আশুগঞ্জের কয়েকটি কেন্দ্রে প্রকাশ্যে সিল মারার অভিযোগ

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ আসনের উপনির্বাচনে প্রকাশ্যে সিল মারা হচ্ছে ব্যালটে। আজ রোববার বেলা ১১টার দিকে আশুগঞ্জ উপজেলার তালশহর পশ্চিম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র
ছবি: সংগৃহীত

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনের উপনির্বাচনে আশুগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ভোটকেন্দ্রে আওয়ামী লীগ–সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, প্রকাশ্যে সিল মারাসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। একটি কেন্দ্রে ভুয়া ভোটাররা ভোট দিতে গেলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা ও সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা নীরব ছিলেন। পুলিশ ভুয়া ভোটারদের আটক করে হস্তান্তর করলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা তাঁদের ছেড়ে দেন।

আজ রোববার সকাল আটটা থেকে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ শুরু হয়েছে। শেষ হবে বিকেল চারটায়। এই নির্বাচনে পাঁচজন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী শাহজাহান আলম (নৌকা), জাতীয় পার্টির (জাপা) মনোনীত প্রার্থী আবদুল হামিদ (লাঙ্গল), জাকের পার্টির জহিরুল ইসলাম (গোলাপ ফুল) ও ন্যাশনাল পিপসল পার্টির রাজ্জাক হোসেন (আম) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা।

সকাল নয়টা থেকে বেলা একটা পর্যন্ত আশুগঞ্জের ছয়টি ভোটকেন্দ্রে সরেজমিনে ঘুরে ভোটারদের তেমন উপস্থিতি দেখা যায়নি। তবে চারটি কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের বিরুদ্ধে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি, ভুয়া ভোট ও ব্যালট পেপারে প্রকাশ্যে সিল মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। কেন্দ্রগুলো হলো বড়তল্লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, যাত্রাপুর ইউনিয়নের নূরানীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা, তালশহর পশ্চিম ইউনিয়নের তালশহর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়।

ফাঁকা কেন্দ্রে দায়িত্ব পালন করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। আজ রোববার সকাল ১০টায় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার আড়াইসিধা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে

বেলা ১১টায় যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভোটকেন্দ্রের প্রতিটি পুরুষ ভোটকক্ষের ভেতরে জটলা দেখা যায়। ভেতরে ঢুকতে চাইলে আশুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি হানিফ মুন্সীর সমর্থক মো. হৃদয় গণমাধ্যমকর্মীদের বাধা দেন। একপর্যায়ে সাংবাদিকদের দিকে তেড়ে আসেন। ভোটকক্ষের বাইরে ও ভেতরে আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকেরা ছিলেন। পরে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের একটি স্ট্রাইকিং ফোর্স সেখানে পৌঁছলে আওয়ামী লীগের কর্মী–সমর্থকেরা সটকে পড়েন।

একই চিত্র দেখা গেছে যাত্রাপুর ইউনিয়নের নূরানীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসাও। সেখানে পুলিশ সদস্যরা ভুয়া ভোটার ও আওয়ামী লীগের কর্মী-সমর্থকদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তা, সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা নীরব ছিলেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এই কেন্দ্রের ৪ নম্বর কক্ষের ভেতরে প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হোসেন মোহাম্মদ হাবিবুর রহমানকে দেখা যায়। তাঁর সামনেই কক্ষে থাকা নৌকা প্রতীকের এজেন্ট আজহারুল আমিন ভোটারদের প্রকাশ্যে সিল মারতে সহায়তা করছেন। কথা বলতে চাইলে সহকারী প্রিসাইডিং কর্মকর্তা জাফরিন ছবি তুলতে নিষেধ করেন এবং কেন্দ্র থেকে বের হয়ে যেতে বলেন।

একপর্যায়ে এই কেন্দ্রের বাইরের পুলিশ সদস্যরা এক ইউপি সদস্যের ছেলেসহ তিনজন ভুয়া ভোটারকে আটক করলেও প্রিসাইডিং কর্মকর্তার অসহযোগিতার কারণে যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলামসহ অন্যরা তাঁদের ছাড়িয়ে নিয়ে যান। ইউপি চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমি ভোট দিতে কেন্দ্রে গিয়েছিলাম। এর বাইরে কিছু বলেত পারি না।’

প্রিসাইডিং কর্মকর্তা হোসেন মোহাম্মদ হাবিবুর রহমান বলেন, কোনো সমস্যা নেই। ভোট হচ্ছে। ভুয়া ভোটারদের ছেড়ে দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তাঁরা ভুল বুঝতে পেরেছেন। আর ভোট দিতে পারেননি। তাই তাঁদের ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ৩ হাজার ২১০ ভোট রয়েছে এই কেন্দ্রে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৯৬৯ ভোট পড়েছে।

বেলা ১১টার দিকে তালশহর পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকা প্রতীকে প্রকাশ্যে সিল মারার অভিযোগ পাওয়া গেছে। উপজেলার নাওঘাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভোটে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ তুলে স্বতন্ত্র প্রার্থী জিয়াউল হক মৃধা সাংবাদিকদের বলেন, ‘ভোটকেন্দ্রে ইলেকশন ইঞ্জিনিয়ারিং চলছে। ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গেলে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। নৌকার স্লিপ নিয়ে ঢুকলে ভোট দিতে পারছে। ইঞ্জিনিয়ারিং চলতেছে। আশুগঞ্জের নাওঘাট, যাত্রাপুর, শরীফপুর, তল্লা, আন্দিদিল কেন্দ্রে ভোট ছাপিয়ে ফেলেছে। ভোটার তালিকায় প্যাঁচ লাগিয়ে দিয়েছে। সুক্ষ্ম কারচুপি চলতেছে।’
সহকারী রিটার্নি কর্মকর্তা ও আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শ্যামল চন্দ্র বসাক প্রথম আলোকে বলেন, যাত্রাপুর নূরানীয়া হাফেজিয়া মাদ্রাসা ও যাত্রাপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে কিছু অনিয়মের কথা শুনেছেন। সেখানে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও স্ট্রাইফিং ফোর্স পাঠানো হয়েছে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত আশুগঞ্জে ১৪ শতাংশ ভোট পড়েছে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা ও আশুগঞ্জ উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন নিয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২ (সরাইল-আশুগঞ্জ) আসন গঠিত। এই আসনে মোট ভোটার সংখ্যা ৪ লাখ ১০ হাজার ১১২। এর মধ্যে সরাইল উপজেলায় ২ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৭ এবং আশুগঞ্জ উপজেলায় ১ লাখ ৪৩ হাজার ৫১৫ ভোট। ১৩২টি কেন্দ্র ভোট গ্রহণ চলছে।