সীতাকুণ্ডে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধারকাজ শুরু, মালিকপক্ষের খোঁজ নেই

সীতাকুণ্ডে বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত সীমা অক্সিজেন লিমিটেড কারখানায় দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধারকাজ চলছে
ছবি: প্রথম আলো

বিস্ফোরণে বিধ্বস্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন লিমিটেড কারখানায় হতাহত ব্যক্তিদের খোঁজে দ্বিতীয় দিনের মতো উদ্ধারকাজ শুরু করেছেন ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরা। আজ রোববার সকাল সাতটার দিকে ফায়ার সার্ভিসের কুমিরা স্টেশনের সদস্যরা উদ্ধারকাজ শুরু করেন। সকাল নয়টার দিকে ফায়ার সার্ভিস চট্টগ্রামের উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) আবদুল হামিদ মিয়ার নেতৃত্বে আগ্রাবাদ স্টেশনের আরও একটি দল উদ্ধার অভিযান শুরু করে।

আবদুল হামিদ মিয়া প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণে পুরো অক্সিজেন কারখানাটি লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এলোমেলো অবস্থায় সিলিন্ডার পড়ে আছে। তাঁর ধারণা, সিলিন্ডারের নিচে আরও হতাহত ব্যক্তির সন্ধান পাওয়া যেতে পারে। তাই তাঁরা উদ্ধার অভিযান শুরু করেছেন। মালিকপক্ষের কোনো দায়িত্বশীল ব্যক্তির সঙ্গে তাঁদের যোগাযোগ হয়নি। মালিকপক্ষের সহযোগিতা ছাড়া সিলিন্ডারগুলো সরিয়ে নেওয়া যাচ্ছে না। এ কারণে তাঁরা বুঝতে পারছেন না সিলিন্ডারের নিচে লোক আছেন, নাকি নেই। মালিকপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ না হওয়ায় কত শ্রমিক দুর্ঘটনার সময় কাজ করতে ছিলেন, সেই ধারণা তাঁরা পাচ্ছেন না। এখন পর্যন্ত ৬ জনের মৃতদেহ এবং ৩৩ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফায়ার সার্ভিসের কুমিরা স্টেশনের সদস্যরা ওয়ার্কিং প্রোগ্রেস নামের একটি সেফটি ট্যাপ দিয়ে নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরি করেছেন। ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধারকারী সদস্যরা সিলিন্ডার একটা একটা করে সরানোর চেষ্টা করছেন। ভেতরে থাকা সিলিন্ডারগুলো এলোমেলো হয়ে পড়ে আছে। পাঁচটি ট্রাক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে আছে। আশপাশের ভবনগুলো একেবারে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

পুলিশ সদস্যরা কারখানার ফটকে নিরাপত্তার দায়িত্বে কাজ করছেন। উৎসুক জনতা আজকেও ভেতরে ঢোকার জন্য ভিড় করছে।

সীতাকুণ্ড উপজেলার কদমরসুল এলাকায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশে সীমা অক্সিজেন লিমিটেড কারখানায় শিল্পে ব্যবহৃত অক্সিজেন উৎপাদনের সময় গতকাল শনিবার বিকেলে বিকট শব্দে হঠাৎ বিস্ফোরণ হয়। বিস্ফোরণে কেঁপে ওঠে কারখানার আশপাশের অন্তত এক বর্গকিলোমিটার এলাকা। বিচ্ছিন্ন লোহার টুকরা ছড়িয়ে পড়ে চারদিকে। বিস্ফোরণস্থল থেকে প্রায় আধা কিলোমিটার দূর পর্যন্ত উড়ে যায় লোহার পাত।

সীতাকুণ্ডের সীমা অক্সিজেন কারখানায় দিনে মোট তিন পালায় অক্সিজেন উৎপাদন করা হয়। গতকাল বিকেলের পালার অক্সিজেন রিফুয়েলিংয়ের (সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরা) কাজ চলছিল। এ সময় হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। এ কারখানায় তিন পালায় মোট ১৫০ শ্রমিক কাজ করেন। প্রতি পালায় কাজ করেন ৫০ জন। রিফুয়েলিংয়ের কাজে থাকেন চার-পাঁচজন, বাকিরা অন্য কাজ করেন।

সিলিন্ডারে অক্সিজেন ভরার সময় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে মনে করছে ফায়ার সার্ভিস। এটি সীমা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান। গ্রুপটির রড তৈরির কারখানা ও জাহাজভাঙা কারখানার ব্যবসা আছে।

এর আগে গত বছরের ৪ জুন রাতে সীতাকুণ্ডের কেশবপুরে বিএম ডিপোতে আগুন থেকে ভয়াবহ বিস্ফোরণে প্রাণ হারান ৫০ জন। এ কারখানা থেকে সীমা অক্সিজেন কারখানার দূরত্ব পৌনে এক কিলোমিটার।