সিলেটে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে মার্কিন পর্যবেক্ষক দল। সাক্ষাৎ শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, মার্কিন পর্যবেক্ষক দল বিএনপি ও আওয়ামী লীগ দুই দলের তিক্ততা কীভাবে কমানো যায়, সে ব্যাপারে কোনো সাজেশন আছে কি না, জানতে চেয়েছে।
শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে নগরের ধোপাদিঘীর পাড় এলাকার নিজ বাসভবনের নিচে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এর আগে মার্কিন পর্যবেক্ষক দল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে।
আব্দুল মোমেন বলেন, ‘অনেক কিছু নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তারা জানতে চেয়েছে, দেশের বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি—এদের মধ্যে তিক্ততা কমানো যায় কীভাবে? ইনফিউচার, নট টুডে ওর টুমোরো, আগামীতে কীভাবে দুই দলের মধ্যে তিক্ততা কমানো যায়, এর কোনো সাজেশন আছে কি না। আরেকটি প্রশ্ন ছিল, এবারের নির্বাচনে বিএনপি এল না কেন যদিও অ্যাপারেন্টলি ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন হচ্ছে। আমি বলেছি, এটা তাদের জিজ্ঞেস করেন।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘আমি মনে করি, তাদের (বিএনপি) নিজেদের মধ্যে ডায়ালগের অভাব। তাদের লোকেরা যদি সবাই আলোচনা করত, ডিসিশন নিত, তাহলে এ রকম বোকামি হতো না। বয়কট করে সরকারকে পরিবর্তন হয় না।’ তিনি বলেন, ‘তারা জানতে চেয়েছে, আগামী ৭ তারিখের নির্বাচনে কেমন সাড়া পাচ্ছেন? উৎসাহ–উদ্দীপনা পাচ্ছেন? আমি বলেছি, খুব ভালো উদ্দীপনা পাচ্ছি, খুব ভালো সাড়া পেয়েছি।’
বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা কমে গেছে উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ‘শুধু সন্ত্রাসী কার্যক্রমের কারণে বিএনপির গ্রহণযোগ্যতা অনেক নিচে নেমে গেছে। কারণ, তারা ইস্যুভিত্তিক..। তাদের দুটি ইস্যু—একটি হলো প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ, আরেকটি হলো তাদের নেত্রীর মুক্তি। নেত্রীকে তো আওয়ামী লীগ জেলে দেয়নি। তাদের গড়া তত্ত্বাবধায়ক সরকার জেলে দিয়েছে। এটা নিয়ে জনগণের মাথাব্যথা নেই।’ তিনি বলেন, ‘বিএনপি বাস মিস করেছে। যখন জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে, তখন তারা ইস্যুটি ধরতে পারত। কিন্তু তারা ধরতে পারেনি। তারা সব ইস্যু মিস করেছে। এটা তারা ভুল করেছে। কারণ, তাদের নেতৃত্বের অপরিপক্বতা আছে।’
সিলেটে অনেক বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবে উল্লেখ করে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, এবারের নির্বাচনে ২২৭ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক থাকবেন। তা ছাড়া আরও বহু সাংবাদিক আসবেন। তিনি বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, নির্বাচন পর্যবেক্ষণপদ্ধতি বন্ধ করে দেওয়া উচিত। আমার লোক ভোট দিলে অন্য কেউ কেন সার্টিফিকেট দেবে? বাংলাদেশের মানুষ এ দেশ স্বাধীন করেছে। কেউ সার্টিফিকেট দিয়ে এ দেশ স্বাধীন করেনি। বাংলাদেশের মানুষের ওপর আমার বিশ্বাস থাকলে অন্য লোককে দিয়ে কেন “অথেনটিক” করতে যাব। আমি ব্যক্তিগতভাবে এ পদ্ধতির বিরুদ্ধে। আমি আমেরিকা-ভারতে নির্বাচন পর্যবেক্ষক দেখিনি। আমরা গণতান্ত্রিক, গণতন্ত্রের জন্য আমরা রক্ত দিয়েছি। খুব কম দেশের মানুষ গণতন্ত্রের জন্য রক্ত দিয়েছে। আমি কেন অন্যের সার্টিফিকেটে চলব?’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘নির্বাচন কমিশন এত কড়া, এত শক্তিশালী, যার কারণে আমরা এখন কথা বলতে পারছি না। আমাদের ভোট দেন বলতে পারছি না। কারণ, নির্বাচন কমিশন নিষেধ করেছে। কিন্তু অন্যান্য দলের প্রতি তাদের নিষেধাজ্ঞা নেই। আমরা সরকারি দল প্রচারণা করতে পারব না আর ওরা (বিএনপি) প্রচারণা করতে পারবে ভোট দিয়ো না। এটা কেমন কথা! ইসির ভূমিকা সমানভাবে হওয়া উচিত ছিল।’
মন্ত্রী আরও বলেন, ‘ভিসা নীতি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের কথায় ঠিক থাকে, তাহলে বিএনপির নেতাদের ওপর এই মুহূর্তেই তা আরোপ করা উচিত। বিএনপি নির্বাচন বানচাল করতে চায়। তাদের ওপর অবশ্যই ভিসা নীতি দেওয়া উচিত। হয়তো দিয়েছেও। কারণ, আমেরিকা নাম প্রকাশ করে না।’ জাতীয় পার্টির প্রার্থীদের সরে যাওয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘এটা তাদের নিজস্ব ব্যাপার, হয়তো টাকাপয়সা পেয়েছে। ভেতরে অনেক কিছুই হয়।’