সুনামগঞ্জে চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ কারণে জেলা শহরে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্বম্ভরপুর, তাহিরপুর, ছাতক, দোয়ারাবাজার উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। প্লাবিত হয়েছে নিম্নাঞ্চল ও অনেক রাস্তাঘাট।
প্রবল বর্ষণের সঙ্গে মুহুর্মুহু বজ্রপাতে গতকাল রোববার রাত আতঙ্কে কেটেছে শহরের মানুষের। বৃষ্টির কারণে আজ সোমবার সকালে অনেক ঈদগাহ মাঠে ঈদের জামাত আদায় করা সম্ভব হয়নি। টানা বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পাহাড়ি ঢলে নদী ও হাওরের পানি বাড়া অব্যাহত আছে।
সুনামগঞ্জের পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল রোববার সকাল ৯টা থেকে আজ সকাল ৯টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৩৬৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে, যা চলতি মৌসুমে সর্বোচ্চ। সুনামগঞ্জের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতেও বেশি বৃষ্টি হচ্ছে। উজান থেকে ঢল নামলেই মূলত সুনামগঞ্জে নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ে। বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল কমলে পরিস্থিতির উন্নতি হবে।
আজ সকাল ৯টায় সুনামগঞ্জ শহরের ষোলঘর এলাকায় সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ২০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে বলে পাউবো সূত্রে জানা যায়। শহরের কালীবাড়ি, উকিলপাড়া, তেঘরিয়া, বড়পাড়া, মল্লিকপুর, ওয়েজখালী এলাকায় জলাবদ্ধতায় মানুষ ভোগান্তিতে পড়েছেন। সুরমা নদীর পানি উপচে লোকালয় প্লাবিত হয়েছে।
তেঘরিয়া এলাকার বাসিন্দা সৈয়দ তারিক হাসান বলেন, গত রাত বড় ভয়ে কেটেছে। ২০২২ সালের ১৭ জুন সুনামগঞ্জে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। গত রাতের বৃষ্টি ও বজ্রপাত আবার সেই দিনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছে। বাড়ির আঙিনায় পানি চলে এসেছে।
ঢলের পানিতে তাহিরপুর-সুনামগঞ্জ সড়কের আনোয়ারপুর ও বালিজুরি, বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার শক্তিয়ার খলা এলাকা প্লাবিত হওয়ায় সড়ক সরাসরি যান চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। ছাতক উপজেলার পিয়াইন ও চেলা নদীর পানি বাড়ছে। সীমান্তবর্তী ইসলামপুর, কালারুকা, নোয়ারাই, চরমহল্লা ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। ইসলামপুর ইউনিয়নের ধনীটিলা-ছনবাড়ী বাজার সড়কের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে ঢলের পানি। পানির প্রবল স্রোতে ভেঙে গেছে সড়কের কয়েকটি অংশ। নিজগাঁপ রতনপুর, ছনবাড়ী, নোয়কুট, রহমতপুর, বনগাঁও, দারোগাখালী, বৈশাকান্দি, বাহাদুরপুর গ্রামের রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ধানের বীজতলা ও সবজিখেত।
গতকাল রোববার ইসলামপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন করেছেন ছাতক উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গোলাম মোস্তাফা। ছাতক শহরের বাসিন্দা বিজয় রায় বলেন, পানি বৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে ছাতক-গোবিন্দগঞ্জ, ছাতক-জাউয়া, ছাতক-দোয়ারাবাজার ও ছাতক-সুনামগঞ্জ সড়কের বিভিন্ন অংশ প্লাবিত হতে পারে।
ইউএনও গোলাম মোস্তাফা বলেন, উপজেলার সব ইউনিয়নেই পানি আছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি রয়েছে। আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তবে এখনো আশ্রয়কেন্দ্রে যাওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি।
পাহাড়ি ঢলে দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের খাসিয়ামারা নদীতীরের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়া বক্তারপুর, চৌকিরঘাট, ইদ্রিসপুর, ঝিরারগাঁও, লক্ষ্মীপুর, নোয়াপাড়া, রসরাই, সুলতানপুর, এরুয়াখাই, মাঠগাঁও, রণভূমি গ্রামে এখনো পানি আছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের মধ্যে শুকনা খাবার বিতরণ করেছেন।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, যাঁদের ঘরে ঢলের পানি ঢুকেছে, তাঁরা চরম দুর্ভোগে আছেন। অনেকের ঘরের আসবাব, কাঁথা, কাপড়চোপড়, ধানচাল ভিজে নষ্ট হয়ে গেছে।
এদিকে বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢল নামা অব্যাহত থাকায় পানি বাড়ছে সুনামগঞ্জের জাদুকাটা, পাটনাই, রক্তি, বৌলাই, কুশিয়ারা, নলজুর, চেলা, চলতি খাসিয়ামারাসহ সব নদীতে। সদর উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের বাসিন্দা ইসমাইল হোসেন বলেন, গ্রাম থেকে শহরে আসার সড়কটি পানিতে তলিয়ে গেছে। এখন নৌকায় আসা-যাওয়া করতে হচ্ছে।
আগামী ৭২ ঘণ্টা সুনামগঞ্জে বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন।