‘মাছ-মাংস কেনা সম্ভব না, ডিম আর সবজি কিনে ঘরে যাচ্ছি’

সম্প্রতি গ্যাস ও বিদ্যুতের দামবৃদ্ধির প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারেও। এতে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। আজ শুক্রবার সকালে ইটেরপুল মিলগেট বাজারে
ছবি: প্রথম আলো

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন আরিফুর রহমান। সাধারণত শুক্রবারেই তিনি পুরো সপ্তাহের জন্য বাজারসদাই করেন। আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় আরিফুর রহমানের সঙ্গে দেখা হয় মাদারীপুর শহরের ইটেরপুল মিলগেট বাজারে। হাতে বাজারের ব্যাগ। চোখে–মুখে একধরনের বিরক্তির ছাপ। জানালেন, বাজারের সব পণ্যের দাম ঊর্ধ্বমুখী। এ জন্য তিনি বাজার খরচের হিসাব মেলাতে হিমশিম খাচ্ছেন।

আরিফুর বললেন, ‘বাজারে এসেছিলাম মাছ অথবা মাংস কিনতে। কিন্তু ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম কেজি ৭০ টাকা বেড়ে গেছে। গরু বা খাসির মাংস তো কিনে খাওয়ার চিন্তাও করি না। মাছের বাজারও চড়া। চাষের মাছের কেজিও সর্বনিম্ন ২০০ টাকা। আমার যা আয়, তা দিয়ে মাছ-মাংস কেনা সম্ভব না। বাজার ঘুরে দুই হালি ডিম আর ২০০ টাকার সবজি কিনে ঘরে যাচ্ছি।’

সম্প্রতি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে সরকার। এর প্রভাব পড়তে শুরু করেছে নিত্যপণ্যের বাজারেও। এতে মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছেন। আজ সকাল ৯টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত মাদারীপুর শহরের পুরান বাজার, ইটেরপুল, চরমুগরিয়া ও কুলপদ্বী এলাকার চারটি পাইকারি ও খুচরা বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বাজারে শীতকালীন শাকসবজির দাম কিছুটা নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মাছ-মাংসের দাম কেজিতে ৭০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। তবে বাজারে কাঁচা মরিচের দামও আকাশছোঁয়া। এক সপ্তাহ আগেও প্রতি কেজি মরিচের দাম ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা।

আজ সকালে সেই কাঁচা মরিচের ১১০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এক সপ্তাহের ব্যবধানে নতুন আলু, বেগুন, পেঁয়াজ, রসুন, আদা ও ডালের দামও কেজিতে ৫ টাকা থেকে ২০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে।
ইটেরপুল কাঁচাবাজারের খুচরা বিক্রেতা আবুল বাসার প্রথম আলোকে বলেন, ‘কাঁচা মরিচের দাম প্রতিদিন বাড়তাছে। তিন দিন আগেও কাঁচা মরিচ কিনছি ৮০ টাকায়। সেই মরিচ এখন ১১০ টাকা।’

এই বাজারের মাছবিক্রেতা মোহাম্মদ জিয়া। মাছের দাম বেড়ে যাওয়ায় ক্রেতা কমে গেছে বলে দাবি করেন তিনি। জিয়া প্রথম আলোকে বলেন, ‘মাছের দাম অনেক বেশি। গরিব মানুষ মাছ কিনতে আসে না। পাঙাশ মাছ আমরা কিনে আনতাম ১৩০ টাকা কেজিতে। সেই পাঙাশ এখন নিতে হচ্ছে ১৮০ টাকায়, বেচতে হয় ২০০ টাকায়। রুই–কাতলা মাছ ১৫ দিন আগেও ২৫০ টাকা কেজিতে বেচতাম। এখন আমরাই ওই মাছ কিনতেছি সাড়ে ৩০০ টাকা কেজি। আবার বেচতে হয় ১০ থেকে ২০ টাকা লাভে। সব ধরনের মাছের এমন দাম বেশি। আমরাও ভালো নাই, কাস্টমারও ভালো নাই।’

জেলার সবচেয়ে বড় বাজার বসে পুরানবাজারে। সাধারণত শুক্রবার এই বাজারে ক্রেতাদের চাপ বাড়ে। চাহিদা বেশি থাকায় বাজারে পণ্যের দামও কিছুটা বাড়তি থাকে। ক্রেতা আল শাহরিয়াত করিম প্রথম আলোকে বলেন, ‘সামনে রোজা। তার আগেই তো বাজারের সব পণ্যের দাম দ্বিগুণ। কোনো জিনিস নাই, যেটার দাম বাড়ে নাই। আগে চিনি কিনতাম এক কেজি করে। এখন কিনতে হয় এক পোয়া। মাস শেষে বাজার করার টাকা থাকে না। ধারদেনা করে চলতে হচ্ছে।’

মাদারীপুরে গেল দুই সপ্তাহে মাছ-মাংসের দাম কেজিতে ৭০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে

পুরান বাজারের ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, ১৫ দিন আগেও প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম ছিল ১৪০ টাকা। এখন সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৯০ টাকা। পাকিস্তানি কক মুরগির কেজি ২৩০ টাকা থেকে হয়েছে ২৬০ টাকা। সোনালি মুরগির দামও কেজিতে ৩০ টাকা বেড়ে ২৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সপ্তাহ দুয়েক আগে খাসির মাংসের দাম ছিল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকার মধ্যে। বর্তমানে খাসির মাংস ১১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এদিকে গরুর মাংসের দাম কেজিতে ৫০ টাকা বেড়ে হয়েছে ৭০০ টাকা।

কাঁচা শাকসবজির মধ্যে ফুলকপি, বাঁধাকপি, শসা, বেগুন ও পেঁয়াজের দাম গত দুই সপ্তাহে কেজিতে ৫ টাকা থেকে ১০টা করে বেড়েছে।

মাদারীপুর শহরের পুরান বাজারের পাইকারি ব্যবসায়ী মিজানুর রহমান বলেন, পণ্যের আমদানি কম, তাই সারা দেশে দাম বাড়তি। আগে থেকে অনেক বেশি দামে কিনে আনতে হয়। সবকিছুর ব্যায় বেড়ে গেছে। তাই কাঁচা পণ্যের দাম বাড়াটা স্বাভাবিক।

জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা বাবুল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন,‘মাছ-মাংসের দাম বেড়েছে, এটা ঠিক। এর কারণ হলো মৎস্য ও পশুর খাদ্যের আমদানি কমেছে। এ জন্য খাদ্যের দাম বাড়তি। মাছ-মাংসের বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। আমরা বাজার নিয়ন্ত্রণে নিয়মিত মনিটরিং করছি। তবু কিছু পণ্যের অস্বাভাবিক দাম রয়েছে। প্রতি মাসে বা সপ্তাহে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা গেলে দাম নিয়ন্ত্রণে থাকত। এটা নিয়ে আমরা জেলা প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলে একটা ব্যবস্থা গ্রহণ করব।’