প্রচারণার শেষ দিনে ভোটারদের সঙ্গে হাত মেলান ও লিফলেট বিতরণ করেন মেয়র প্রার্থী নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম। গতকাল কুমিল্লার নবাববাড়ি চৌমুহনী এলাকায়
প্রচারণার শেষ দিনে ভোটারদের সঙ্গে হাত মেলান ও লিফলেট বিতরণ করেন মেয়র প্রার্থী নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম। গতকাল কুমিল্লার নবাববাড়ি চৌমুহনী এলাকায়

লড়াইয়ে সাবেক দুই ছাত্রনেতা 

উপনির্বাচনে মেয়র পদে চারজন প্রার্থী হয়েছেন। সাবেক ছাত্রনেতা তানিম ও নিজাম ছাড়া অপর দুই প্রার্থী হলেন মনিরুল হক ও তাহসীন বাহার।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে উপনির্বাচনে সাবেক দুই ছাত্রনেতা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তাঁরা হলেন হাতি প্রতীকের প্রার্থী নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম এবং ঘোড়া প্রতীকের প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন। তাঁরা দুজনই নির্বাচনে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী।

কেবল এই দুই মেয়র প্রার্থীই নির্বাচনী ইশতেহার দিয়েছেন। তাঁরা দুজনই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচিত প্রতিনিধি ছিলেন। দুজনই দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। দুজনই ছাত্রনেতা হিসেবে জনপ্রিয় ছিলেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ভাষ্য, মেয়র পদে উপনির্বাচনে ভোটের মাঠে জয়-পরাজয়ে তাঁরা ‘ফ্যাক্টর’ হবেন।

কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে মেয়র পদে চারজন প্রার্থী হয়েছেন। তানিম ও নিজাম ছাড়া অপর দুজন হলেন টেবিল ঘড়ি প্রতীকের প্রার্থী মো. মনিরুল হক এবং বাস প্রতীকের প্রার্থী তাহসীন বাহার। ৯ মার্চ সকাল আটটা থেকে বিকেল চারটা পর্যন্ত ইভিএমের মাধ্যমে এই উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ হবে।

হাতি প্রতীকের প্রার্থী নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম ১৯৯৬-১৯৯৭ সালে ছাত্রলীগের প্যানেল থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের নির্বাচিত সহসভাপতি (ভিপি) ছিলেন। এর আগে ১৯৯২-৯৩ সালে ছিলেন সাধারণ সম্পাদক (জিএস)। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি ও কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য ছিলেন। ১৯৯৫ সালে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের দলনেতা হিসেবে সেরা বিতার্কিক হন। ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তানিম মেয়র পদে নির্বাচন করেন। ওই নির্বাচনে তিনি ৮ হাজার ৫১৪ ভোট পেয়েছিলেন। তানিম বর্তমানে আওয়ামী লীগের মহানগরের উপদেষ্টা।

আমি কুমিল্লাকে ভয়ের শহর থেকে ভালোবাসার শহরে পরিণত করব। নির্বাচন কমিশনের কাছে সুন্দর ভোটের পরিবেশ চাই।
নূর উর রহমান মাহমুদ, হাতি প্রতীকের মেয়র প্রার্থী

গতকাল বৃহস্পতিবার প্রচারণার শেষ দিনে তানিম নগরের নবাববাড়ি চৌমুহনী এলাকা থেকে প্রচারণা শুরু করেন। এ সময় তাঁর সঙ্গে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। তানিম নিজে ভোটারদের সঙ্গে হাত মেলান ও লিফলেট বিতরণ করেন।

১৩ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার গ্যারেজ ব্যবসায়ী মো. জুয়েল (২৬) বলেন, ‘তানিম ভাইয়ের নীতি ভালো। আমি বিএনপি চিনি না, আওয়ামী লীগ চিনি না। ৯ তারিখ হাতি মার্কায় ভোট দেব।’

৬ মার্চ বিকেলে তানিম নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেন। এতে তিনি ১০০ বছরের উপযোগী করে কুমিল্লা নগরকে ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনার কথাই বলেন। এতে তিনি সমস্যা সমাধানে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার কথা উল্লেখ করেন। কুমিল্লাকে সবুজে ঘেরা মায়াময় নগরী করার কথা বলেন।

নূর উর রহমান মাহমুদ তানিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ছাত্রনেতা থেকে পথ পাড়ি দিচ্ছি। ৪০ বছরের রাজনৈতিক জীবনে মানুষের জন্য কাজ করেছি। আশা করি, নগরবাসী আমাকে, সেই তানিমকে হাতি মার্কায় ভোট দেবেন। আমি কুমিল্লাকে ভয়ের শহর থেকে ভালোবাসার শহরে পরিণত করব। নির্বাচন কমিশনের কাছে সুন্দর ভোটের পরিবেশ চাই।’

কুমিল্লা নগরের মনোহরপুর এলাকায় নেতা-কর্মীদের নিয়ে প্রচারণা চালান মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন। গতকাল সকালে

আরেক মেয়র প্রার্থী মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন ১৯৯৮ সালে ছাত্রদল ও শিবিরের যৌথ প্যানেল থেকে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রসংসদের সহসমাজকল্যাণ সম্পাদক ছিলেন। তিনি কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক ও ধর্মবিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। ছিলেন কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি, আদর্শ সদর উপজেলা ছাত্রদলের সাংগঠনিক সম্পাদক। ২০২২ সালের ১৫ জুন কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তিনি ২৯ হাজার ভোট পেয়েছিলেন। নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় তাঁকে কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি ও কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সহসাংগঠনিক সম্পাদক পদ থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়।

নিজাম গতকাল সকাল ১০টায় নগরের বাদুরতলা এলাকা থেকে প্রচারণা শুরু করেন। মনোহরপুর এলাকায় মিছিল করতে করতে তিনি ভোট চান ব্যবসায়ীদের কাছে। তখন তাঁকে ঘিরে ছিলেন অন্তত ২০০ মানুষ।

সিটি করপোরেশন নির্বাচনে নিজাম পোস্টার, ব্যানার ও মাইকিংয়ে সবার চেয়ে এগিয়ে। সবার আগে ৩ মার্চ ১২ দফা নির্বাচনী ইশতেহার দেন তিনি। এতে তিনি নিরাপদ সম্প্রীতির বাসযোগ্য কুমিল্লা উপহার দেওয়ায় কথা বলেন। বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের পদধারী অনেক নেতা প্রকাশ্যে ও ভেতরে-ভেতরে তাঁর পক্ষে প্রচারণায় আছেন।

ছাত্রনেতারা মেয়র হলে নগরের উন্নয়ন হবে। আমি নিরাপদ সম্প্রীতির বাসযোগ্য কুমিল্লা গড়তে চাই।
মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন, ঘোড়া প্রতীকের মেয়র প্রার্থী

নগরের ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বড়পুকুরপাড়ের ভোটার আনোয়ার হোসেন (৭৫) বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে আমি কায়সারের (নিজাম) দুলাভাইয়ের (কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমিন উর রশিদ ইয়াছিন) ফ্যাক্টরিতে কাজ করেছি। তাই ঘোড়া মার্কায় ভোট দেব।’

নিজাম উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমার দীর্ঘ রাজনৈতিক পথকে মূল্যায়ন করে ভোটাররা ভোট দেবেন। ছাত্রনেতারা মেয়র হলে নগরের উন্নয়ন হবে। সব ক্ষেত্রে পরিবর্তন আসবে। আমি নিরাপদ সম্প্রীতির বাসযোগ্য কুমিল্লা গড়তে চাই।’