আগুন
আগুন

বাগেরহাটে আওয়ামী লীগের কার্যালয় ও নেতা-কর্মীদের বাড়িতে হামলা, ঘেরের মাছ লুট

শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বাগেরহাট জেলাজুড়ে আওয়ামী লীগের দলীয় কার্যালয়, নেতা-কর্মীদের বাড়ি, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান, প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া অসংখ্য ঘের থেকে মাছ লুট করা হয়েছে।

হামলা ও সহিংসতায় ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত জেলায় চারজন খুন হয়েছেন। আহত হয়েছেন তিন শতাধিক মানুষ। ঘর ছেড়ে আত্মগোপনে চলে গেছেন আওয়ামী লীগের অসংখ্য নেতা-কর্মী ও সমর্থক। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আতঙ্ক ছড়িয়েছে। স্থানীয় লোকজনের ভাষ্য, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় জেলাজুড়ে নৈরাজ্য ও অরাজক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে জামায়াত-বিএনপির নেতাদের কড়া হুঁশিয়ারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হতে শুরু করেছে।

বাগেরহাট সদর উপজেলার ডেমা ও কাশেমপুর এলাকার আটজন মৎস্যচাষি জানান, সরকার পতনের পরপরই তাঁদের মাছের ঘের লুট করা হয়েছে। এলাকায় পুলিশ না থাকায় কারও কাছে অভিযোগ করতে পারেননি। তাঁরা এখন অসহায় হয়ে পড়েছেন।
বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, হামলাকারীরা সবাই এলাকার পরিচিত মুখ। তাঁরা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এসব হামলা ও ভাঙচুর করেছেন। পুলিশ নিস্ক্রিয় থাকায় সুযোগসন্ধানীরা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বাড়িঘরে হামলা করে মালামাল লুট করে নিয়ে গেছেন। তাঁরা দলের বাইরের সাধারণ মানুষ ও সংখ্যালঘুদেরও ছাড় দিচ্ছেন না। ধনী-গরিব সব শ্রেণির মানুষের বাড়িতেই লুট করা হচ্ছে। গোয়ালের গরু ও হাঁস-মুরগিও লুট করা হচ্ছে। বাদ যাচ্ছে না বিছানা, বালিশ ও থালাবাসন।

বাগেরহাট সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর এলাকার এক মৎস্যঘেরের মালিক বলেন, এলাকায় তালিকা করে ঘের লুট করছেন কয়েকজন বিএনপি নেতা। চরম নৈরাজ্য চলছে। সরাসরি রাজনীতি করে না এমন লোকজনের বাড়িঘরেও হামলা ও লুটপাট করা হয়েছে।

তবে বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন বলেন, বিভিন্ন এলাকায় যারা নৈরাজ্য ও অরাজকতা করছে, তারা দলের কেউ না। এরা সুযোগসন্ধানী। তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে। বুধবার বিকেল থেকে তাঁরা মাইকিং করে সবাইকে সতর্ক করেছেন। যেসব এলাকায় সমস্যা আছে, সেসব এলাকায় দলের নেতা-কর্মীদের বিশৃঙ্খলাকারীদের রুখতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তাঁরা সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকায় পাহারা দিচ্ছেন।

এদিকে বুধবার রাতে বাগেরহাটের শরণখোলায় প্রেসক্লাবে ঢুকে ভাঙচুর ও দুই সাংবাদিকের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে আহত হয়েছেন শরণখোলা প্রেসক্লাবের সভাপতি ইসমাইল হোসেন লিটন ও সাধারণ সম্পাদক মহিদুল ইসলাম। তাঁদের উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন জানান, বুধবার রাতে এক দল লোক লাঠিসোঁটা হাতে প্রেসক্লাবে ঢুকে হামলা চালায়। মারধর ছাড়াও প্রেসক্লাবের কম্পিউটারসহ নানা আসবাপত্র ভাঙচুর করে চলে যায় তারা।

বাগেরহাট জেলা বিএনপি, জামায়াত ইসলামী, ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন শান্তি–শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর অবস্থান নিচ্ছে। তাদের ভাষ্য, যারা নৈরাজ্য ও অরাজকতার সৃষ্টি করছে, তারা দলের কেউ নয়। আর তারা যদি দলের হয়ে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। সেই সঙ্গে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বাগেরহাট জামায়াতে ইসলামীর আমির মাওলানা রেজাউল করিম বলেন, সন্ত্রাস-নৈরাজ্য বন্ধে সব সময় সোচ্চার আছে জামায়াত। দলের নেতারা এলাকার বিশৃঙ্খলা রুখতে প্রথম দিন থেকেই কাজ করছেন। জেলার নয়টি উপজেলায় তাঁরা নানা শ্রেণি–পেশার মানুষের সঙ্গে সভা করেছেন। তাঁরা শান্তি চান।

পুলিশ সুপার আবুল হাসনাত খান বলেন, দেশের বিভিন্ন স্থানে থানায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে। অসংখ্য পুলিশ সদস্য খুন হয়েছেন। ১১ দাবিতে পুলিশ সদস্যরা কর্মবিরতি পালন করছেন। এলাকার শান্তি–শৃঙ্খলা ফেরাতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল পুলিশকে সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছে। এই সংকট দ্রুতই কেটে যাবে বলে আশা তাঁর।