নাটোরের গুরুদাসপুরে সর্বহারা পরিচয়ে পাঁচ লাখ টাকা করে চাঁদা দাবি করে তিন ব্যক্তির বাড়িতে চিঠি পাঠিয়েছে একটি চক্র। চাঁদার টাকা না পেলে তাঁদের ছেলেদের অপহরণের পর হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে চিঠি পাওয়া পরিবারগুলো।
ভুক্তভোগীদের মধ্যে রয়েছেন নাজিরপুর ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক উত্তম কুমার কণ্ডু, উপজেলার মকিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাবুল সরকার ও ব্যবসায়ী সোহেল আনোয়ার। তাঁরা সবাই গুরুদাসপুর পৌর শহরের রোজী মোজাম্মেল মহিলা কলেজ এলাকার বাসিন্দা।
আজ বুধবার গুরুদাসপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. গোলাম সারোয়ার হোসেন তথ্যটি নিশ্চিত প্রথম আলোকে বলেন, এ ঘটনায় উত্তম কুমার কণ্ডু ও ব্যবসায়ী সোহেল আনোয়ারের পক্ষে থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। তবে সোহেল আনোয়ারের অভিযোগটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) হিসেবে গ্রহণ করে তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে কিছু তথ্য মিলেছে।
ভুক্তভোগী ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাড়ির গেটের ভেতরে খামভর্তি চিঠি পান তাঁরা। খাম খুলে চাঁদা দাবি ও তাঁদের সন্তানদের অপহরণের হুমকির বিষয়টি জানতে পারেন। সর্বহারা পরিচয়ে পাঠানো চিঠিতে লেখা হয়, ‘আশা করি মহান আল্লাহর দোয়ায় ভালোই আছেন। দোতলা বাড়ি, ছেলে, বউ সব মিলিয়ে ভালো। আমরা ভালো নাই। বছরের বেশির ভাগ সময় জেলে থাকি। আর যে বাকি সময় বাইরে থাকি, সেটুকু সময় গরিব–দুঃখীদের সাহায্য করি। আপনাকে পাঁচ দিন সময় দেওয়া হলো। এই পাঁচ দিনের মধ্যে পাঁচ লাখ টাকার ব্যবস্থা করে রাখবেন। তা ছাড়া আপনার ছেলেকে জবাই করে মাথা পাঠিয়ে দেব আপনার বাসায়। পুলিশ কিংবা আইনের যেকোনো বাহিনী এক বছরের মধ্যে আমাদের ধরতে পারবে না। তত দিনে আপনার ছেলে গলা কাটা জবাই করা লাশ হয়ে যাবে। টাকা কোথায় কীভাবে দেবেন, আমরা জানিয়ে দেব। (সর্বহারা)।’
উত্তম কুমার কণ্ডু জানান, সর্বহারা পরিচয়ে পাঠানো চিঠি পাওয়ার পর তাঁর পরিবারে ভীতি ও আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। শারদীয় দুর্গাপূজার আনন্দ ম্লান হতে বসেছে। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত করে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান তিনি।
ব্যবসায়ী সোহেল আনোয়ার বলেন, তিনি চিঠি পাওয়ার পরপরই থানা-পুলিশকে অবগত করেছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে তিনি এর সুষ্ঠু সমাধান চেয়েছেন। প্রধান শিক্ষক বাবুল সরকার বলেন, তিনি ও তাঁর পরিবার বেশ আতঙ্কিত। স্বল্প বেতনে চাকরি করে সংসার চালানোই কঠিন। এমন পরিস্থিতিতে সর্বহারা পরিচয়ে পাঁচ লাখ টাকা চাঁদা দাবির ঘটনাটি ভাবিয়ে তুলছে তাঁর পরিবারকে।
ওসি গোলাম সারোয়ার হোসেন বলেন, আসলে সর্বহারা বলতে কিছু নেই। আতঙ্ক ছড়ানোর জন্য মাদকাসক্ত কেউ এ ধরনের চিঠি দিয়ে থাকতে পারে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে দেখা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এ চক্রকে শনাক্ত করে আটক করা হবে।