ফটক দিয়ে ভেতরে ঢুকেই দেখা মিলে ঝকঝকে পরিপাটি ক্যাম্পাসের। পরিকল্পনামাফিক গড়ে তোলা প্রশাসনিক ভবন, সবুজ ঘাসে মোড়ানো খেলার মাঠ। মূল সড়ক ধরে সামনে এগোলে বিভিন্ন বিভাগের একাডেমিক ভবন। পাঁচ থেকে সাত মিনিট হাঁটার পর ইনোভেশন ল্যাবের ঠিক উল্টো পাশের বাগানে শালিক আর কাঠবিড়ালির দুষ্টুমি চোখে পড়ে। শালিকের ধাওয়ায় ত্বরিতগতিতে পালিয়ে যাওয়া। কিছুটা সময় পর আবার ফিরে এসে কাঠবিড়ালির এক গাছ থেকে অন্য গাছে লাফালাফির দৃশ্য মন জুড়াবে যে কারও।
একটু সামনে গিয়ে ওপরের দিকে তাকাতেই দেখা মেলে সারিবদ্ধভাবে ঝুলিয়ে রাখা লাল, কমলা, সবুজ, হলুদ, নীল, গোলাপিসহ বাহারি রঙের ছাতা। পাশেই সকলের প্রিয় বনমায়ায় বসার টেবিল বেঞ্চ, দোলনা। সবই আছে আগের মতোই, কিন্তু আজ মঙ্গলবার সবকিছুতে শূন্যতা। সাজানো-গোছানো ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীরা নেই। চারপাশ ঘিরে ধরেছে কেমন সুনসান নীরবতা! এ চিত্র সাভারের আশুলিয়ার বিরুলিয়ায় বেসরকারি ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির।
এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে গত রোববার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসসংলগ্ন চানগাঁও এলাকাবাসীর পাল্টাপাল্টি ধাওয়া, ইটপাটকেল নিক্ষেপ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এতে আহত হন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এর পরিপ্রেক্ষিতে ওই দিন রাতেই নোটিশ দিয়ে ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ ঘোষণা করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এরপর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকাংশ শিক্ষার্থী হল ছেড়ে চলে গেছেন। গুটিকয় শিক্ষার্থী আছেন, যাঁরা আজ মঙ্গলবার বিকেলের মধ্যে হল ছাড়বেন।
আজ সকাল সাড়ে আটটার দিকে বিরুলিয়ায় ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় প্রতিটি এলাকা শিক্ষার্থীশূন্য। নলেজ টাওয়ারের ঠিক সামনের মাঠটিতে ঘাস কেটে সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চলছে। পরিচ্ছন্নতাকর্মীরা প্রতিদিনের মতো সড়কগুলোয় ঝাড়ু দিচ্ছেন। ফুড কোর্ট ফাঁকা। আড্ডায় জমজমাট হয়ে থাকা বনমায়ায় টেবিল-বেঞ্চগুলো ফাঁকা পড়ে আছে। দোলনাগুলোতে আজ কেউ বসে নেই।
ঘণ্টাখানেক পর ব্যাগ হাতে শিক্ষার্থী সীমান্ত রায়কে হাঁটতে দেখা যায়। চলতি পথে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, সবাইকে আজকের মধ্যে হল ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ১৬ নভেম্বর পর্যন্ত ছুটি থাকায় টাঙ্গাইলে নিজের বাড়িতে যাচ্ছেন।
সকাল ১০টার দিকে বনমায়ায় ফারিশতা সিদ্দিকী ও সাবহা বিনতে জাকিরকে বসে থাকতে দেখা যায়। তাঁরা দুজনেই এ বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম, মিডিয়া অ্যান্ড কমিউনিকেশন বিভাগের প্রভাষক। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাস থেকে চলে যাওয়া তাঁদের উভয়ের মনে শূন্যতা তৈরি করেছে।
ফারিশতা সিদ্দিকী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রাণচঞ্চল ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি আমাদের মধ্যে একধরনের শূন্যতা তৈরি করেছে।’
প্রায় প্রতিদিনই শিক্ষার্থীদের নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে উৎসবমুখর পরিবেশে থাকা নলেজ টাওয়ারের স্টুডেন্ট লাউঞ্জে আজ কোনো শিক্ষার্থীর দেখা মেলেনি। পুরো লাউঞ্জ ফাঁকা। পাশেই শিক্ষক লাউঞ্জে ৩-৪ জন শিক্ষককে বসে গল্প করতে দেখা যায়।
শিক্ষার্থীদের খাবারের অন্যতম স্থান ক্যাম্পাসের শেষ দিকের আমাজন এলাকার খাবার দোকানগুলো। বাঁশের ছায়ায় গড়ে ওঠা খাবার দোকানগুলোয় আজ শিক্ষার্থীদের জটলা নেই। স্থানীয় কয়েকজনকে দেখা যায় সেখানে আড্ডা দিতে।
খাবার দোকানের মালিক মো. আসাদ প্রথম আলোকে বলেন, প্রতিদিন সকালে এক থেকে দেড় হাজার টাকার বেচাবিক্রি হয়। আজকে ছাত্ররা নেই, তাই বিক্রিও নেই বললেই চলে।
বনমায়া এলাকার পরিচ্ছন্নতাকর্মী করিম হোসেন বলেন, ‘ভার্সিটিতে খুব সুন্দর পরিবেশ। ছাত্ররা আমাগো বকা তো দূরের কথা, রাগ কইরা কখনো তাকায়ও না। বাইরের গ্যাঞ্জামে এখানে সমস্যা হয়।’