মানসিক ভারসাম্যহীন এক মায়ের যমজ দুই সন্তানের বাবার পরিচয় পাওয়া পাচ্ছে না। ১১ দিন ধরে যশোর জেনারেল হাসপাতালে মা ও সন্তান চিকিৎসাধীন। তাঁরা সুস্থ আছেন। কিন্তু তাঁদের দায়িত্ব স্বজনদের কেউ নিতে রাজি হননি। এতে ওই মা ও তাঁর দুই সন্তানকে নিয়ে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মানসিক ভারসাম্যহীন ওই মা নার্সদের সঙ্গেও খারাপ ব্যবহার করছেন। আজ বৃহস্পতিবার হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, দুই নবজাতকের দেখভালের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুজন নারী আনসার সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু গতকাল বুধবার রাত আটটার দিকে নবজাতক দুটিকে হাসপাতালের নার্সদের কাছে রেখে চলে যান। রাত থেকে আজ দুপুর পর্যন্ত আনসার সদস্যদের কেউ হাসপাতালে যাননি। তবে গণমাধ্যমকর্মীরা যোগাযোগের পর দুপুরের পর আবার দুই আনসার সদস্যকে দায়িত্ব দিয়ে হাসপাতালে পাঠানো হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, ৩ সেপ্টেম্বর যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার নতুনগ্রামের জামিরুল ইসলামের একটি পরিত্যক্ত ঘরে মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী যমজ সন্তান প্রসব করেন। পরে গৃহকর্তা জামিরুল ওই নারীকে বাঘারপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন। ওই দিন সন্ধ্যায় তাঁদের যশোর জেনারেল হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। এর পর থেকে মা ও দুই নবজাতক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালে ভর্তির সময় ওই নারীর পরিচয় অজ্ঞাত থাকলেও পরবর্তী সময়ে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) যশোর ওই নারীর পরিচয় শনাক্ত করে। ওই নারীর বাড়ি খুলনার তেরখাদা উপজেলায়। পিবিআই কর্মকর্তারা ওই নারীর মা ও ভাইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করলেও তাঁরা তাঁদের দায়িত্ব রাজি হননি। এ অবস্থায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় জেলা প্রতিবন্ধীবিষয়ক কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ওই মা ও তাঁর দুই সন্তানকে তত্ত্বাবধান করে। তবে যমজ সন্তানদের সার্বক্ষণিক দেখভালের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুজন নারী আনসার সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।
গতকাল বুধবার রাত আটটা পর্যন্ত দায়িত্ব পালন শেষ করে আনসার সদস্য সাহারা খাতুন ও রাখী আক্তার শিশু দুটিকে নার্সদের হাতে তুলে দিয়ে চলে যান। এরপর আর কোনো আনসার সদস্য সেখানে যাননি। এ ঘটনার পর রাতেই হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বিষয়টি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবরাউল হাছান মজুমদারকে জানান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে যশোর জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক হারুন-অর রশিদ বলেন, ‘মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারী নার্সদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করছেন। বিছানায় মলত্যাগ করছেন। তাঁর কাছে কেউ যেতে পারছে না। ওয়ার্ডের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। বিষয়টি দ্রুত সমাধান হওয়া জরুরি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা সমাজসেবা অধিদপ্তরের উপপরিচালক অসীত কুমার সাহা বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের আদেশের ভিত্তিতে নবজাতক দুটিকে সমাজসেবা অধিদপ্তর খুলনার ‘ছোটমণি নিবাস’–এ পাঠানোর সুযোগ রয়েছে। তবে বিষয়টি পুলিশের মাধ্যমে আগে আদালতের নজরে আনতে হবে।’ দু–এক দিনের মধ্যে বিষয়টি আদালতে উত্থাপন করা হবে বলেও তিনি জানান।
পিবিআই যশোরের পুলিশ সুপার রেশমা শারমিন বলেন, ‘মানসিক ভারসাম্যহীন প্রসূতি মা ও নবজাতকের দায়িত্ব নিতে তাঁর পরিবারের কেউ রাজি হয়নি। ১১ মাস আগে ওই নারী বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়। এর আগে দুইবার বিয়ে হয় ওই নারীর। ইতিমধ্যে আগের দুই স্বামীর সঙ্গে ওই নারীর তালাক হয়েছে। সেই ঘরে আগের দুটো সন্তানও রয়েছে। নতুন জন্ম নেওয়া দুই সন্তানের পিতৃত্ব কেউ স্বীকার করছে না।’
যশোর কোতোয়ালি থানার পরিদর্শক (তদন্ত) শফিউল আলম চৌধুরী বলেন, ভারসাম্যহীন ওই নারী ও তাঁর দুই যমজ সন্তানের বিষয়টি আজ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে উপস্থাপন করা হয়। আদালতের বিচারক জেলা প্রবেশন কর্মকর্তা ও সমাজ সেবা অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালককে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন।