ছাত্রদল-যুবদলের দখল থেকে মুক্ত হলো প্রভাতী সংঘের কার্যালয়

যশোরের শার্শা উপজেলার প্রভাতী সংঘের কার্যালয় দখলমুক্ত হয়েছে। গতকাল সোমবার দুপুরে
ছবি: সংগৃহীত

যশোরের শার্শা উপজেলার বেনাপোল স্থলবন্দরসংলগ্ন এলাকায় প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন প্রভাতী সংঘের কার্যালয় দখলমুক্ত হয়েছে। যুবদলের নেতা-কর্মীরা গতকাল রোববার রাতেই কার্যালয়ের সামনে টাঙানো পৌর ছাত্রদল ও যুবদল নেতার ফেস্টুন সরিয়ে নিয়েছেন। সেখানে আবার প্রভাতী সংঘের সাইনবোর্ড স্থাপন করেছেন সংগঠনের সদস্যরা।

সংগঠনের নবগঠিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক রাশিদুজ্জামান বলেন, গতকাল রাতেই সংগঠনের কার্যালয়ের সামনে সাইনবোর্ড স্থাপন করা হয়েছে। যুবদল-ছাত্রদলের কর্মীরা সংগঠনের ভেতর থেকে তাঁদের চেয়ার ও ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে নিয়েছেন। কার্যালয়ের তালার চাবিও তাঁর কাছে দিয়ে গেছেন। সব পক্ষের লোকজন নিয়ে সংগঠনের নতুন কমিটি গঠন করে অনুমোদনের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে পাঠানো হবে বলে জানান তিনি।

স্থানীয় লোকজন বলেন, দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর বেনাপোলের নিবন্ধিত একমাত্র সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয় দখল করে নেন ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা। এরপর সংগঠনের সমানে ‘বেনাপোল পৌর ছাত্রদল’–এর ব্যানার ঝোলানো হয়। শার্শা উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব ইমদাদুল হকের ফেস্টুন ঝোলানো হয়। কার্যালয়ে ভেতরে চেয়ার নিয়ে ওঠাবসা শুরু করেন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা।

এ বিষয়ে গতকাল রোববার ‘যশোরে সাংস্কৃতিক সংগঠনের কার্যালয় দখলে নিল ছাত্রদল-যুবদল’ শিরোনামে প্রথম আলো অনলাইন ও আজ সোমবার ছাপা পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। অনলাইনে সংবাদ প্রকাশের পর রাতেই সংগঠনের দখল ছেড়ে দেন যুবদল-ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা।

শার্শা উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব ইমদাদুল হক বলেন, ‘প্রথম আলোর এক প্রতিবেদনে আমাদের দুর্নাম হয়ে গেছে। আমরা রাতেই প্রভাতী সংঘের কার্যালয়ের সামনে থেকে দলীয় ব্যানার-ফেস্টুন সরিয়ে নিয়েছি। যদিও আমার ফেস্টুন আগেই স্থাপন করা ছিল। দলীয় কর্মীরা, যাঁরা বসার জন্য চেয়ার নিয়ে ওই কার্যালয়ে রেখেছিলেন, তাঁরা তা বের করে নিয়েছেন। সংগঠনের সাধারণ সম্পাদকের কাছে ঘরের চাবিও দিয়ে দেওয়া হয়েছে।’

ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমি নিজেও সাবেক ক্রিকেট খেলোয়াড়। প্রভাতী সংঘ ক্লাবটি আমাদের সামাজিক প্রতিষ্ঠান। আমরা সেটা দখল করিনি। দীর্ঘদিন ওই কার্যালয়ে কেউ ওঠাবসা করতেন না। যে কারণে গত ৫ আগস্টের পর ছাত্রদল ও যুবদলের নেতা-কর্মীরা সেখানে ওঠাবসা করতেন।’

সংগঠন সূত্রে জানা গেছে, বেনাপোলের মানুষের বিনোদন ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের চর্চার জন্য প্রভাতী সংঘ ছাড়া আর কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। এ প্রতিষ্ঠানের ভেতরই সরগম সংগীত একাডেমি নামে সাংস্কৃতিক একটি সংগঠনের কার্যক্রমও চালানো হতো। সংগঠনটির কার্যালয় সংস্কারের কাজ চলছিল। ঘরের ভেতরের দেয়াল সংস্কার করে রং করে রাখা হয়। এর মধ্যে ৫ আগস্ট বিএনপির কয়েকজন নেতা-কর্মী সেখানে গিয়ে প্রভাতী সংঘের কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন।

এরপর ২০ সেপ্টেম্বর সকালে ক্লাবের দেয়ালে পৌর ছাত্রদলের সাইনবোর্ড ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। ক্লাবের দেয়ালে শার্শা উপজেলা যুবদলের সদস্যসচিব ইমদাদুল হকের ছবিসংবলিত ফেস্টুন টাঙানো আছে। প্রভাতী সংঘের কার্যালয় দখলের পর নতুন করে চেয়ার টেবিল বসানো হয়। প্রতিদিন বিকেল থেকে রাত অবধি সেখানে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতা-কর্মীরা জড়ো হয়ে আড্ডা দিতেন।

যদিও পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘বেনাপোল পৌর ছাত্রদলের আহ্বায়ক মো. আরিফুল ইসলাম ও সদস্যসচিব মো. ইশতিয়াক আহম্মেদ দায়িত্ব নিয়ে বলতে পারি যে আমরা পৌর ছাত্রদলের ব্যানারে কোনো দখলদারিতে জড়িত নাই। আর যদি কেউ জড়িত থাকে, তাঁর দায়িত্বভার বেনাপোল পৌর ছাত্রদল বহন করবে না।’

প্রভাতী সংঘের সর্বশেষ অনুমোদিত কমিটির সভাপতি ছিলেন বেনাপোল পৌরসভার সাবেক মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক আশরাফুল আলম ও সাধারণ সম্পাদক ছিলেন শার্শা উপজেলা যুবদলের আহ্বায়ক মোস্তাফিজ্জোহা সেলিম। চলতি বছরে নবগঠিত কমিটির সভাপতি মনোনীত হয়েছেন শার্শা উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান সালমা আলম ও সাধারণ সম্পাদক রাশিদুজ্জামান। যদিও নতুন কমিটি সমাজসেবা অধিদপ্তর থেকে এখনো অনুমোদন পায়নি।