মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলায় ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থকদের মিছিলে বোমা হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) সাবেক চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতা ফজলুর হক ব্যাপারীকে প্রধান আসামি করে ৫৭ জনকে এজাহারভুক্ত ও ১৫ থেকে ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে। আজ শুক্রবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে কালকিনি থানায় মামলাটি রেকর্ড করা হয়।
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হাসান দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, বোমা হামলার ঘটনায় স্বতন্ত্র প্রার্থীর সমর্থক কাজী মোফাজ্জেল হোসেন বাদী হয়ে থানায় এজাহার দেন। পুলিশ অভিযোগটি আমলে নিয়ে মামলাটি রেকর্ড করেছে। এতে ৫৭ জনকে এজাহারভুক্ত আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশ দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে। বাকি আসামিদের ধরতে পুলিশের অভিযান অব্যাহত আছে বলে জানান ওসি।
গ্রেপ্তার দুজন হলেন উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকার খলিলুর তালুকদারের ছেলে এবাদুল ইসলাম (২৫) ও একই এলাকার জব্বার করিকরের ছেলে ইমরান হোসেন (২৬)।
পুলিশ ও মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, গতকাল বিকেল সাড়ে চারটার দিকে কালকিনি উপজেলার লক্ষ্মীপুর এলাকায় স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগমের সমর্থকেরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের মৃধার মোড় থেকে হাবিবুর সরদারের বাড়ি পর্যন্ত গেলে নৌকার প্রার্থীর সমর্থক ফজলুর হক ব্যাপারীর লোকজন তাঁদের বাধা দেন। এ সময় ‘নৌকা নৌকা’ বলে মিছিলে অতর্কিত কয়েকটি হাতবোমা নিক্ষেপ করা হয়। দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় একটি মাইকও ভাঙচুর করা হয়। এতে লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান তোফাজ্জেল হোসেনসহ কমপক্ষে ১০ জন আহত হন। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে পাঁচজনকে আটক করলেও দুজনকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছে।
স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, ‘নৌকার প্রার্থী আবদুস সোবহান গোলাপ ভোটারদের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি করতে লক্ষ্মীপুরে আমাদের মিছিলে বোমা হামলা করিয়েছেন। লক্ষ্মীপুরে এর আগেও ফজলুর হক ব্যাপারী এ ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করেছেন। পুলিশকে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বারবার বলা হলেও পুলিশ নেয়নি। ওই সন্ত্রাসীর (ফজলুর হক) নির্দেশনায় আবারও বোমা হামলা হলো। বিকেলে মিছিলে বোমা হামলার পর রাতে আবার আমাদের সমর্থকদের বাড়িতে হামলা হয়েছে। এসবের নেতৃত্ব দিচ্ছে ফজলু।’
পুলিশের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করে তাহমিনা বেগম বলেন, ‘অভিযোগ দেওয়ার পরও পুলিশ মূল অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করছে না। আসামিরা নৌকার প্রচারণা চালাচ্ছে। যারা বোমা হামলার ঘটনার সঙ্গে জড়িত, তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে হবে। নয়তো নির্বাচনে এই এলাকায় সহিংসতা কমবে না।’
মামলার বাদী কাজী মোফাজ্জেল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমাদের মিছিলে পরিকল্পিতভাবে বোমা হামলা করা হয়েছে। হামলার মূল পরিকল্পনাকারী ফজলুর হক ব্যাপারীসহ ৫৭ জনকে আসামি করে এজাহার দিলেও পুলিশ মূল অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে অনীহা দেখাচ্ছে।’
আসামি ফজলুর হক ব্যাপারী লক্ষ্মীপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান। তাঁর স্ত্রী মৌসুমী হক এই ইউপির বর্তমান চেয়ারম্যান। অভিযোগের বিষয়ে ফজলুর হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘ঈগলের লোকজন আমাদের লক্ষ্য করে বোমা মারেন। এতে আমাদের লোকজন আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে। আমরাও থানায় লিখিত অভিযোগ দেব। তাঁরা অপরাধ করে আমার দিকে দোষ দিচ্ছেন। আমরা শান্তিপূর্ণভাবে নৌকার প্রচারণায় আছি।’
ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী তাহমিনা বেগম কালকিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংরক্ষিত নারী আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য। অন্যদিকে আবদুস সোবহান আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক। তিনি একাদশ সংসদ নির্বাচনে মাদারীপুর-৩ আসনে প্রথমবার সংসদ সদস্য হন।