প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ফিরছেন বন্যার্ত মানুষেরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চরে
প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণসামগ্রী নিয়ে ফিরছেন বন্যার্ত মানুষেরা। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের প্রথম আলো চরে

কুড়িগ্রামে ত্রাণ বিতরণ

‘শীত হউক আর বান হউক, হামার পাশে প্রথম আলো থাকে’

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার ঘোগাদহ ইউনিয়নের দুটি গ্রামের বন্যার্ত মানুষের মধ্যে প্রথম আলো ট্রাস্টের উদ্যোগে ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার প্রথম আলো চর ও রসূলপুর গ্রামের ১৫০ পরিবারের হাতে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেন বন্ধুসভার সদস্যরা।

প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণসামগ্রী বৃহস্পতিবার দুপুরে কুড়িগ্রাম বন্ধুসভার বন্ধুরা প্যাকেটজাত করে বন্যাকবলিত প্রথম আলো চর ও রসূলপুরে নিয়ে যান। ‘প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা’ মাঠে ত্রাণ বিতরণ করার খবর আগেই মানুষদের জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল। সেখানে আগে থেকে বন্যার্ত মানুষজন ভিড় করেন। বন্ধুসভার ত্রাণের নৌকা দেখে বন্যার্ত মানুষ কেউ কেউ পানি ভেঙে বিদ্যালয় মাঠে জড়ো হন। পরে উপস্থিত বন্যার্ত মানুষের মধ্যে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন প্রথম আলো বন্ধুসভার বন্ধু ও প্রথম আলোর প্রতিনিধি সফি খান।

রসূলপুর গ্রামে বন্যার্ত মানুষের জন্য ২৩ প্যাকেট খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়। ত্রাণ প্যাকেট পেয়ে ওই গ্রামের শুক্কুর আলী বলেন, ‘শীত হউক আর বান হউক, হামার পাশে কাইও না থাকলেও প্রথম আলো থাকে। বানের সময় সউগ চরে ত্রাণ দুইবার, তিনবার করি গেইছে। হামার চরে কাইও আসে না। সগাই ভাবে, ওই চরে প্রথম আলো আছে। হামার প্রথম আলো ছাড়া আর কাইও নাই। প্রথম আলোর ত্রাণ পায়া হামার খুব উপকার হইল।’

ত্রাণ নিতে প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালা’ মাঠে এসেছিলেন বন্যার্ত মানুষেরা

ত্রাণের ব্যাগ নিয়ে যাওয়ার সময় ষাটোর্ধ্ব জহুরা বেগম বলেন, ‘দুই মাস থাকি দফায় দফায় বান (বন্যা) আইসে আর যায়। দুই মাস থাকি এত কষ্ট করলাম, নদীভাঙনে ভিটা হারাইলাম। কই কাইও (কেউ) তো হামার খোঁজ নিবার আসিল না। বান শুকি যায়া ঘরত মঙ্গা নাগিল। এল্যা প্রথম আলো আসি হামাক ত্রাণ দিল। দুঃখের দিনে প্রথম আলো হামার শেষ ভরসা।’

বন্ধুসভার বন্ধুদের দেওয়া এসব ত্রাণসামগ্রী প্যাকেটে ৫ কেজি চাল, ২ কেজি ডাল, ২ কেজি আলু, ২ কেজি পেঁয়াজ, সয়াবিন তেল আধা লিটার, লবণ ১ প্যাকেট ও সাবান ১টি।

ত্রাণ পেয়ে চোখেমুখে হাসি ফুটে ওঠে প্রথম আলো চরের বাসিন্দা আবদুর রশীদের। তিনি বলেন, ‘বানের পানির জন্য কাজকাম সউগ বন্ধ হয়া আছিল। ঘরত জমানো খাবার সউগ শেষ। এল্যা প্রথম আলোর দেওয়া ত্রাণের খাবার বাসাত দিয়ে ঢাকায় কামে (কাজ) যামু। বউ-সন্তান এক সপ্তাহ এই ত্রাণে চলতে পারব।’

ত্রাণসামগ্রী বিতরণকালে প্রথম আলো কুড়িগ্রাম বন্ধুসভার সাংগঠনিক সম্পাদক ফরিদুল ইসলাম, উপসাংগঠনিক সম্পাদক সুরাইয়া শিমু, অর্থ সম্পাদক আজুজুল হক, বন্ধুসভার বন্ধু রাজিয়া সুলতানা, কামরুল ইসলাম, জিওন উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া প্রথম আলো চর আলোর পাঠশালার প্রধান শিক্ষক আতাউর রহমান ও অন্য শিক্ষকেরা উপস্থিত ছিলেন।

২২ আগস্ট থেকে ১০ অক্টোবর পর্যন্ত প্রথম আলো ট্রাস্টের ত্রাণ তহবিল মোট ১ কোটি ১৩ লাখ ৩৪ হাজার ২৫৭ টাকা জমা হয়েছে। আরও ত্রাণ সহায়তা দেওয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের মধ্যে আছে প্রগতি ইন্স্যুরেন্স লিমিটেড ৫ লাখ টাকা, নিকেতন ওয়েলফেয়ার সোসাইটি ১ লাখ ৪১ হাজার ৯৪০ টাকা, হেলথ কেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস (এমএআরসি বিভাগ) ৪০ হাজার টাকা, মেজর জেনারেল এ আর খান ও মাহমুদা খান ২৭ হাজার টাকা, আনোয়ার ১০ হাজার ৫০০ টাকা, বেইলি রোড প্রিপারেটরি স্কুল অফিসার্স কোয়ার্টার ১০ হাজার ৩১০ টাকা এবং ব্যাংকের মাধ্যমে এসেছে ৭২ হাজার ২৬০ টাকা।