জামালপুরের বকশীগঞ্জ উপজেলায় সাংবাদিক গোলাম রব্বানি হত্যাকাণ্ডের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ছয়জনকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত উপজেলার বিভিন্ন জায়গায় অভিযান চালিয়ে তাঁদের আটক করা হয়। এ ঘটনায় আজ শুক্রবার সকাল পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। এদিকে বকশীগঞ্জের এন এম নূর মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে নিহত গোলাম রব্বানির প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আটক ব্যক্তিরা হলেন গোলাম কিবরিয়া ওরফে সুমন, মো. তোফাজ্জল, মো. কফিল উদ্দিন, মোহাম্মদ আয়নাল হক, মো. শহিদ ও ফজলুল হক। তাঁদের সবার বয়স ২৮ থেকে ৩৫ বছরের মধ্যে। বাড়ি উপজেলার বিভিন্ন এলাকায়। তাঁদের মধ্যে গোলাম কিবরিয়ার বাড়ি ঘটনাস্থল পাটহাটি এলাকায়। তিনি যুবলীগের কর্মী হিসেবে পরিচিত।
এ ছাড়া আটক আয়নাল হক অভিযুক্ত সাধুরপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমের ঘনিষ্ঠ হিসেবেই এলাকায় পরিচিত। ঘটনার পর থেকে ইউপি চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের লোকজন পলাতক।
বকশীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ সোহেল রানা প্রথম আলোকে বলেন, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে ছয়জনকে আটক করা হয়েছে। বাকিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্র জানায়, হামলার আগে গত বুধবার রাতে সাত থেকে আটটি মোটরসাইকেল উপজেলার পাটহাটি মোড়ের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান নেয়। রাত ১০টা ১৭ মিনিটে সাংবাদিক গোলাম রব্বানি মোটরসাইকেলে ওই স্থান অতিক্রম করার সময় ওত পেতে থাকা সন্ত্রাসীরা তাঁর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।
গোলাম রব্বানি গতকাল বেলা আড়াইটার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনি বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের জামালপুর জেলা প্রতিনিধি ছিলেন। একই সঙ্গে একাত্তর টিভির বকশীগঞ্জ উপজেলা সংবাদ সংগ্রাহক হিসেবে কাজ করতেন। অভিযোগ উঠেছে, সংবাদ প্রকাশের জেরে বকশীগঞ্জ উপজেলার সাধুরপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলম লোকজন দিয়ে তাঁকে হত্যা করিয়েছেন। মাহমুদুল সাধুরপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক।
এদিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়নাতদন্ত শেষে গতকাল রাত সাড়ে ১০টার দিকে গোলাম রব্বানির লাশ বকশীগঞ্জে আনা হয়। এ সময় স্বজন ও এলাকাবাসীর কান্নায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে আসে। আজ সকাল ১০টার দিকে বকশীগঞ্জ পৌর শহরের এন এম নূর মোহাম্মদ উচ্চবিদ্যালয় মাঠে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর গ্রামের বাড়ি গোমের চর জিগাতলা মাঠে দ্বিতীয় জানাজার পর তাঁকে দাফন করা হবে।
জানাজার আগে অন্যান্যের মধ্যে জামালপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি হাফিজ রায়হান, জামালপুর জার্নালিস্ট নেটওয়ার্কের সভাপতি জাহাঙ্গীর সেলিম, জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন, শাহীন আলামিনসহ স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও প্রশাসনের লোকজন বক্তব্য দেন। বক্তারা বলেন, সাংবাদিক গোলাম রব্বানিকে পূর্বপরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। হত্যাকাণ্ডের আগে হামলাকারীরা ওই এলাকায় অবস্থান নেন। সবাই ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিলেন। হামলার সময় সবাই ঝাঁপিয়ে পড়েন। এ ঘটনায় সবাইকে আইনের আওতায় আনতে হবে। এ সময় হত্যাকাণ্ডের বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন সাংবাদিকনেতারা।
ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও গোলাম রব্বানির সহকর্মী আল মুজাহিদ সাংবাদিকদের বলেন, সাধুরপাড়া ইউপির চেয়ারম্যান মাহমুদুল আলমের অপকর্ম নিয়ে গোলাম রব্বানিসহ তাঁরা প্রতিবেদন করেছিলেন। এর পর থেকেই তিনি রব্বানির ওপর ক্ষুব্ধ হন। তাঁদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাও করেছিলেন। আদালতে সেই মামলা খারিজ হয়ে যায়। এ নিয়ে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেওয়া হয়েছিল। এর দুই থেকে তিন ঘণ্টা পর রাতে গোলাম রব্বানির ওপর হামলা হয়। হামলাকারীরা সবাই চেয়ারম্যানের নিজস্ব লোকজন।