সিলেটে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার কমেছে। বর্তমানে এ জেলায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। এ ছাড়া জেলায় অবিবাহিত নারীর চেয়ে অবিবাহিত পুরুষের সংখ্যা বেশি। অবিবাহিত পুরুষ আছেন ৪৮ দশমিক ৫৪ শতাংশ। অন্যদিকে অবিবাহিত নারী আছেন ৩৩ দশমিক ৪৪ শতাংশ।
গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে ‘সিলেটের জনশুমারি ও গৃহগণনা ২০২২-এর জেলা রিপোর্ট প্রকাশনা অনুষ্ঠান’ শীর্ষক আয়োজনে এসব তথ্য জানানো হয়। এটি বাংলাদেশের প্রথম ডিজিটাল জনশুমারি ও গৃহগণনা।
শুরুতেই জেলা রিপোর্টের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। বিভাগীয় পরিসংখ্যান অফিসের উদ্যোগে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন সিলেটের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান। বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপসচিব জেসমীন আকতার। সভা সঞ্চালনা করেন বিভাগীয় পরিসংখ্যান অফিসের যুগ্ম পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) সাহাবুদ্দীন সরকার।
জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১.০৩ শতাংশ
ওই প্রতিবেদনের তথ্য অনুসারে, বর্তমানে সিলেট জেলায় জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ১ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। ২০১১ সালে যা ছিল ২ দশমিক ৯৫ শতাংশ। এর আগে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ২০০১ সালে ১ দশমিক ৭৩ এবং ১৯৯৯ সালে ১ দশমিক ৯৩ শতাংশ ছিল।
জেলা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০২২ সালে সিলেটের জনসংখ্যা ৩৮ লাখ ৫৭ হাজার ১২৩ জন। এর মধ্যে পল্লিতে ২৮ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৯ ও শহরে ১০ লাখ ১২ হাজার ৩৪৪ জন বসবাস করছেন। মোট জনসংখ্যার ৫১ শতাংশ পুরুষ ও ৪৯ শতাংশ নারী। সিলেটে মোট খানা রয়েছে ৭ লাখ ৪৬ হাজার ৮৫৪। এর মধ্যে পল্লিতে ৫ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৪ ও শহরে ২ লাখ ৮ হাজার ৪১০টি।
১৯৮১ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সিলেটের জনসংখ্যার পরিসংখ্যান রিপোর্টে উপস্থাপন করা হয়। এতে দেখা যায়, ১৯৮১ সালে সিলেটে ১৭ লাখ ৭৮ হাজার জনসংখ্যা ছিল। এ ছাড়া ১৯৯১ সালে ২১ লাখ ৫৩ হাজার, ২০০১ সালে ২৫ লাখ ৫৬ হাজার এবং ২০১১ সালে ৩৪ লাখ ৩৪ হাজার জনসংখ্যা ছিল। প্রতি বর্গকিলোমিটারে ১৯৯১ সালে জনসংখ্যার ঘনত্ব ছিল ৬১৭ জন। তা বেড়ে ২০০১ সালে ৭৩২ জন, ২০১১ সালে ৯৯৫ ও ২০২২ সালে ১ হাজার ১১৭ জনে দাঁড়ায়। ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী সিলেটে মোট জনসংখ্যার ৯২ দশমিক ৫৭ শতাংশ মুসলমান ও ৭ দশমিক ৩৩ শতাংশ হিন্দু। বাকিরা বৌদ্ধ, খ্রিষ্টানসহ অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।
সাক্ষরতার হার বেড়েছে
সিলেটে ২০২২ সালে সাক্ষরতার হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭৬ দশমিক ৪৩ শতাংশে। অন্যদিকে তা ২০১১ সালে ৫১ দশমিক ১৮ শতাংশ, ২০০১ সালে ৪৫ দশমিক ৪৯ ও ১৯৯১ সালে ৩৩ দশমিক ৮৫ শতাংশ ছিল। সিলেটে ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ শিক্ষার্থী সাধারণ শিক্ষায় পড়ছেন। এর বাইরে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ ধর্মীয় শিক্ষায়, শূন্য দশমিক ৪০ শতাংশ কারিগরি শিক্ষায় ও ২ দশমিক ৪০ শতাংশ অন্যান্য শিক্ষায় পড়াশোনা করছেন।
ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৪২ শতাংশ
মুঠোফোন ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের একটি পরিসংখ্যানও জেলা রিপোর্টে ঠাঁই পেয়েছে। তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে নিজস্ব ব্যবহারের মুঠোফোন (১৫ বছর ও তদূর্ধ্ব) আছে ৬৫ দশমিক ৩৭ শতাংশের। এ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারকারী আছে ৪২ দশমিক ০২ শতাংশ। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে অ্যাকাউন্টধারী আছে ৩১ দশমিক ৮৭ শতাংশ। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টধারী আছে ৩১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।
বিদ্যুৎ–সুবিধা পান প্রায় শতভাগ
২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, সিলেটের ১২ দশমিক ৯৯ শতাংশ মানুষ ১৯৯১ সালে বিদ্যুৎ–সুবিধা ভোগ করতেন। ২০২২ সালে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৯ দশমিক ২৭ শতাংশে। এ ছাড়া ২০০১ সালে ৩৫ দশমিক ১৪ শতাংশ এবং ২০১১ সালে ৬২ দশমিক ৯২ শতাংশ মানুষ বিদ্যুৎ–সুবিধা ভোগ করতেন।
কাজের ক্ষেত্র অনুযায়ী, সিলেটের ৩৫ দশমিক ৫৮ শতাংশই কৃষির সঙ্গে যুক্ত। এ ছাড়া শিল্পের সঙ্গে সম্পৃক্ত আছেন ১০ দশমিক ৬০ শতাংশ। বাকি ৫৩ দশমিক ৮২ শতাংশ বিভিন্ন সেবার সঙ্গে জড়িত।