নীলফামারীর ডোমারে পেটব্যথার চিকিৎসা নিতে একটি ক্লিনিকে গিয়েছিল ১৩ বছর বয়সী এক শিশু। শিশুটির আলট্রাসনোগ্রাম ও মূত্র পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দেওয়া হয় শিশুটি অন্তঃসত্ত্বা। পরে আরও দুই জায়গায় পরীক্ষা করে দেখা যায়, আগের প্রতিবেদন ভুল।
এ ঘটনায় শিশুটির স্বজনেরা উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে অভিযোগ দিলে আজ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে ক্লিনিকটিকে সাময়িক বন্ধ ঘোষণা ও ২২ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ডোমার উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপি এ ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন।
জান্নাতুল ফেরদৌস হ্যাপি প্রথম আলোকে বলেন, উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগে করা একটি অভিযোগ ও নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে ওই ক্লিনিকে অভিযান চালানো হয়। এ সময় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯-এর ৩৮, ৪০ ও ৫২ ধারায় ক্লিনিক কর্তৃপক্ষকে ২২ হাজার টাকা জরিমানা ও ক্লিনিকটিকে সাময়িক বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।
বন্ধ হওয়া ক্লিনিকটির নাম ডোমার জেনারেল ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টার। গত রোববার বিকেলে পেটব্যথার সমস্যা নিয়ে এক শিশু স্বজনদের সঙ্গে সেখানে আসে। এ সময় ওই শিশুর আলট্রাসনোগ্রাম ও মূত্র পরীক্ষা করাতে বলেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। এরপর ওই ক্লিনিকে তার আলট্রাসনোগ্রাম ও মূত্র পরীক্ষা করা হয়। প্রতিবেদনে শিশুটি অন্তঃসত্ত্বা বলে প্রতিবেদন দেওয়া হয়। প্রতিবেদন পেয়ে দুশ্চিন্তায় পড়েন স্বজনেরা। অভিভাবকদের সন্দেহ হলে রাতেই তাঁরা ডোমারের আরও দুটি ক্লিনিকে শিশুটির একই পরীক্ষা করে জানতে পারেন, সে গর্ভবতী নয়। বিষয়টি জানাজানি হলে অভিভাবক ও স্থানীয় ব্যক্তিরা ক্ষিপ্ত হয়ে গত সোমবার সকালে ওই ক্লিনিকের সামনে বিক্ষোভ করেন এবং ক্লিনিকটি বন্ধের দাবিতে ডোমার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার কাছে একটি লিখিত অভিযোগ দেন।
শিশুটির নানি বলেন, সেখানে ভুল প্রতিবেদন দেওয়ার পর তাঁরা আরও দুই জায়গায় পরীক্ষা করিয়ে উল্টো প্রতিবেদন পান। পরে জেনেছেন, ওই ক্লিনিকে কোনো চিকিৎসক থাকেন না। নার্স ও ওয়ার্ড বয় দিয়েই পরীক্ষা-নিরীক্ষাসহ অস্ত্রোপচারের কাজ করানো হয় বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এ বিষয়ে ওই ক্লিনিকের চেয়ারম্যান মো. জাহাঙ্গীর ইসলাম বলেন, চিকিৎসক নিহার রঞ্জন সাহা আলট্রাসনোগ্রাম করেছেন। আর প্যাথলজি টেকনোলজিস্ট লক্ষ্মণ রায় মূত্র পরীক্ষা করে গর্ভবতী হওয়ার প্রতিবেদন দিয়েছেন। হয়তো তাঁরা ভুল প্রতিবেদন দিয়েছেন।
চিকিৎসক নিহার রঞ্জন সাহা বলেন, হয়তো মেশিনের সমস্যার কারণে আলট্রাসনোগ্রাফিতে ভুল প্রতিবেদন এসেছে। তবে টেকনোলজিস্ট লক্ষ্মণ ওই ক্লিনিকে মূত্র পরীক্ষা করার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, হয়তো ক্লিনিকের কেউ কাজটি করেছেন। উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা রায়হান বারী বলেন, ‘এ বিষয়ে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’