মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা (মাউশি) অধিদপ্তরের রাজশাহী আঞ্চলিক কার্যালয়ে কোনো পরিচালক না থাকায় কলেজশিক্ষকদের এমপিওর (মান্থলি পেমেন্ট অর্ডার) আবেদনের প্রক্রিয়া স্থগিত রয়েছে। ভুক্তভোগী শিক্ষকেরা গতকাল সোমবার মাউশির রাজশাহী কার্যালয়ে পরিচালক নিয়োগ ও স্থগিত এমপিও ছাড় করার দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন।
আন্দোলনের মুখে রাজশাহীর মাউশি কার্যালয়ের পরিচালক বদলি নিয়ে আগের কর্মস্থলে চলে যান। ২৯ অক্টোবর তাঁর বদলি আদেশ আসে। সেই দিন থেকেই তাঁর ফোল্ডারে আর কোনো কাজ হয়নি। ৫ নভেম্বর তিনি রিলিজ নিয়ে চলে যান। এই এমপিওতে আবেদনের শেষ দিন আজ মঙ্গলবার।
গতকাল সকাল থেকে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা ভবনের অবস্থান কর্মসূচি লেখা একটি সাইনবোর্ড টাঙিয়ে এমপিওর জন্য আবেদন করা বিভিন্ন কলেজের শিক্ষকেরা অবস্থান নেন। সাইনবোর্ডে আরও লেখা ছিল ‘সমাধান চাই, সমাধান চাই’, ‘১২ নভেম্বরের মধ্যে সমাধান চাই’। কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া শিক্ষকেরা বলেন, প্রতি দুই মাস পর এমপিওর জন্য তাঁরা আবেদন করার সুযোগ পান। এই আবেদনগুলো চূড়ান্ত ও বাতিল করার অগ্রাধিকার একমাত্র মাউশির আঞ্চলিক কার্যালয়ের পরিচালকের রয়েছে। অন্যান্য বিভাগে এ আবেদন কার্যক্রম যথারীতি চলমান রয়েছে কিন্তু বেশ কিছুদিন আগে রাজশাহী আঞ্চলিক শিক্ষা অফিসের পরিচালককে অন্য জায়গায় স্থানান্তর করায় প্রায় ১৫-২০ হাজার আবেদনপত্র স্থগিত হয়ে গেছে। তাই অতিদ্রুত এখানে একজন নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালক প্রয়োজন।
নাটোরের গোপালপুর মহিলা কলেজের শিক্ষক আলমগীর হোসেন বলেন, এই কার্যালয়ে কোনো পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। পরিচালক ছাড়া শিক্ষকদের একটি ফাইল কেউ অনুমোদন বা বাতিল করার ক্ষমতা রাখেন না। তাই সচিব ও মহাপরিচালকের কাছে আবেদন, কালকের (আজ) মধ্যে পরিচালক নিয়োগ দেবেন অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো ব্যক্তিকে এই সমস্যা সমাধানের জন্য নির্দেশ দেবেন।
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার হাটগাঙ্গপড়া ডিগ্রি কলেজের শিক্ষক নূরুল হুদা বলেন, তাঁরা খোঁজ নিয়ে জেনেছেন বাংলাদেশের অন্যান্য অঞ্চলে এই এমপিওর ফাইলের কাজ হয়ে গেছে। শুধু পরিচালক না থাকার কারণে রাজশাহীর কাজ পড়ে রয়েছে। কলেজ নীতিমালার নিয়ম অনুযায়ী, প্রতি দুই মাস অন্তর এমপিও দেওয়া হয়। এবার না হলে তাঁদের আরও দুই মাস অপেক্ষা করতে হবে। তারপর আবার কী হবে, তা–ও তাঁদের অজানা। শুধু পরিচালক না থাকার কারণে প্রায় আড়াই হাজারের মতো ফাইল এখানে ঝুলে আছে।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর একদল তরুণ মাউশির আঞ্চলিক পরিচালকের অফিসে যান। তাঁরা ‘স্থানীয়’ পরিচয় দিয়ে পরিচালক বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীকে কার্যালয় থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য চাপ দেন। পরে তিনি কার্যালয় থেকে বের হয়ে যান। এরপর ওই তরুণেরা কার্যালয়ে তালা দেন।
২৯ অক্টোবর বিশ্বজিৎ ব্যানার্জীকে বদলির আদেশ দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে বিশ্বজিৎ ব্যানার্জী প্রথম আলোকে বলেন, তাঁর কার্যালয়ে তালা দেওয়ার পর ৩ অক্টোবর রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনারের মাধ্যমে তিনি তাঁর আগের পদে (রাজশাহী সরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজের উপাধ্যক্ষ) ফিরে যাওয়ার জন্য আবেদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে আগের পদে ফিরে যাওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে। কারও অভিযোগের কারণে তাঁকে বদলি করা হয়নি। তাঁর বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও সত্য নয়।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক আলমাস উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, পরিচালক বদলি হওয়ার পর তাঁর আইডি ও পাসওয়ার্ড তাঁকে দেওয়া হয়নি। ফলে নতুন পরিচালক না আসা পর্যন্ত তিনি পরিচালকের কাজটি ইচ্ছা থাকলেও করে দিতে পারছেন না।