বগুড়ার কাহালু উপজেলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ককটেল হামলা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে উপজেলা বিএনপির ৩৫০ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে রোববার মামলা করা হয়েছে। একই দিন নন্দীগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলার অভিযোগে ১৭০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। ওই দুই মামলায় বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনের চার নেতা–কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
বিএনপির নেতা–কর্মীরা বলছে, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ। এই সমাবেশ সামনে রেখে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মামলা ও তাঁদের গ্রেপ্তার করছে পুলিশ।
এ বিষয়ে বগুড়া-৪ (কাহালু-নন্দীগ্রাম) আসনের বিএনপি-দলীয় সংসদ সদস্য মোশারফ হোসেন বলেন, ৩ ডিসেম্বর রাজশাহীতে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশ সামনে রেখে পুলিশ আমাদের নেতা-কর্মীদের ধরপাকড় শুরু করেছে। পুলিশ ও আওয়ামী লীগ যৌথভাবে দলীয় কার্যালয়ে হামলার ‘সাজানো নাটক’ মঞ্চস্থ করে বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। বিপুল অজ্ঞাতনামা আসামি করে দলীয় নেতা-কর্মীদের এলাকাছাড়া করেছে। তবে কোনো ষড়যন্ত্রই রাজশাহীর সমাবেশে জনতার স্রোত আটকাতে পারবে না।
কাহালু উপজেলায় আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে ককটেল হামলা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ তুলে ৩৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৩০০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। রোববার কাহালু উপজেলার পাইকড় ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছারোয়ার হোসেন কাজী ওই মামলা করেন। পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে বিএনপির দুই কর্মীকে গ্রেপ্তার করেছে। তাঁরা হলেন বিএনপির কর্মী শিপন (৩৭) ও আবু তাহের (৫২)।
কাহালু থানার পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শনিবার রাত নয়টার দিকে উপজেলার আড়োলা বাজারে পাইকড় ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে ককটেল হামলা হয়। এ সময় ওই কার্যালয়ে অগ্নিসংযোগও করা হয়। কাহালু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমবার হোসেন বলেন, এ ঘটনায় ইতিমধ্যেই দুজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কাহালু উপজেলা বিএনপির সভাপতি ফরিদুর রহমান বলেন, আগামী ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ ঘিরে পুলিশ বিএনপির নেতা-কর্মীদের হয়রানি করছে। আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে হামলার অভিযোগ পুলিশের সাজানো নাটক। কথিত বিস্ফোরক উদ্ধারের ঘটনায় স্থানীয় বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে ভীতি সৃষ্টি করাই এর উদ্দেশ্য। এটিকে পুঁজি করে হয়তো বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলাও হয়েছে।
রোববার বিকেল সাড়ে চারটার দিকে নন্দীগ্রাম উপজেলা বিএনপির কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের দুই নেতাকে আটক করে পুলিশ। তাঁরা হলেন উপজেলা যুবদলের নেতা মনছুর রহমান (২৯) এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা আতিকুল ইসলাম (২১)।
নন্দীগ্রাম থানার ওসি আনোয়ার হোসেন বলেন, শেরপুর উপজেলায় ছাত্রলীগের ওপর হামলার প্রতিবাদে রোববার বিকেলে বিক্ষোভ সমাবেশ ডাকে নন্দীগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগ। অন্যদিকে ছাত্রদলও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন পালন উপলক্ষে পাল্টা সমাবেশ ডাকে। পুলিশের পক্ষ থেকে দুই পক্ষকেই সমাবেশ না করার জন্য বলা হয়। ছাত্রদলের পক্ষ থেকে কর্মসূচি প্রত্যাহারের কথা জানানো হলেও রোববার বিকেলে পুলিশকে না জানিয়েই তারা উপজেলা শহরে সমবেত হয়। এ সময় তারা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা করলে পুলিশ তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে দুজনকে আটক করে। এ ঘটনায় রোববার রাত সাড়ে আটটায় নন্দীগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শুভ আহম্মেদ বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন। ওই মামলায় নন্দীগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, সাধারণ সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, নন্দীগ্রাম পৌর বিএনপির সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকসহ ২০ জনের নাম উল্লেখ ও ১৫০ জনকে ‘অজ্ঞাতনামা’ আসামি করা হয়েছে।
নন্দীগ্রাম উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শুভ আহম্মেদ অভিযোগ করেন, পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পালনের জন্য ছাত্রলীগ নন্দীগ্রাম বাসস্ট্যান্ড এলাকায় জমায়েত হয়েছিল। কয়েকজন অদূরে পেট্রলপাম্পের সামনে বসে চা পান করছিলেন। পাশেই বিএনপির কার্যালয়ে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা ছিলেন। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে বিএনপির কার্যালয় থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর ককটেল হামলা করা হয়। তবে এতে কেউ আহত হননি।
নন্দীগ্রাম উপজেলা বিএনপির সভাপতি আলাউদ্দিন সরকার ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা চালানোর অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘বিকেলে উপজেলা বিএনপির দলীয় কার্যালয়ে তারেক রহমানের জন্মদিনের অনুষ্ঠান চলছিল। ছাত্রলীগ নিজেই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আমাদের ওপর দোষ চাপায়। পরে কার্যালয়ে হামলার সাজানো অভিযোগ তুলে পুলিশ দলীয় কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে দুই নেতাকে আটক করে।’