ক্যাফেটেরিয়ায় চড়া দামে নিম্নমানের খাবার বিক্রির অভিযোগে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গত রোববার চুয়েট ক্যাম্পাসে
ক্যাফেটেরিয়ায় চড়া দামে নিম্নমানের খাবার বিক্রির অভিযোগে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। গত রোববার চুয়েট ক্যাম্পাসে

মুরগির টুকরা আরও ছোট, ডাল হয়েছে পাতলা

চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) হলের ডাইনিং ও ক্যানটিনে গত এক বছরে এক দফা দাম বাড়ানো হয়েছে। দাম বাড়লেও খাবারের মান বাড়েনি। উল্টো মুরগির টুকরো আরও ছোট হয়েছে। ডাল পাতলা হয়েছে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা।

চট্টগ্রাম নগর থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার দূরে পাহাড়তলী ইউনিয়নে চুয়েট ক্যাম্পাস অবস্থিত। এ ক্যাম্পাসের ৭টি হলে অন্তত তিন হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। শিক্ষার্থীদের খাবারের জন্য সব হলেই ডাইনিং ও ক্যানটিন রয়েছে। এ ছাড়া হলের বাইরে রয়েছে একটি কেন্দ্রীয় ক্যাফেটেরিয়া ও ক্যানটিন। ক্যাফেটেরিয়ায় সব খাবারের দাম শুরু থেকেই বাড়তি ছিল। দুই মাস আগে অন্তত ৫টি পদের খাবারের দাম ৫ থেকে ১০ টাকা বাড়ানো হয়।

দাম বাড়ালেও উল্টো খাবারের মান কমেছে বলে অভিযোগ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এ জন্য আন্দোলন পর্যন্ত করতে হয়েছে। সর্বশেষ গত রোববার ক্যাফেটেরিয়ায় চড়া দামে নিম্নমানের খাবার বিক্রির অভিযোগে বিক্ষোভ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে খাবারের মান বাড়ানো হবে, কর্তৃপক্ষের এমন আশ্বাসে আন্দোলন স্থগিত করা হয়।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রকল্যাণ দপ্তরের পরিচালক মো. রেজাউল করিম প্রথম আলোর কাছে দাবি করে বলেন, হলের ডাইনিং, ক্যানটিন ও ক্যাফেটেরিয়ায় খাবারের মান ঠিক রাখার জন্য নিয়মিত তদারক করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে হলের ডাইনিংয়ে খাবার খেতে প্রতি শিক্ষার্থীকে এক মাসের জন্য ২ হাজার ১০০ টাকা করে দিতে হতো। কিন্তু সে বছরের মার্চে দাম বাড়িয়ে করা হয় ২ হাজার ৪০০ টাকা। একজন শিক্ষার্থী ভাত, এক টুকরো মাছ অথবা মাংস ও এক বাটি সবজি খেতে পারেন।

শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, ডাইনিংয়ে এক কেজি ওজনের একটি মুরগি ২০ থেকে ২২ টুকরো করা হয়। মাছের ক্ষেত্রে ছোট আকারের রুই অথবা পাঙাশ রাখা হয়। ক্যাফেটেরিয়ায় সকালে পাওয়া যায় শিঙারা, সমুচা, স্যান্ডউইচসহ নানা খাবার। দুপুরে ও রাতে পাওয়া যায় মাছ, মাংস, ভাত, ডাল, বিরিয়ানিসহ নানা পদ। ক্যাফেটেরিয়া প্রায় সময় ভাতের মধ্যে তেলাপোকা ও সিঙারায় পাথর পাওয়া যাচ্ছে।

পুরকৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী দিবাকর সিংহ প্রথম আলোকে বলেন, সারা দিনের ক্লাস, ল্যাব, পরীক্ষার ক্লান্তি শেষে ডাইনিংয়ে খাবার খেতে গিয়ে মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। ক্যাফেটেরিয়াতে দাম বেশি, তাই সেখানে কম যান।

তড়িৎ ও ইলেকট্রনিক কৌশল বিভাগের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী নওশাদ আব্বাস নাহিদ প্রথম আলোকে বলেন, সম্প্রতি তিনি ও তাঁর তিন বন্ধু ক্যাফেটেরিয়ায় খাবার খেতে গিয়ে ডাল ও পরোটা অর্ডার দেন। কিন্তু ডালে ছোট আকারের একটা পাথর খুঁজে পান। দাঁতে পাথর পড়ায় চিকিৎসকের কাছে যেতে হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ক্যাফেটেরিয়াতে এক প্লেট ভাতের মূল্য ২০ টাকা, সবজি ৩০ টাকা, এক টুকরো মুরগির মাংসের দাম ৭০ টাকা।

বাড়তি দামের পাশাপাশি ডাইনিং, ক্যানটিন ও ক্যাফেটেরিয়ার পরিবেশ নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন শিক্ষার্থীরা। তাঁরা বলছেন, এসব জায়গায় নোংরা টেবিল পরিষ্কার করা হয় না। পানির জগ কিংবা গ্লাসে ময়লা লেগে থাকে।

কয়েকটি হলের ডাইনিংয়ের পরিচালকেরা বলছেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে ৪০ টাকায় প্রতিবেলায় সুষম খাবার সরবরাহ করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়েছে। ডাইনিংয়ে ভর্তুকির ব্যবস্থা করা গেলে খাবারের মান ও পরিমাণ বাড়ানো যাবে।

বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীরা যে ধরনের খাবার খাচ্ছেন তাতে পুষ্টির চাহিদা কোনোভাবেই মিটছে না বলে মনে করেন চট্টগ্রাম ডায়াবেটিক জেনারেল হাসপাতালের উপপরিচালক পুষ্টিবিদ হাসিনা আক্তার। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসের ডাইনিং কিংবা ক্যানটিনে যে খাবার পাওয়া যাচ্ছে, সে খাবার খেয়ে অনেক শিক্ষার্থী উল্টো অসুস্থ হচ্ছেন। কারও মাথার চুল পড়ে যাচ্ছে। কারও নখে সমস্যা দেখা দিচ্ছে। এ বয়সে শিক্ষার্থীদের দৈনিক ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ২০০ ক্যালরি পর্যন্ত প্রয়োজন। কিন্তু এই চাহিদা মিটছে না।