সেই বাসের চালক বললেন

হোটেল বিরতির পর অনেক বাসেই যাত্রী ওঠে, কখনো এমন হয়নি

কুষ্টিয়া থেকে ছেড়ে আসা বাসে যাত্রীবেশে ওঠে একদল ডাকাত। ডাকাতির পর রাস্তার পাশে বাসটি ফেলে রেখে চলে যায় তারা। টাঙ্গাইলের মধুপুরের রক্তিপাড়ায়
ছবি: সংগৃহীত

কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার প্রাগপুর থেকে ঈগল এক্সপ্রেসের ওই বাস চালাচ্ছিলেন মনিরুল ইসলাম। ১৫ বছর ধরে দূরপাল্লার বাস চালান তিনি। কিন্তু কখনো এমন ঘটনার শিকার হননি বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন। তাঁর বাসে ডাকাতি ও দলবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনার পর থেকে টাঙ্গাইলের মধুপুর থানায় আছেন মনিরুল।

আজ শুক্রবার দুপুরে মুঠোফোনে তাঁর সঙ্গে দুই দফায় ১৫ মিনিট এই প্রতিবেদকের কথা হয়। টাঙ্গাইলের মধুপুর থানায় তাঁর সঙ্গে বাসের সুপারভাইজার রাব্বী হোসেন ও চালকের সহকারী (হেলপার) দুলাল হোসেনও রয়েছেন।

মনিরুল বলছেন, ‘বুধবার থেকেই থানাতে আছি। পুলিশ বলেছে, আসামি ধরা হবে, তাঁদের শনাক্ত করার জন্য রাখা হয়েছে। মাঝেমধ্যে ছবি এনে দেখাচ্ছে। তাঁদের শনাক্ত করছি।’ টিকিট ছাড়া দূরপাল্লার গাড়িতে যাত্রী উঠানো প্রসঙ্গে মনিরুল বললেন, ‘হোটেল বিরতির পর অনেক বাসেই যাত্রী ওঠে। কখনো এমন হয়নি। তবে আমাদের কপাল খারাপ, ব্যাড লাক।’

মনিরুল ইসলামের বাড়ি কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার কৈপাল গ্রামে। ২০০৭ সাল থেকে তিনি দূরপাল্লার বাসের চালক। দীর্ঘদিন ধরে কুষ্টিয়ার এসবি সুপার ডিলাক্সের নন–এসি বাসের চালক ছিলেন। সম্প্রতি ঈগল এক্সপ্রেসের চালক হয়েছেন।

সেদিন রাতের ঘটনা প্রসঙ্গে মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রাগপুর থেকে তিনি বাস চালিয়ে যাচ্ছিলেন। সর্বশেষ নাটোরের কাচিকাটা এলাকা থেকে টিকিটধারী যাত্রী বাসে ওঠেন। সব মিলিয়ে ২৪ জন যাত্রী নিয়ে তিনি নারায়ণগঞ্জ যাচ্ছিলেন। সিরাজগঞ্জে হোটেল বিরতি শেষে বাস ছাড়ার পর ডাকাতেরা তিন দফায় ১০ জন ওঠেন।

মনিরুল ইসলামের ভাষ্য অনুযায়ী, ডাকাতেরা তাঁকে বলেন— মির্জাপুরে নেমে যাবেন। মাঠের ভেতর গিয়ে দুজন গাড়ি সাইড করতে বলেন। কিন্তু তিনি বাস না থামিয়ে স্ট্যান্ডে নামার কথা বলেন। একপর্যায়ে তাঁরা জোর করতে থাকেন। টেনেহিঁচড়ে মারধর করতে থাকেন। সঙ্গে সঙ্গে একজন বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চালাতে থাকেন।

মনিরুল বলেন, বাসের স্টাফসহ পুরুষ যাত্রীদের দ্রুত চোখ, মুখ ও হাত বেঁধে বাসের পেছনের দিকে নিয়ে মাঝখানে বসিয়ে রাখেন। ১৫ মিনিট পর অনুভব করতে পারেন বাস ইউটার্ন করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কিন্তু কখনো থামে না। তাঁকে মারধর করে টাকাসহ মুঠোফোন কেড়ে নেন ডাকাতেরা। তবে তাঁর কাছে থাকা একটি মুঠোফোন ডাকাতেরা নিতে পারেননি।

ঘটনার একপর্যায়ে মনিরুল একজন নারী যাত্রীর মুখ থেকে শুনতে পান, ‘তোদের ঘরে মা–বোন নেই? আল্লাহর দোহাই লাগে আমার সঙ্গে এ কাজ করিস না।’ কিন্তু ডাকাতেরা কিছুই শোনেন না।

রাত ৩টার দিকে ডাকাতেরা বাস থেকে নেমে চলে যান উল্লেখ করে মনিরুল বলেন, ৩টা ৬ মিনিটে তিনি নিজ মুঠোফোন থেকে জরুরি সহযোগিতার জন্য ৯৯৯-এ কল করেন। বাস থেকে যাত্রীদের নামিয়ে পার্শ্ববর্তী একটি মসজিদের সামনে নিয়ে যান। সেখানে এলাকার লোকজন জড়ো হলে কেউ কেউ বাসের স্টাফদের মারধর করার কথা বলেন। এ সময় কৌশলে জীবন বাঁচাতে মনিরুলসহ তিনজন আধা কিলোমিটার দূরে চলে যান।

এ ঘটনায় আজ শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ডাকাতিতে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তবে এই তিনজন নারীকে দলবদ্ধ ধর্ষণে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন বলে জানিয়েছে পুলিশ।