সিরাজগঞ্জের বেলকুচি উপজেলায় যমুনা নদী তীরের গ্রাম রাজাপুর। একসময় এই গ্রামের ৯০ ভাগ মানুষের পেশা ছিল দুধ থেকে দই, ঘি, ঘোল তৈরি করা। এই গ্রামের ঘোষদের তৈরি দইয়ের সুনাম ছিল দেশ-বিদেশে। কালের বিবর্তনে গ্রামের অনেকে পেশা ছেড়েছেন, দেশ ছেড়েছেন। এই কাজে যুক্ত মানুষের সংখ্যা কমেছে। তবে এখনো তাদের দইয়ের কদর সবার কাছে। সিরাজগঞ্জসহ আশপাশের এলাকায় কোনো অনুষ্ঠান মানেই ‘রাজাপুরের দই’।
দুধের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে লাকড়ির চুলার আগুনে দীর্ঘ সময় জাল করে মাটির হাঁড়িতে এই দই বসানো হয়। চুলা থেকে কিছু পরিমাণ আগুনসহ কাঠের কয়লা মাঝখানে রেখে চারদিকে দইয়ের পাত্রগুলো গোল করে সাজিয়ে রাতভর বাঁশের তৈরি ঢাকনা দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। সকালে সেই জ্বাল করা দুধ জমাট বেঁধে তৈরি হয় সুস্বাদু মিষ্টি দই। বর্তমানে এখানে প্রতি মণ দই ৯ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করা হয়। দুই কেজি ওজনের দইয়ের পাত্র বিক্রি করা হয় ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকায়।
রাজাপুর গ্রামের ফটিক ঘোষ বলেন, একসময় এই গ্রামের শতাধিক পরিবার দই, ঘোল ও ঘি তৈরির সঙ্গে যুক্ত ছিল। এসবের ব্যবসাও অনেক ভালো ছিল। এখন গ্রামের ১৫ থেকে ২০টি পরিবার অনেক কষ্টে এই পেশা ধরে রেখেছেন।
বেলকুচি উপজেলার তামাই গ্রামের তাঁত ব্যবসায়ী আবু হেনা বলেন, রাজাপুরের দইয়ের স্বাদ-গন্ধই আলাদা। এখানকার বাড়িতে কোনো আচার-অনুষ্ঠান মানেই রাজাপুরের দই। বড় অনুষ্ঠান থাকলে আগে থেকেই দইয়ের বায়না করে রাখা হয়।
দই বানানোর সঙ্গে যুক্ত স্বাধীন ঘোষ নামের একজন বলেন, ‘কোনো মার্কেটে বা শহরে আমাদের কোনো বিক্রয় কেন্দ্র নেই। আমরা দই তৈরি করে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল শহরের নামীদামি কিছু দোকানে সরবরাহ করি। তারা সেখানে তাদের নামে দইগুলো বেশি দামে বিক্রি করে। আমরা ন্যায্যমূল্য পাই না।’
হুটু ঘোষ নামের আরেকজন বলেন, ‘বর্তমান বাজারে দুধ ও চিনির দাম অনেক বেশি। সে তুলনায় আমরা দই, ঘোলের দাম বেশি চাইলে ক্রেতারা সহজে দিতে চান না। আমরা এখনো আমাদের উৎপাদিত দইয়ের গুণ-মান ধরে রেখেছি। গ্রামের অনুষ্ঠানে আমরা শহরের অনেক নামীদামি দোকানের চেয়ে কম টাকায় ভালো মানের দই দিই। তাই চাহিদাও ভালো।’