বরিশালের আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মো. মহিদুল ইসলামকে চাঁদা না দেওয়ায় এক জমি ব্যবসায়ীকে আটকে রেখে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় আগৈলঝাড়া থানায় মামলা দিতে গেলে চার দিনেও পুলিশ মামলা নেয়নি বলে অভিযোগ ওই ব্যবসায়ীর। ভুক্তভোগী ব্যক্তির নাম উজ্জ্বল কুমার রাহা (৪৬)।
উজ্জ্বল কুমার আগৈলঝাড়া উপজেলার বাকাল ইউনিয়নের বাকাল গ্রামের রণজিৎ কুমার রাহার ছেলে। গতকাল রোববার বিকেলে আগৈলঝাড়া প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন উজ্জ্বল। লিখিত বক্তব্যে তিনি দাবি করেন, আগৈলঝাড়া উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি মহিদুল ইসলাম তাঁর (উজ্জ্বল) কাছে পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় বিভিন্ন সময় হুমকি দিয়ে আসছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গত শুক্রবার বেলা সাড়ে ১১টায় উজ্জ্বল কুমার আগৈলঝাড়া সদরে ওষুধ কিনছিলেন। এ সময় মহিদুল ইসলাম ফোন করে কালীখোলায় তাঁর ব্যক্তিগত কার্যালয়ে যেতে বলেন। সেখানে গেলে মহিদুল লাঠি দিয়ে আঘাত করলে সঙ্গে সঙ্গে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন উজ্জ্বল। সেখানে মহিদুলের শ্যালক সোহাগ হাওলাদার, উপজেলা তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজান মোল্লা, উপজেলা স্বেচ্ছসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত বিশ্বাস, সহযোগী হাসান হাওলাদার, সাগর হাওলাদারসহ আরও ১০ থেকে ১২ জন ছিলেন। তাঁরা লাঠিপেটা করে মহিদুলের ব্যক্তিগত কার্যালয়ে তাঁকে (উজ্জ্বল) আটকে রাখেন। চাঁদার টাকা না দিলে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়। উজ্জ্বলের পকেটে থাকা টাকা ছিনিয়ে নেন হামলাকারীরা।
উজ্জ্বল কুমার বলেন, ‘বিকেল চারটার দিকে মহিদুল আমার ফোন থেকে আমার স্ত্রী শিখা রানী সরকারকে কল করে আমাকে দিয়ে বলায় যে এখনই ৫০ হাজার টাকা নিয়ে আগৈলঝাড়া বাজারের কালীখোলার পুরোনো মুক্তিযোদ্ধা অফিসে আসতে হবে। বিকেল সাড়ে চারটার দিকে আমার স্ত্রী এসে আমাকে আটকে রাখার কারণ জানতে চাইলে মহিদুল জানান, পাঁচ লাখ টাকা না দিলে এলাকায় থাকতে পারবেন না। স্ত্রী কান্নাকাটি করে অনুনয়–বিনয় করে তখন ৫০ হাজার টাকা পরিশোধের শর্তে আমাকে ছাড়িয়ে নেন। সন্ত্রাসীরা আমার মুঠোফোনের মেমোরি কার্ড খুলে নেন। টাকা না দেওয়ায় সন্ত্রাসীদের হুমকিতে আমি পরিবার নিয়ে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি।’
এ ঘটনায় পুলিশের কাছে কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ উজ্জ্বল কুমারের। তিনি বলেন, ‘আমি চিকিৎসা নিয়ে কিছুটা সুস্থ হয়ে আগৈলঝাড়া থানায় গিয়ে বিষয়টি জানাই। মামলা করতে চাইলে পুলিশ মামলা না নিয়ে টালবাহানা করে। আমি বারবার থানায় গেলে গত চার দিনেও পুলিশ মামলা নেয়নি।’
এ বিষয়ে আগৈলঝাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আলম চাঁদ বলেন, উজ্জ্বল কুমার রাহাকে লিখিত অভিযোগ নিয়ে আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু তিনি অসেনি। গতকাল রাতে থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। প্রাথমিক তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। আজ সোমবার মামলা করা হবে।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে ছাত্রদল নেতা মহিদুল ইসলামকে বেশ কয়েকবার কল দিলেও তিনি ধরেননি। পরে মুঠোফোনে খুদে বার্তা পাঠানো হলেও তিনি কোনো সাড়া দেননি। অভিযোগ অস্বীকার করেছেন উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত বিশ্বাসও। তিনি বলেন, ‘এ ধরনের ঘটনা বিভিন্ন স্থানে বলাবলি করায় আমিও শুনছি। কিন্তু আমি কিছুই জানি না। এটা ষড়যন্ত্র।’
একই ধরনের ভাষ্য উপজেলা তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক মো. মিজান মোল্লারও। তিনি বলেন, ‘অভিযোগ সঠিক নয়, উজ্জল কুমার রাহার সঙ্গে আমাদের ভালো সম্পর্ক ছিল। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, তাঁর সঙ্গে আমাদের যৌথ ব্যবসার লেনদেন আছে। সেই ব্যবসার হিসাব চাইলে টাকা পরিশোধ করতে হবে দেখে আগেই মিথ্যা অভিযোগের নাটক করেছে উজ্জল। উপজেলা বিএনপির নেতারা বিষয়টি মিমাংসা করে দেওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক শাহাদাত বিশ্বাস ও তাঁতী দলের সাধারণ সম্পাদক মিজান মোল্লার দাবির বিষয়ে জানতে চাইলে উজ্জল কুমার বলেন, আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শামসামলে তাঁরা এলাকায় ছিলেন না। তাঁদের সঙ্গে কিসের যৌথ ব্যবসা? তাঁরা চাদা দাবি করছেন, এটাই সত্য।