সময়ের মুখ

সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের দাবিতে আমার এ কর্মসূচি

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম। মীর মশাররফ হোসেন হলের গণরুম বিলুপ্তি, শিক্ষাজীবন শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের হল থেকে সরিয়ে দেওয়া, বৈধ শিক্ষার্থীদের হলে আসন নিশ্চিত করার দাবিতে বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে অবস্থান ও অনশন কর্মসূচি পালন করছেন। তাঁর সাক্ষাৎকার নিয়েছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আব্দুল্লাহ আল মামুন।

সামিউল ইসলাম
সামিউল ইসলাম
প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনি কেন এ কর্মসূচি পালন করছেন?

সামিউল ইসলাম: আমার এ কর্মসূচি সাধারণ শিক্ষার্থীদের অধিকারের দাবিতে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলে পড়াশোনার সুযোগ পায় না। গণরুম, মিনি গণরুম বানানো হয় রাজনৈতিক কারণে। সেখান থেকেই রাজনৈতিক কর্মী বের করে তারা। আমার দাবি, হলে গণরুম বিলুপ্ত করতে হবে, হলের অছাত্রদের (মেয়াদোত্তীর্ণ) বের করতে হবে। হলের গণরুম-মিনি গণরুমে অবস্থান করা বৈধ শিক্ষার্থীদের (সিট) আসন নিশ্চিত করতে হবে।

আবাসিক হল থেকে অছাত্রদের বের করাসহ তিন দফা দাবিতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের ছাত্র সামিউল ইসলাম।
প্রশ্ন

প্রথম আলো: অবস্থান কর্মসূচির কত ঘণ্টা হলো?

সামিউল ইসলাম: বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে শুরু করেছি। শনিবার (গতকাল) রাত নয়টা পর্যন্ত, সব মিলিয়ে ৭৫ ঘণ্টা ধরে কর্মসূচি পালন করছি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনার দাবির বিষয়ে তাঁরা কী বলেছেন?

সামিউল ইসলাম: তাঁরা সবাই সময় চেয়েছেন। উপাচার্য আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, নির্মাণাধীন হলগুলো হয়ে গেলে গণরুম ও হলে আসনসংকট থাকবে না। তাঁরা সবাই আমাকে কর্মসূচি থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করেছেন।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: প্রশাসনের আশ্বাসটি আপনি কীভাবে দেখছেন?

সামিউল ইসলাম: আমি জানি তাঁরা এটা বাস্তবায়ন করবেন না। কারণ, হল প্রাধ্যক্ষ ও উপাচার্যের কাছে এর আগেও আমি লিখিত দাবি জানিয়েছিলাম। তাঁরা শুধু বলছেন, নতুন হল হয়ে গেলে এই সমস্যা আর থাকবে না। কিন্তু অছাত্রদের বের না করলে এই সমস্যা থাকবেই।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: হলে কবে উঠেছেন?

সামিউল ইসলাম: হলে উঠেছি ২০২০ সালে। তবে করোনার পর গণরুমে র‍্যাগিংয়ের প্রতিবাদ করায় তাঁরা (ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা) আমাকে হল থেকে বের করে দেন। এরপর ২০২২ সালে ‘মিনি গণরুমে’ উঠলে বিভিন্ন সময় আমাকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করে। ফলে আবারও হল থেকে চলে যেতে হয় আমাকে। পরে চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দুই আসনবিশিষ্ট বি ব্লকের ৪৪৭ নম্বর কক্ষে উঠি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: সব মিলিয়ে হলের অভিজ্ঞতা কেমন?

সামিউল ইসলাম: গণরুমে তারা (ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা) ঢুকে ঘুম থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের তুলে গালিগালাজ করে। মুরগি বানায়, লাফাতে বলে। কথা, আচরণ পছন্দ না হলে গালে চড়–থাপ্পড় দেয়। আমাকে গণরুম থেকে বের করে দিয়েছিল; কারণ, আমি গণরুম ব্যবস্থার প্রতিবাদ করেছিলাম।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক মো. ফরিদউদ্দিন খান এককভাবে এবং অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা এমন আন্দোলন করেছেন। তাঁদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন কি না।

সামিউল ইসলাম: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই কাহিনি আমি জানি না। আমি আমার দায়িত্ববোধের জায়গা থেকে এটি করছি। এর আগে হল প্রশাসনের কাছে এসব দাবিতে লিখিত দিয়েও প্রতিকার পাইনি। তাই এই আন্দোলন করছি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন কি?

সামিউল ইসলাম: না। আমি কোনো রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যুক্ত নই।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আন্দোলনের বিষয়টি আপনার পরিবার কীভাবে দেখছেন?

সামিউল ইসলাম: মিনি গণরুম থেকে হলে যখন সিট (আসন) চাইতে আসি, তখন প্রভোস্ট আমার বাসায় ফোন করে জানান। এমনভাবে জানান যেন আমি সিট চেয়ে অপরাধ করেছি। আমার বাসায় কেন এটা জানানো হবে? আমার বাসার সদস্যরা চিন্তিত ও উদ্বিগ্ন। এখান থেকে ফোন দিয়ে তাঁদের আরও উদ্বেগ বাড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনার এ কর্মসূচিতে আপনি কাদের পাশে পেয়েছেন?

সামিউল ইসলাম: আমার বন্ধুবান্ধব অনেকেই আমার খোঁজ খবর নিচ্ছে। তারা আমাকে সমর্থন দিয়ে মানসিকভাবে সাহস জোগাচ্ছে।