অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরীর সাক্ষাৎকার

ফুলপরীকে সাধুবাদ, প্রতিবাদ করলে সমাজ বদলাবেই

নাজিয়া চৌধুরী
নাজিয়া চৌধুরী

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রলীগের নির্যাতনের শিকার হন বলে অভিযোগ করেন শিক্ষার্থী ফুলপরী খাতুন। তিনি এ বিষয়ে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের নেত্রীদের নামসহ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছেন। এ ঘটনায় রিট হলে হাইকোর্ট ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনের পাশাপাশি কিছু নির্দেশনা দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। তরুণীর এমন প্রতিবাদকে সাধুবাদ জানিয়েছেন অনেকে। বিষয়টি নিয়ে প্রথম আলো কথা বলেছে সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিদ্যা বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক নাজিয়া চৌধুরীর সঙ্গে। তিনি এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে গঠিত কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রী নির্যাতনের বিষয়টি তো জানেনই। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?

নাজিয়া চৌধুরী: সত্যি বলতে কি, আমাদের তরুণ প্রজন্মের একটা অংশের মানবিক অবক্ষয় দেখা দিয়েছে। মূল্যবোধ ও জ্ঞানের অভাবও আছে তাদের মধ্যে। শিক্ষার্থীদের একটা অংশ অমানবিক কাজে যুক্ত। এর ফলে যারা সুস্থ রাজনীতি পছন্দ করে, তারা সরে আসছে রাজনীতি থেকে। এই যে নির্যাতন, নারীদের ওপর নারীদের নির্যাতন, এটা আসলে ন্যক্কারজনক ও কলঙ্কজনক। এসব ভাবা যায় না, ভাবতেও পারি না। এমন ঘটনা নানা স্থানেই নানাভাবে ঘটছে। এটা সামগ্রিক অবক্ষয়ের একটা অংশমাত্র। বিপথগামী তরুণ প্রজন্মের একটি অংশের মধ্যে নেতিবাচক কাজ করার প্রবণতা বেড়ে গেছে। তারা মনে করে, তাদের অনেক ক্ষমতা। আসলে তো সেটা নয়।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কেন এমনটা হচ্ছে? শিক্ষকদের কি কোনো দায় নেই এতে?

নাজিয়া চৌধুরী: এখনকার বাচ্চারা আসলে প্রচণ্ড রকমের স্পর্শকাতর। আগে যখন আমরা ছাত্রছাত্রীদের যৌক্তিক কারণে ধমক দিতাম, যেমন ‘এই, তুমি এখানে দাঁড়িয়ে আছ কেন?’ ‘জোরে কথা বলছ কেন?’ তারা সেটা মেনে নিত। কিন্তু এখন এসব বলা যায় না। আসলে এখন সবার হাতে মুঠোফোন। সবাই ফোনেই ব্যস্ত। মানুষের সঙ্গে যে মানুষের আন্তযোগাযোগ কিংবা বডি ল্যাঙ্গুয়েজ থাকা দরকার, সেটা হচ্ছে না। তারা সেটা শিখতে পারছে না। পরিবারের মধ্যেও যখন তারা থাকে, তখন যন্ত্রনির্ভর হয়ে থাকে। ফলে, একের সঙ্গে অন্যের যোগাযোগ তৈরি হচ্ছে না। এ কারণে এসব শিক্ষার্থীকে কিছু বললেই প্রচণ্ড রকমের প্রতিক্রিয়া দেখায়। মনে করে, তাদের অধিকারে আমরা বাধা দিচ্ছি।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: কিন্তু এর বাইরেও তো উদাহরণ আছে। কুষ্টিয়ার ওই ছাত্রী ফুলপরী তো প্রতিবাদ করার সাহস দেখালেন...

নাজিয়া চৌধুরী: নিশ্চয়ই। এখনো অনেক শিক্ষার্থী আছে, যারা ইতিবাচকভাবে অহরহ উদাহরণ তৈরি করছে। এমন শিক্ষার্থী ও তরুণ প্রজন্ম আছে বলেই আমরা আশাবাদী। ওই তরুণীর মতো প্রতিবাদ করতেই হবে। প্রতিবাদ করলেই আলো আসবে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ফুলপরী অনেক সাহসী ভূমিকা রেখেছে। তাকে আমি সাধুবাদ জানাই। যখনই অন্যায় হবে, তখনই প্রতিবাদ করতে হবে। ওই ছাত্রী অভিযোগ করাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সজাগ হয়েছে, আদালতও ব্যবস্থা নিয়েছেন।

প্রশ্ন

প্রথম আলো: আপনাদের বিশ্ববিদ্যালয়েও কি এমন উদাহরণ আছে?

নাজিয়া চৌধুরী: অনেক আছে। বছর দেড়েক আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রী গণপরিবহনে যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছিল। ওই ছাত্রীর সাহসী প্রতিবাদে তখন অভিযুক্ত যুবককে কারাগারে যেতে হয়েছিল। আমি গত ১২ বছর বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌন হয়রানি ও নিপীড়ন প্রতিরোধে গঠিত কমিটির দায়িত্বে ছিলাম। প্রথম সাত বছর ছিলাম সদস্যসচিব এবং পরের পাঁচ বছর সভাপতি। তখন আমি দেখেছি, ছাত্রীরা অনেক সাহসী ভূমিকা রেখে হুমকির মধ্যেও অভিযোগ করেছে, প্রতিবাদ করেছে। আসলে প্রতিবাদ করলে সমাজ বদলাবেই।