ঘূর্ণিঝড় রিমালের পর রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার পদ্মা নদীতে বিভিন্ন ধরনের দেশি মাছ ধরা পড়ছে। গত চার দিনে জেলেদের জালে পদ্মা নদীর পাঙাশ, রুই, চিতল, ইলিশ ধরা পড়েছে। আজ শুক্রবার এক জেলের জালে ছোট-বড় সাতটি পাঙাশ, আরেক জেলের জালে পাঙাশের পাশাপাশি একটি বড় চিতল ও একটি ইলিশ মাছও ধরা পড়ে।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গোয়ালন্দ উপজেলার দেবগ্রাম ইউনিয়নের তেনাপচা গ্রামের জেলে ফরিদ শেখ আজ সকালে নৌকায় ছয়জন সঙ্গী নিয়ে পদ্মা নদীতে মাছ শিকারে বের হন। দুবার জাল ফেলার পর ছোট-বড় মিলে সাতটি পাঙাশ মাছ ধরা পড়ে। সকাল সাড়ে নয়টার দিকে মাছগুলো বিক্রির জন্য নিয়ে আসেন দৌলতদিয়ার ৬ নম্বর ফেরিঘাটে। স্থানীয় আড়তদার দুলাল মণ্ডলের তত্ত্বাবধানে ফেরি ঘাট সড়কে মাছের ঝুড়ি নামানোর পর তাঁর ছেলে রেজাউল মণ্ডল মাছ বিক্রি নিলামে তোলেন। সাতটি পাঙাশের মধ্যে সবচেয়ে ছোটটির ওজন ছিল প্রায় ৭ কেজি এবং বড়টির ওজন ছিল প্রায় ১৬ কেজি। ছোট পাঙাশটি ৮৫০ ও বড়টি প্রতি কেজি ১ হাজার ৫০ টাকা বিক্রি হয়।
নিলামে বিক্রি শেষে ফরিদ শেখ বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে নদীতে বেশি মাছ ধরা পড়ছে। বিশেষ করে, চার দিন ধরে প্রতিদিন তিন-চারটি করে পাঙাশসহ অন্য মাছ পাচ্ছেন। তাঁদের ফাসন বা ঘ্যাইলা জালে পাঙাশ, রুই, কাতলাসহ বড় মাছ ধরা পড়ে। গতকাল বৃহস্পতিবার তাঁরা চারটি পাঙাশ মাছ পান। আজ সকালে দুবার জাল ফেললে সাতটি পাঙাশ মাছ পান। মাছের আমদানি কিছুটা বেশি হওয়ায় তুলনামূলক দাম কম। অন্য সময়ের চেয়ে প্রতি কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা কমে বিক্রি হচ্ছে বলে জানান।
ফেরিঘাট এলাকার মাছ ব্যবসায়ী শাহজাহান শেখ বলেন, আজ সকালে ঘাটের উজানে পদ্মা নদীতে জাল ফেলেন স্থানীয় ছাত্তার মেম্বার পাড়ার জেলে আরিফ হালদার। তাঁর কারেন্ট জালে একটি বড় চিতল ও একটি বড় ইলিশ মাছ ধরা পড়ে। মাছ দুটি পাওয়ার পর আরিফ তাঁর মুঠোফোনে যোগাযোগ করেন। ১১ কেজি ওজনের চিতল ১ হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে ১৪ হাজার টাকা ও ১ কেজি ৬০০ গ্রাম ওজনের ইলিশটি ৬ হাজার ৭০০ টাকায় কিনে নেন। মাছ তাঁর আড়তে রেখে বিভিন্ন পরিচিতদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন।
শাহজাহান শেখ আরও বলেন, পদ্মা নদীর ইলিশের চাহিদা সব সময় বেশি থাকে। বর্তমানে ইলিশ তেমন পাওয়া যাচ্ছে না। ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা করে লাভ পেলেই তিনি বিক্রি করে দেবেন।
মাছের পাইকার আড়তদার রেজাউল মণ্ডল বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমাল–পরবর্তী পদ্মা নদীতে বিভিন্ন মাছ ধরা পড়ছে। বিশেষ করে, পাঙাশ বেশি ধরা পড়ছে। অথচ এক সপ্তাহ আগেও সারা দিনে দুটি পাঙাশ মাছ পাওয়া যায়নি। মাছের আমদানি বেশি হওয়ায় অন্য সময়ের চেয়ে দাম তুলনামূলক কম।
গোয়ালন্দ উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বপ্রাপ্ত মৎস্য কর্মকর্তা মোস্তফা আল রাজিব বলেন, বর্তমানে পদ্মা নদীতে পানি বাড়ছে। পানি বাড়লে মাছের আনাগোনা বাড়ে এবং ধরাও পড়ে। এটা জেলেদের জন্যও ইতিবাচক। নদীর গভীরতা বাড়ানোর জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের উদ্যোগ নেওয়া জরুরি।