সিলেট এমসি কলেজ প্রাঙ্গণে চানাচুর, বুট আর আচারের ভ্রাম্যমাণ ঠেলা নিয়ে আসেন আজল হক (৬৭)। সপ্তাহে ছয় দিন তাঁর দেখা মেলে। প্রায় ৪০ বছর ধরে এটাই তাঁর ব্যবসার জায়গা।
আজল হকের বাড়ি কুমিল্লার লাকসামের শাকতলা গ্রামে। প্রায় ৪২ বছর আগে সিলেটে এসেছিলেন তিনি। সম্প্রতি এমসি কলেজ ক্যাম্পাসে কথা হয় তাঁর সঙ্গে। তিনি বলেন, পরিবারে স্ত্রী, দুই মেয়ে ও এক ছেলে। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলের বয়স ১৮ বছর। দুই মেয়ের মধ্যে এক মেয়ে নাতিসহ তাঁর সঙ্গে থাকেন। এমসি কলেজ প্রাঙ্গণের এই বেচাকেনার আয় দিয়েই সংসার চলে তাঁর।
সিলেটে আসার প্রথম দিককার স্মৃতিচারণা করে আজল হক বলেন, প্রায় ৪০ বছর আগের কথা। সাল ঠিক মনে নেই। প্রথম দিকে সিলেটে এসে কিনব্রিজে রিকশা ঠেলার কাজ করেছেন। সে সময় একটি রিকশা ঠেললে চার আনা পেতেন। রিকশা ঠেলে ব্রিজের ওপর তোলা দেখতে সহজ মনে হলেও ভীষণ কষ্ট হতো। কষ্ট করে প্রায় দুই বছর সে কাজ করেছেন। পরে এলাকার এক ভাইয়ের মাধ্যমে ঠেলা নিয়ে চানাচুর ও আচার বিক্রি শুরু করেন। সেই থেকে সিলেট এমসি কলেজ প্রাঙ্গণে তিনি চানাচুর, বুট ও আচার বিক্রি করছেন।
আজল হকের কথার ফাঁকে এমসি কলেজের কয়েকজন শিক্ষার্থী তাঁর কাছ থেকে চানাচুর ও আচার কিনতে আসেন। এ সময় দেখা গেল, আজলের ঠেলায় চানাচুর, মুড়ি, তেঁতুলের আচার, বরইয়ের আচার, ঝাল তেঁতুলের আচার, বুট ও ছোলা আলাদা আলাদা করে রাখা। ঠেলার এক পাশে ময়লা ফেলার ঝুড়ি ঝুলিয়ে রাখা। একটি প্লাস্টিকের বয়ামে চানাচুরসহ অন্যান্য উপকরণ দেওয়ার পর চামচ দিয়ে নেড়ে কাগজে পরিবেশন করেন তিনি। খাওয়া শেষে ক্রেতারাই ঝুড়িতে ময়লা ফেলে যান।
আজল হক বলেন, প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে কলেজ প্রাঙ্গণে আসেন তিনি। ফেরেন বেলা দুইটা থেকে আড়াইটার দিকে। কলেজের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক তাঁর। এর মধ্যে একাধিকবার দুই পক্ষের মারামারির মধ্যে পড়েছেন। তাঁর ভাষ্য, ‘পুলাপাইন সবগুলারেই জানাশোনা আছে। আমারে কোনো পক্ষই ক্ষতি করে না। বলে চাচা আপনে চলি যান। মারামারি শুরু হলে আমিও ঠেলা নিয়ে বাইরে চলি যায়।’
চানাচুর খেতে আসা কলেজের রসায়ন বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, কলেজে একটি কাজের জন্য এক বন্ধুকে নিয়ে এসেছিলেন তিনি। ফেরার পথে চাচার কাছে চানাচুর খাওয়ার জন্য দুই বন্ধু মিলে এসেছেন। তিনি বলেন, ‘চাচা খুবই সরল মনের। কোনো কিছু জিজ্ঞাসা করলে খালি হাসে। আগে ঝাল বেশি চাইলে কম দিত, আর কম চাইলে বেশি দিত। কম-বেশি কেন হলো, জিজ্ঞাসা করলে খালি হাসত। এখনো আগের মতোই আছেন।’
নিজের আয় সম্পর্কে আজল হক বলেন, ঠেলায় তিন থেকে চার হাজার টাকার মতো খাবার উপকরণ থাকে। সেগুলো দিয়ে দুই থেকে তিন দিন চলে। আবার বাজারে গিয়ে আনেন। দিনে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকার মতো বিক্রি হয়। কলেজ বন্ধ থাকলে পাড়া-মহল্লা ঘুরে বিক্রি করেন। আবার অনেক সময় বেলা দুইটার দিকে কলেজে বিক্রি শেষে বাড়িতে খাওয়াদাওয়া সেরে বিকেলে পাড়া-মহল্লায় বিক্রি করতে বের হন। সব মিলিয়ে যে আয় হয়, তা দিয়েই চলে যাচ্ছে তাঁর সংসার।