ছাত্রলীগের হাতে লাঞ্ছিত প্রকৌশলীই বরখাস্ত, নেসকোর অভিযোগে নাম নেই কারও

ভাঙচুরের পর কালীগঞ্জ উপজেলা নেসকো কার্যালয়। এ সময় কর্মচারীদেও মারধর করা হয়। গত মঙ্গলবার দুপুরে
ছবি: প্রথম আলো

লালমনিরহাটে কালীগঞ্জে বিদ্যুৎ কার্যালয়ে ছাত্রলীগের হামলার সময় লাঞ্ছিত প্রকৌশলী রকি চন্দ্র দাসকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো)। তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ, হামলা ও ভাঙচুরের বিষয়ে তিনি বিধিবহির্ভূতভাবে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিয়েছেন।

গতকাল বুধবার বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন নেসকোর লিগ্যাল অ্যান্ড কোম্পানি অ্যাফেয়ার্স শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক রহমত উল্লাহ আল ফারুক স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে রকি চন্দ্রকে সাময়িক বরখাস্তের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়। তাঁকে রংপুর অঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলীর কার্যালয়ে সংযুক্ত করা হয়েছে।

এদিকে বিদ্যুৎ কার্যালয়ে হামলার ৪৮ ঘণ্টা পর আজ দুপুরে কালীগঞ্জ থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন নেসকো রংপুর কার্যালয়ের সহকারী প্রকৌশলী ইকবাল আসিফ রাজী। তবে অভিযোগে কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

গত মঙ্গলবার দুপুরে কালীগঞ্জে উপজেলা নেসকোর বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে। এ সময় নেসকোর কালীগঞ্জ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র রায়সহ (৪০) কয়েকজনকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করা হয়। কালীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শরিফুল ইসলামের নেতৃত্বে এ হামলা চালানো হয়।

সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের ছেলে রাকিবুজ্জামান আহমেদের ডাকে স্থানীয় তুষভান্ডার রেলস্টেশন এলাকার অন্বেষা সাংস্কৃতিক গোষ্ঠীর কার্যালয়ে দেখা করতে না যাওয়ায় এই ঘটনা ঘটানো হয় বলে অভিযোগ করেন রকি চন্দ্র রায়। রাকিবুজ্জামান আহমেদ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক।

প্রথম আলোকে ঘটনার দিনের বর্ণনা দিয়েছেন কালীগঞ্জ নেসকো নির্বাহী প্রকৌশলীর কার্যালয়ের কয়েকজন কর্মচারী। আজ দুপুরে তাঁদের একজন প্রথম আলোকে  বলেন, ‘হামলাকারী আমাদেরও মারধর করেন। তারা অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। অফিসে ভাঙচুর করে ভয়ের পরিস্থিতি সৃষ্টি করেন। আমাদেরকে অফিস থেকে বের করে দেয়। পরে আমরা নিরাপত্তার অভাবে অফিসে তালা দিয়ে চলে যাই।’

থানায় জমা দেওয়া নেসকোর অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, মঙ্গলবার বেলা দুইটার সময় কয়েকজন অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী রকি চন্দ্র দাসের কক্ষে প্রবেশ করে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি–ধামকি দেয় এবং আসবাবপত্র ভাঙচুর করে। নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলীকে মারতে উদ্যত হলে দপ্তরে কর্মরত কর্মচারী মাজেদা বেগম, ঝাড়ুদার বাধা প্রদান করলে তাকেও প্রহার করা হয়। বাগ্‌বিতণ্ডার আওয়াজ শুনে দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী নুর মোহাম্মদ এগিয়ে গেলে তাঁকেও প্রহার করা হয়। একপর্যায়ে অত্র দপ্তরের সব কর্মকর্তা–কর্মচারীদের তাড়া করে দপ্তর ত্যাগ করতে বাধ্য করা হয়।

অভিযোগদাতা ইকবাল আসিফ রাজী গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী কালীগঞ্জ থানায় লিখিতভাবে অভিযোগ করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ইকবাল বলেন, পুলিশ তদন্ত করে হামলাকারীদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনবে।

কালীগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) হাবিবুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, নেসকো সহকারী প্রকৌশলী থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। অভিযোগটি তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

ঘটনার পর আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কালীগঞ্জ নেসকো কার্যালয় পরিদর্শন করেন নেসকোর রাজশাহী কার্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) জাকিউল ইসলাম। হামলার ঘটনাটিয় মন্ত্রীপুত্র রাকিবুজ্জামানের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বলে তিনি সাংবাদিকদের বলেন। তিনি আরও বলেন, রাকিবুজ্জামান আহমেদ ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না। এ ঘটনার সঙ্গে তাঁর কোনো সংশ্লিষ্টতাও পাওয়া যায়নি।

এরপরে জাকিউল কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) কার্যালয়ে যান। সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি কালীগঞ্জ নেসকো অফিস পরিদর্শন করেছি। নেসকো অফিসে গত মঙ্গলবার দুপুরের সৃষ্ট অপ্রীতিকর ও অনাকাঙ্ক্ষিত  ঘটনায় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটি তদন্ত করে বের করবে কারা কারা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। তদন্ত প্রতিবেদনের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’