পাঁচ বছরেই যিনি বদলে দিয়েছেন চিত্র

মোছা. শাহানাজ পারভীন
ছবি: প্রথম আলো

শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে আছে বিজ্ঞান ক্লাব, কম্পিউটার ল্যাব, নিজস্ব পরিবহনব্যবস্থা, মিলনায়তন, সততা স্টোর, মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুম, ছাদবাগানসহ আরও অনেক কিছু। শিক্ষকদের সহায়তা করার পাশাপাশি অভিভাবকদের বাড়ি বাড়ি ছুটে শিক্ষার্থীর পড়ালেখার খোঁজ নেওয়া, অভিভাবকদের নিয়ে বৈঠক করাসহ চলে আরও নানা কর্মযজ্ঞ।

ঝিনাইদহের পৌর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রধান শিক্ষক (স্কুল শাখা) মোছা. শাহানাজ পারভীনের প্রচেষ্টায় পাঁচ বছরে বদলে গেছে চিত্র। নিজের কাজের জন্য ২০২৪ সালে তিনি মাধ্যমিক পর্যায়ে দেশের সেরা প্রতিষ্ঠানপ্রধান নির্বাচিত হয়েছেন। এর আগে ২০২৩ সালে জেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ হয়েছিলেন।

বিদ্যালয়ের শিক্ষক খায়রুল ইসলাম জানান, প্রতিবছর ৯৭ থেকে ৯৮ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করছে। শিক্ষকেরা প্রধান শিক্ষকের কাছ থেকে সঠিক মূল্যায়ন পান। যে কারণে তাঁরাও সারাক্ষণ প্রতিষ্ঠান নিয়ে ভাবেন। প্রতিষ্ঠানপ্রধান দিনভর প্রতিষ্ঠান নিয়ে যে কাজ করেন, তা দেখে অন্যরাও আন্তরিকতার সঙ্গে তাঁকে সহযোগিতা করেন। যার কারণে প্রতিষ্ঠানটি অল্প দিনে একটি ভালো প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিতি পেছে।

শাহানাজ পারভীন (৪৫) ঝিনাইদহের হরিণাকুণ্ডু উপজেলার পোড়াহাটি গ্রামের মো. শারিফুল ইসলামের মেয়ে। ২০২০ সালের ১ জানুয়ারি তিনি পৌর মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের স্কুল শাখার দায়িত্ব নেন। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী আছে ৩৭০ জন। শিক্ষক-কর্মচারী আছেন ২৪ জন।

শাহানাজ পারভীন জানান, ২০০৯ সালের ২৪ জুন তিনি শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন। তিনি যোগ দিয়ে দেখেন, অনেক কিছুই অসম্পূর্ণ। ল্যাব আছে সচল নেই, বিজ্ঞানাগারের মালামাল স্টোররুমে পড়ে আছে। এ ছাড়া রয়েছে নানা অসংগতি। তখন তিনি সিদ্ধান্ত নেন, নতুন প্রতিষ্ঠান হলেও মানোন্নয়নে তাঁরা সম্মিলিতভাবে কাজ করবেন। এই ভাবনা থেকে প্রথমেই বসেন শিক্ষকদের সঙ্গে। তাঁদের সঙ্গে নিয়ে কাজের মাধ্যমে এগিয়ে চলেছেন বলে জানান। ৫ বছরে তিনি বিদ্যালয়ে ছাদবাগান করেছেন। ডিজিটাল ল্যাব প্রতিষ্ঠা করেন। বিদ্যালয়ে বিজ্ঞান ক্লাব খুলেছেন, আছে লাইব্রেরি।

প্রধান শিক্ষক বলেন, তিনি কাজ শুরু করেন শিক্ষার্থীদের ডেটা এন্ট্রির কাজ দিয়ে। শিক্ষার্থীর নাম, অভিভাবকের নাম ও তাঁদের মুঠোফোন নম্বরের তালিকা আছে। এরপর অভিভাবকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা শুরু করেন। প্রতিদিন বিদ্যালয় শেষ করে শিক্ষার্থীদের বাড়ি বাড়ি যাওয়া, তাদের সঙ্গে দেখা করে পড়ালেখার খোঁজ নেওয়ার কাজ করেন। এ ছাড়া অমনোযোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলাদা করে বসা। তাদের আলাদা করে সাহায্য করার কাজ করছেন।

ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী নাজমুল সাদাতের মা নুরজাহান বেগম জানান, তাঁর বড় ছেলে এই প্রতিষ্ঠান থেকে পড়ালেখা করে এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছেন। ছোট ছেলেও এখানে পড়ালেখা করছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান শিক্ষক একজন সচেতন ও কর্মক্ষম মানুষ। তিনি সব অভিভাবকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন। অভিভাবকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বাচ্চাদের পড়ালেখার খোঁজখবর নেন।

আরেক শিক্ষার্থী ইরফান হোসেনের বাবা বিল্লাল হোসেন জানান, প্রধান শিক্ষক তাঁর প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের ভালোভাবে দেখভাল করেন। এতে তাঁরা ওই প্রতিষ্ঠানে সন্তানদের ভর্তি করিয়ে স্বস্তিতে আছেন।