জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্প্রতি শতাধিক গাছ কেটে আল-বেরুনী হলের সম্প্রসারিত ভবন-সংলগ্ন জলাশয়ের পাড়ে কলা ও মানবিক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করে কর্তৃপক্ষ। তখন শিক্ষার্থীরা গাছ কেটে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ জানালে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, জলাশয়ের ক্ষতি না করে ভবন নির্মাণ করা হবে। কিন্তু গত মঙ্গলবার থেকে সেই জলাশয়ে মাটি ফেলে ভরাট করতে শুরু করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
বিষয়টি জানাজানির পর গতকাল বুধবার ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাজ বন্ধ করে দেয় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জলাশয় ভরাটের প্রতিবাদে সেখানে মানববন্ধন করেন শিক্ষক–শিক্ষার্থীরা। ‘জাহাঙ্গীরনগর বাঁচাও আন্দোলন’ ব্যানারে আয়োজিত কর্মসূচিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও জাতীয় পর্যায়ের পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা সংহতি জানিয়ে অংশ নেন।
ছাত্র ইউনিয়ন বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক ঋদ্ধ অনিন্দ্য গাঙ্গুলির সঞ্চালনায় মানববন্ধনে বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন ও বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বক্তব্য দেন। এতে অন্যান্যের মধ্যে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) সাধারণ সম্পাদক আলমগীর কবির, বেলার আইনজীবী বারিশ চৌধুরী, তেঁতুলতলা মাঠ রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক সৈয়দা রত্না, আনোয়ারা উদ্যান রক্ষা আন্দোলনের সমন্বয়ক আমিরুল রাজিব প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
মানববন্ধনে অধ্যাপক রায়হান রাইন বলেন, কলা ও মানবিক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যেভাবে কাজ করার কথা বলা হয়েছিল, এখন তার উল্টো কাজ হচ্ছে। কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তিন-চার মাস ধরে তারা (প্রশাসন) ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে সভা করে বলেছিল, তারা লেকে ভবন বানাবে না। কিন্তু ক্যাম্পাস যখন ছুটি হয়েছে এবং অনেক শিক্ষার্থী ছুটিতে বাড়ি চলে গেছেন। ঠিক তখন লেক ভরাটের কাজ শুরু করেছে তারা। ক্যাম্পাসে অপরিকল্পিতভাবে ১৭টি স্থাপনার কাজ করতে গিয়ে গাছপালা নিঃশেষের পর এখন তারা জলাশয়ে ভবন বানাতে শুরু করেছে।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারিত হলে সেখানে বাধা দেওয়ার কিছু নেই। কিন্তু জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় সম্প্রসারণের জন্য গাছ কাটা ও জলাশয় ভরাট করা যে একেবারেই অপ্রয়োজনীয়, তা দৃশ্যমান। এরপরও গায়ের জোরে তড়িঘড়ি করে অংশীজনদের মতামতকে উপেক্ষা করে কাজগুলো করা হচ্ছে। আন্দোলনকারীদের মহাপরিকল্পনার মতো একটা যৌক্তিক দাবিকে কর্তৃপক্ষ অস্বীকার করছে। জাহাঙ্গীরনগরের জলাশয়ে প্রতিবছর অতিথি পাখি আসে। এর জাতীয় গুরুত্ব আছে। তারা কীভাবে এর গুরুত্বকে অস্বীকার করে? এখানে চলমান গোটা নির্মাণকাজের প্রক্রিয়াটাই অস্বচ্ছ। এর মাধ্যমে জাহাঙ্গীরনগরের পরিবেশগত ঐতিহ্য ও সংবেদনশীলতার কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেওয়া হচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, আল-বেরুনী হলের সম্প্রসারিত ভবন-সংলগ্ন জলাশয়ের পাড়ে অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৪৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ছয়তলাবিশিষ্ট ১ লাখ ২২ হাজার বর্গফুটের কলা ও মানবিক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য প্রকল্প পরিচালক (পিডি) নাসির উদ্দীনের মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি সাড়া দেননি। বিষয়বস্তু জানিয়ে হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা পাঠালে তিনি ব্যস্ত আছেন, কখন ফ্রি হবেন নিশ্চিত নন বলে জানান।