ঘরমুখী মানুষের ঈদযাত্রায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে আজ শুক্রবার ভোর থেকে থেমে থেমে যানজট শুরু হয়েছে। এতে বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রীদের পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি। আজ শুক্রবার সকাল ৭টা থেকে ১০টা পর্যন্ত কুমিল্লার দাউদকান্দি উপজেলার মেঘনা-গোমতী সেতুর টোল প্লাজা হয়ে ইলিয়টগঞ্জ পর্যন্ত প্রায় ২০ কিলোমিটার মহাসড়কে এমন পরিস্থিতি দেখা গেছে।
দাউদকান্দি অংশের গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ড, স্বল্পপেন্নাই রাবেয়া ফিলিং স্টেশন, বলদাখাল পাপিয়া স্ট্যান্ড এলাকায় তুলনামূলক বেশি যানজট চোখে পড়ে। গৌরীপুর ও বলদাখাল এলাকায় যানবাহনের চালকেরা মহাসড়কে যানবাহন থামিয়ে যাত্রী ওঠানো–নামানো করায় এবং লোকাল চলাচলকারী বাস ও মাইক্রোবাসের স্ট্যান্ড গড়ে ওঠায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে বলে স্থানীয় লোকজন মনে করছেন। সেই সঙ্গে উল্টো পথে সিএনজিচালিত ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা, প্যাডেলচালিত রিকশা, মোটরসাইকেল, মাইক্রোবাস, অ্যাম্বুলেন্স, পিকআপ চলাচল করার কারণেও যানজট তৈরি হয়েছে।
ঢাকার বিমানবন্দর এলাকা থেকে দাউদকান্দির দৈয়াপাড়া গ্রামে ঈদ করতে বাড়ি ফিরছেন চিকিৎসক আমিনুল ইসলাম। তিনি বলেন, স্ত্রী ও দুই ছেলেমেয়েকে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে যাচ্ছেন। ঢাকার টিটাগাং রোড, কাঁচপুর ব্রিজ, মদনপুর, সোনারগাঁ, ভাটেরচর, ভবেরচর, বলদাখাল, রাবেয়া সিএনজি ফিলিং স্টেশন, গৌরীপুরে থেমে থেমে যানজটে আটকা পড়েন। সকাল নয়টায় দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে এসে পৌঁছান তাঁরা। এতে পৌনে দুই ঘণ্টা সময় বেশি লেগেছে তাঁদের। তা ছাড়া জনপ্রতি ৪০০ টাকার পরিবর্তে ঈদ উপলক্ষে ৫০০ টাকা ভাড়া দিতে হয়েছে।
ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা ফেনীগামী স্টার লাইন পরিবহনের বাস দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে যানজটে আটকা পড়ে। বাসটির চালকের সহকারী শামীম মিয়ার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে ঢাকা থেকে রওনা দেন। পথে থেমে থেমে যানজটে আটকা পড়েন। সকাল ১০টায় দাউদকান্দির গৌরীপুরে পৌঁছান। অথচ স্বাভাবিক সময়ে এ পথ অতিক্রম করতে সোয়া এক ঘণ্টা লাগত।
ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে মাইক্রোবাইলোজি বিভাগের ছাত্রী তানিয়া আক্তার ও তাঁর মা তাছলিমা আক্তার আজ সকাল সাতটায় ঢাকার টিকাটুলী এলাকা থেকে চাঁদপুরের পদ্মা এক্সপ্রেস বাসে ওঠেন। জনপ্রতি ২০০ টাকার ভাড়া ৪০০ টাকা দিতে হয়েছে। এক ঘণ্টার যাত্রাপথে মহাসড়কে তাঁদের তিন ঘণ্টা অতিবাহিত করতে হয়েছে। পেন্নাই এলাকায় তাঁদের সঙ্গে আলাপ হলে এমন পরিস্থিতির কথা জানান তাঁরা।
দাউদকান্দির ইলিয়টগঞ্জের দৈয়াবাড়ী গ্রামের বাসিন্দা ঢাকার চাকরিজীবী আলাউদ্দিন সিকদার সকাল নয়টায় দাউদকান্দির গৌরীপুর বাসস্ট্যান্ডে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, তাঁর স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসী ও চার বছরের মেয়ে মরিয়ম আক্তারে নিয়ে গ্রামের বাড়িতে প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ করতে যাচ্ছেন। আজ ভোর পাঁচটায় ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে বাসে ওঠেন তাঁরা। পথে পথে যানজটে আটকে থেকে এক ঘণ্টার পথ পাড়ি দিতে তাঁদের লেগেছে চার ঘণ্টা।
দাউদকান্দির চশই গ্রামের বাসিন্দা ঢাকার চাকরিজীবী মহসীন মিয়া, একই গ্রামের বাসিন্দা ঢাকার ব্যবসায়ী শরীফুল ইসলাম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া কসবা সদরের বাসিন্দা মাদ্রাসাশিক্ষক আল আমিন, মুরাদনগরের কুরুল গ্রামের বাসিন্দা ঢাকার চাকরিজীবী শাখাওয়াত হোসেন পথে পথে থেমে থেমে যানজটে আটকে ভোগান্তির কথা জানিয়েছেন।
ঢাকা থেকে চাঁদপুরের বাবুরহাটগামী জৈনপুরী এক্সপ্রেসের বাসচালক মজিবুর রহমান আজ সকাল পৌনে ১০টায় দাউদকান্দির স্বল্পপেন্নাই রাবেয়া সিএনজি ফিলিং স্টেশনের সামনে মহাসড়কে যানজটে আটকে ছিলেন। তিনি বলেন, সকাল পৌনে ছয়টায় ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে পথে পথে যানজটে আটকে থেকে এক ঘণ্টার পথ চার ঘণ্টায় পৌঁছেছেন। এতে বেশি তেল ও সময় অপচয় হয়েছে।
দাউদকান্দি হাইওয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীনুর ইসলাম বলেন, ঈদে ঘরমুখী যাত্রীদের স্বস্তিতে বাড়ি ফেরা নিশ্চিত করতে হাইওয়ে থানা-পুলিশের পাশাপাশি কমিউনিটি পুলিশের সদস্যদের নিয়োজিত করা হয়েছে। যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে হাইওয়ে পুলিশের কয়েকটি দল সার্বক্ষণিক মহাসড়কে দায়িত্ব পালন করছে।