অতীতের সব কষ্ট, গ্লানি, ব্যর্থতা ও জীর্ণতাকে পেছনে ফেলে সুন্দর আগামীর প্রত্যাশায় বর্ণিল আয়োজনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা নববর্ষ ১৪৩০ উদ্যাপিত হয়েছে। দিবসটি উপলক্ষে আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে জাতীয় সংগীত ও ‘এসো হে বৈশাখ, এসো এসো’ গানে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়া হয়। পরে বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’ প্রতিপাদ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়। শোভাযাত্রাটি ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে এসে শেষ হয়।
চারুকলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক মোহাম্মদ আলীর সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার। বিশেষ অতিথি হিসেবে সহ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল-ইসলাম ও হুমায়ুন কবীর এবং কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবায়দুর রহমান প্রামাণিকসহ প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্তাব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন।
বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা বৈশাখী সাজে সেজে চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে আসতে শুরু করেন। ঢাকঢোল আর গানের তালে মুখর ছিল অনুষদ প্রাঙ্গণ। তবে অন্যবারের তুলনায় এবার লোকসমাগম কম ছিল। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, প্রচণ্ড দাবদাহ ও ক্যাম্পাস ছুটির কারণে লোকজনের উপস্থিতি কম।
এবারের শোভাযাত্রার প্রধান আকর্ষণ ছিল পঙ্খিরাজ ঘোড়া। পাশাপাশি প্রতীক হিসেবে ছিল কচ্ছপ, ছোট-বড় টেপা পুতুল, নারী-পুরুষের মুখোশ ও গাছের গুঁড়ি। শোভাযাত্রায় হাতপাখাকে বৈশ্বিক জ্বালানি–সংকট নিরসনের প্রতীক হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। পঙ্খিরাজ ঘোড়াকে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের দিকে ধাবিত হওয়ার প্রতীক হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘নববর্ষ আর যাই বলি না কেন, এগুলো সবই আমাদের যাপিত সংস্কৃতির অংশ। সংস্কৃতি কোনো জলাশয়ের মতো বদ্ধ বিষয় নয়। বাঙালি সংস্কৃতি কোনো কিছু ভাবতে গেলে আমাদের ধর্মীয় ভেদাভেদ চলে আসে, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক।’
এদিকে আলাদাভাবে ক্যাম্পাসে মঙ্গল শোভাযাত্রা করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল চারটি সংগঠন। সকাল ১০টায় লাইব্রেরি চত্বর থেকে শোভাযাত্রাটি শুরু হয়ে ক্যাম্পাসের গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার একই স্থানে এসে শেষ হয়।
এ সময় তাঁরা ‘ফ্যাসিবাদের পতনে শুচি হোক ধরা’, ‘আমার ভাগের ইলিশ কই!’, ‘বৈশাখ আসে-যায়, ফসলের মূল্য নাই’, ‘প্রাণ প্রকৃতির আবাস, রামপাল-রূপপুরে বিনাশ’, ‘মৃৎশিল্পের মূল্য নাই, বৈশাখেই শোভা পায়’ লেখা বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন।
শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া সংগঠনগুলো হলো সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, বিপ্লবী ছাত্র যুব আন্দোলন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট (বাসদ মার্ক্সবাদী)।
রাবি শাখা বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রীর সভাপতি শাকিল হোসেন বলেন, ‘সরকার নববর্ষ পালন করছে ঠিকই, পাশাপাশি জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করছে। এটি নববর্ষ পালন করার লক্ষ্য নয়। আমাদের সংস্কৃতির লক্ষ্য হচ্ছে পাখিকে আবাসস্থল ফিরিয়ে দেওয়া ও কৃষকের ন্যায্যমূল্য ফিরিয়ে দেওয়া।’ জীববৈচিত্র্য রক্ষার উদ্দেশ্যে তাঁরা আলাদাভাবে নববর্ষ পালন করছেন বলে তিনি জানান।