সুনামগঞ্জে গতকাল শনিবার রাত ও আজ রোববার সকালে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। একই সঙ্গে নেমেছে উজানের পাহাড়ি ঢল। তাই নদী ও হাওরে পানি বাড়ছে। সুনামগঞ্জ পৌর শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি বেশি হলে ভাটিতে সুনামগঞ্জে পাহাড়ি ঢল নামে। এতে নদী ও হাওরে পানি বাড়ে। চেরাপুঞ্জিতে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। গত ২৪ ঘণ্টায় সেখানে ৪৪১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর আগের ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টি হয়েছিল ৫১৩ মিলিমিটার। এতে পাহাড়ি ঢল নামছে। ঢলের পানির তোড়ে সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজার উপজেলার খাসিয়ামারা নদীর বেড়িবাঁধের তিনটি স্থান ভেঙে গেছে। এতে উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের অন্তত ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা গেছে, আজ দুপুর ১২টায় সুনামগঞ্জ পৌর শহরের ষোলঘর এলাকায় সুরমা নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ৭ দশমিক ৮১ মিটার, যা বিপৎসীমার ১ সেন্টিমিটার ওপরে। গত ২৪ ঘণ্টায় সুরমা নদীর পানি বেড়েছে ১৯ সেন্টিমিটার। সুনামগঞ্জে এ সময়ে বৃষ্টি হয়েছে ১৫০ সেন্টিমিটার। জেলার ছাতক উপজেলা শহরের কাছে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে ২৪ ঘণ্টায় পানি বেড়েছে ৫৮ সেন্টিমিটার। পানি বাড়ছে সুনামগঞ্জের জাদুকাটা, পাটনাই, রক্তি, বৌলাই, কুশিয়ারা, নলজুর, চেলা, চলতি খাসিয়ামারাসহ সব নদ–নদীতে।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার সৈয়দপুর গ্রামের বাসিন্দা শিক্ষক শামসুল ইসলাম বলেন, পানি বেড়ে জেলা সদরে এলাকার যোগাযোগের মূল সড়ক সৈয়দপুর-ইব্রাহিমপুর সড়ক প্লাবিত হয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন লোকজন। পানি বাড়ছে।
ইব্রাহিমপুর গ্রামের বাসিন্দা আকরাম উদ্দিন বলেন, ‘পানি যেভাবে বাড়ছে, তাতে মনে হচ্ছে, বন্যা হয়ে যাবে। ২০২২ সালের ১৬ জুন কিন্তু এভাবেই ভারী বৃষ্টি ও পরে ভয়াবহ বন্যা হয়েছিল। তাই মানুষের মধ্যে কিছুটা ভয় আছে।’
সুনামগঞ্জ পৌর শহরের হাছননগর এলাকার বাসিন্দা পারভেজ আহমদ চৌধুরী বলেন, তিন দিন ধরে বৃষ্টি হচ্ছে। থামার কোনো লক্ষণ নেই। এটা তো ভয়ের। মানুষের মধ্যে একধরনের আতঙ্ক আছে।
ছাতক উপজেলার সীমান্তবর্তী ইসলামপুর ও নোয়ারাই ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এসব ইউনিয়নে গ্রামীণ রাস্তাঘাট প্লাবিত হওয়ায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে মানুষ দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। ছাতক পৌর শহরের বাঘবাড়ি এলাকা বাসিন্দা হারুনুর রশিদ বলেন, ছাতকের সব ইউনিয়নেই পানি আছে। অনেক জায়গায় রাস্তাঘাট তলিয়ে গেছে।
এদিকে পাহাড়ি ঢলে দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের খাসিয়ামারা নদীতীরের বেড়িবাঁধ ভেঙে প্লাবিত হওয়া বক্তারপুর, চৌকিরঘাট, ইদ্রিসপুর, ঝিরারগাও, লক্ষ্মীপুর, নোয়াপাড়া, রসরাই, সুলতানপুর, এরুয়াখাই, মাঠগাও ও রণভূমি গ্রামে এখনো পানি আছে। ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বিপাকে পড়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘পানি তো বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মানুষের দুর্ভোগ। বৃষ্টি ও ঢল না থামলে পানি কমবে না। আমরা সব জায়গায় খোঁজ রাখছি।’
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সিলেট কার্যালয়ের আবহাওয়াবিদ শাহ মোহাম্মদ সজীব হোসাইন জানিয়েছেন, আগামী ৭২ ঘণ্টা বৃষ্টির পূর্বাভাস আছে।
সুনামগঞ্জ পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মামুন হাওলাদার প্রথম আলোকে বলেন, উজানের ঢল নামলেই মূলত সুনামগঞ্জে নদ-নদী ও হাওরে পানি বাড়ে। এ কারণেই পানি বাড়ছে। সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। বড় কোনো বন্যা হবে না।