পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলায় চার মাস আগে নিখোঁজ কলেজছাত্রী লামিয়া আক্তারের (১৮) পরিবারকে দেওয়া বেনামি চিঠির সূত্র ধরে উদ্ধার হওয়া কঙ্কালটি তাঁর পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
মঙ্গলবার বিকেলে পিরোজপুর সদর হাসপাতালের মর্গ থেকে কঙ্কালটি গ্রহণ করেন লামিয়া আক্তারের খালু এবাদুল শেখ। এরপর বিকেল সাড়ে পাঁচটায় উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের বাড়িতে জানাজা শেষে সেটি দাফন করা হয়।
লামিয়া আক্তার উপজেলার চিথলিয়া গ্রামের নজরুল ইসলামের মেয়ে। তিনি উপজেলা সদরের সরকারি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মহিলা মহাবিদ্যালয়ের একাদশ শ্রেণির ছাত্রী ছিলেন।
গতকাল সোমবার দুপুরে উপজেলার সাতকাছিমা গ্রামের মোজাহার মোল্লার বাড়ির পাশের একটি জমিতে পুঁতে রাখা কঙ্কালটি উদ্ধার করে পুলিশ। এরপর লামিয়া আক্তারের পরিবারের সদস্যরা দাবি করেন, কঙ্কালটি নিখোঁজ লামিয়ার। তাঁরা মাথার চুলের বেণি দেখে এটা নিশ্চিত হয়েছেন তাঁরা।
এ ঘটনায় গতকাল রাতে পিরোজপুর সদর উপজেলার চুঙ্গাপাশা গ্রামে থেকে লামিয়ার আক্তারের খালাশাশুড়ি রেক্সনা বেগমকে (৪০) গ্রেপ্তার করে পুলিশ।
আজ বিকেলে কঙ্কালটি বাড়ি নেওয়ার পর সেখানে লামিয়া আক্তারের স্বজনেরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। এ সময় তাঁর নানি মূর্ছা যান। আসরের নামাজের পর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। সন্ধ্যায় বাড়ির কবরস্থানে কঙ্কালটি দাফন করা হয়।
নাজিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. হুমায়ুন কবির প্রথম আলোকে বলেন, আজ বিকেলে ময়নাতদন্ত শেষে কঙ্কালটি লামিয়ার পরিবারের দাবি অনুযায়ী তাঁদের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিএনএ পরীক্ষার পর কঙ্কালটি পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যাবে।
পুলিশ ও ওই কলেজছাত্রীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, লামিয়া আক্তারের সঙ্গে একই গ্রামের মো. তরিকুল ইসলামের (২২) প্রেমের সম্পর্ক ছিল। গত বছরের ৩০ মে বিয়ের দাবিতে তরিকুল ইসলামের বাড়িতে অবস্থান নেন লামিয়া। এরপর স্থানীয় লোকজনের মধ্যস্থতায় তাঁদের বিয়ে হয়। তবে তরিকুলের মা-বাবা এই বিয়ে মেনে না নেওয়ায় লামিয়া বাবার বাড়ি চলে আসেন।
তরিকুল বিভিন্ন সময়ে লামিয়ার বাবার বাড়িতে আসা-যাওয়া করতেন। গত বছরের ৬ নভেম্বর রাতে পরিবারের সদস্যদের অগোচরে লামিয়াকে নিয়ে বের হন তরিকুল। এর পর থেকে নিখোঁজ ছিলেন এই কলেজছাত্রী। তরিকুল ইসলামের বাড়িসহ সম্ভাব্য বিভিন্ন স্থানে মেয়ের খোঁজ করেন লামিয়ার বাবা নজরুল ইসলাম।
গত ৭ ডিসেম্বর নিখোঁজ লামিয়ার মা রাজিয়া বেগম স্থানীয় থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। এরপর পুলিশ প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিশ্চিত হয়, ঘটনার দিন রাতে তরিকুল ও লামিয়া একসঙ্গে ছিলেন। ২৫ ডিসেম্বর তরিকুল ইসলামকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নাম উল্লেখসহ নয়জনের বিরুদ্ধে স্থানীয় থানায় অপহরণের মামলা করেন রাজিয়া বেগম।
ঘটনার চার মাস পর গত রোববার রাত সাড়ে আটটার দিকে লামিয়ার ঘরের চালে ও বেড়ায় ঢিল ছুড়ে মারা হয়। এতে তাঁর পরিবারের লোকজন ভয় পেয়ে এক আত্মীয়কে ডাকেন। তিনি এসে ঘরে ঢোকার সময় সিঁড়ির ওপর মাটির ঢেলা দিয়ে চাপা দেওয়া কাগজ পান।
ওই কাগজে লেখা ছিল, ‘তোমাদের মেয়ের লাশ মোজাহার মোল্লার বাড়ির পশ্চিম পাশে বালুর মাঠের মধ্যে রাখা আছে। সব জানে মেজ খালা।’ রাতেই লামিয়ার পরিবার পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে রাতে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পাহারা বসায়। এরপর গতকাল সকালে বালুর মাঠ খনন করে কঙ্কালটি পাওয়া যায়।