২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ থমকে আছে। শয্যাসংকটে রোগীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
রক্তশূন্যতা ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে গৃহবধূ মহিনা খাতুন (৪০) পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। শয্যা না পাওয়ায় হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে ঠাঁই হয়েছে তাঁর। সঙ্গে তাঁর স্বামী রয়েছেন। অতিরিক্ত রোগীর চাপে মেঝেতেও গাদাগাদি করে তাঁদের থাকতে হচ্ছে। পাশ দিয়ে লোকজনের চলাচলের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাঁদের। গত সোমবার হাসপাতালে গিয়ে এ চিত্র দেখা যায়।
পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা অনেক রোগীকে মেঝে ও বারান্দায় শয্যা পেতে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। অথচ পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে চলছে হাসপাতালের ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের ভবন নির্মাণের কাজ।
নির্ধারিত সময়ে নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় রোগীদের দুর্ভোগ শেষ হচ্ছে না। এ ছাড়া চিকিৎসক–সংকট ও উপযুক্ত সেবা দিতে না পারায় বেশির ভাগ রোগীকে পাঠানো হচ্ছে রংপুর ও দিনাজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে।
জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে স্থাপিত হাসপাতালটিতে প্রতিদিন বহির্বিভাগে ৪০০ থেকে ৫০০ রোগী সেবা নিয়ে থাকেন। আর অন্তর্বিভাগে ভর্তি থাকেন ১৮০ থেকে ২০০ জন। ১০০ শয্যা হওয়ায় এ হাসপাতালে প্রায় সময় ৮০ থেকে ১০০ জন রোগীকে মেঝেতে রেখে চিকিৎসা দিতে হয়। সোমবারও হাসপাতালে ১৯৭ রোগী ভর্তি ছিলেন বলে হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়।
ষাটের দশকে তৎকালীন পঞ্চগড় মহকুমায় ক্ষুদ্র পরিসরে নির্মিত হয় পঞ্চগড় স্বাস্থ্যকেন্দ্র। ১৯৮৪ সালে পঞ্চগড় ‘জেলা’ ঘোষণার পর ৫০ শয্যায় উন্নীত হয়ে পরিণত হয় পঞ্চগড় সদর হাসপাতালে। ২০০৫ সালে হাসপাতালটি ১০০ শয্যায় উন্নীত হয়ে পরিণত হয় আধুনিক সদর হাসপাতালে। এর পর থেকে শুরু হওয়া চিকিৎসকসহ প্রয়োজনীয় জনবল–সংকট আর ঘোচেনি।
পঞ্চগড় গণপূর্ত বিভাগের আওতায় ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে শুরু হয় পঞ্চগড় আধুনিক সদর হাসপাতাল ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের কাজ। ৫৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকা ব্যয়ে নতুন করে ১৫০ শয্যার হাসপাতাল তৈরিতে কাজ করছে ছয়টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ইতিমধ্যে ৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে মূল ভবন তৈরি ও বহির্বিভাগে পানি সরবরাহ ব্যবস্থার নির্মাণকাজ করছে ঢাকার মার্ক বিল্ডার্স লিমিটেড, বহির্বিভাগে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপনের কাজ করছে রংপুরের সৈয়দ সাজ্জাদ আলী এন্টারপ্রাইজ, মেডিকেল গ্যাস স্থাপনের কাজ করছে ঢাকার স্পেকট্রা লিমিটেড, সার্ভিস বিল্ডিং নির্মাণের কাজ করছে পঞ্চগড়ের শেখ ট্রেডার্স এবং লিফট স্থাপনের কাজ করছে ঢাকার সুপারস্টার লিমিটেড।
গণপূর্ত বিভাগ সূত্র জানা যায়, হাসপাতালের মূল ভবন নির্মাণের কাজের মেয়াদ ছিল ২০২০ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত। পরে ২০২২ সালের জুন পর্যন্ত মেয়াদ বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময়ে মূল ভবনের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে বলে দাবি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন, পানি সরবরাহ, মেডিকেল গ্যাস, লিফট, সার্ভিস বিল্ডিংসহ অন্যান্য কাজ শেষ না হওয়ায় হাসপাতাল ভবন হস্তান্তর করা হয়নি। সর্বশেষ ভবনের নির্মাণকাজসহ সব কাজ শেষ করার মেয়াদ নির্ধারণ করা হয়েছে ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত।
পঞ্চগড়ের সিভিল সার্জন মোস্তফা জামান চৌধুরী বলেন, ২৫০ শয্যায় উন্নীতকরণের নতুন ভবনের নির্মাণকাজ সম্পর্কে জানতে সম্প্রতি গণপূর্ত বিভাগের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। নির্মাণকাজ সম্পন্ন হলে হাসপাতালে ২৫০ শয্যার জনবল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিসের প্রয়োজন হবে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
পঞ্চগড় গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মনিরুজ্জামান সরকার বলেন, ‘করোনা ও লকডাউনে বেশ কিছুদিন নির্মাণকাজ বন্ধ ছিল। আগামী ডিসেম্বরে হাসপাতালটি কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করতে পারব বলে আশা করছি।’