপর মাথায় পানি ঢেলে তাঁকে শান্ত করার চেষ্টা করছিলেন। এর মধ্যেই আহাজারি করে বলছিলেন, ‘ও আল্লাহ, এইড্যা কী হইল। এতগুলা মানুষের কী দোষ আছিল। আমরা তো নিঃস্ব হইয়্যা গেলাম।’

বারবার মুর্ছা যাচ্ছিলেন স্বজন হারানো জাহানারা বেগম

রাকিবের কান্না দেখে পাশে থাকা স্বজনেরাও কাঁদতে থাকেন। মিনিট দশেক পর কিছুটা শান্ত হন রাকিব। তখন কাছে গিয়ে কথা বলতে চাইলে বলেন, ‘ও ভাই, আপনিই বলেন, আমার ভাইগোর কী দোষ আছিল। তারা রাস্তা দিয়ে ভালা কইরাই তো যাইতাছিল। তারপরও ক্যান এই পরিণতি হইল। এইড্যা কার দোষ। কার কাছে বিচার দিমু।’

আফসোস করে রাকিব বলেন, ‘মাত্র এক দিন আগে ভাইয়ের (হৃদয়) বিয়া হইছে। আমরা কত মজা করলাম। আইজকাও হাসিঠাট্টা করছি। এখন এই কষ্ট কই রাখি।’

তিনি জানান, বিকেলে বউভাত শেষে সবাই কাওলার বাড়ি থেকে খুশিমনে বেরিয়েছেন। কিছুক্ষণ পরই শোনেন দুর্ঘটনার খবর। দ্রুত এসে দেখেন সব শেষ।

আহাজারি করতে দেখা গেল আরও অনেককে। তাঁদের কান্নায় ভারী হয়ে ওঠে আশপাশের পরিবেশ। স্থানীয় ব্যক্তিদের অনেকেই সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন তাঁদের।