মেহেন্দীগঞ্জে আ.লীগের দ্বন্দ্ব

হাসপাতালে ঢুকে মারধর, ৬ নেতা-কর্মী আহত

বরিশালের শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ছাত্রলীগ-যু্বলীগের নেতা-কর্মীদের দেখতে যান বরিশাল জেলা যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুনসুর আহমেদ। রোববার রাত আটটায়
ছবি: প্রথম আলো

বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের বিবদমান একটি পক্ষ আরেক পক্ষকে হাসপাতালে জরুরি বিভাগে ঢুকে মারধর করেছে। এ সময় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের ছয়জন নেতা-কর্মীকে কুপিয়ে আহত করা হয়েছে। আহত নেতা–কর্মীদের মধ্যে চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশালে পাঠানো হয়েছে।

আজ রোববার দুপুরে এই হামলার ঘটনা ঘটে। মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও শহরের বিভিন্ন এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। শহরে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

আহত ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, দুপুর ১২টার দিকে ঘোষপট্টি এলাকা থেকে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র কামাল খানের ছেলে খান মো. রিয়াদের সহযোগী রিমন হোসেনকে প্রতিপক্ষ পৌর কাউন্সিলর ও উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক এস এম সোহেল খানের লোকজন ধরে নিয়ে যায়।

এ সময় রিমনকে সোহেল খানের ঘোষপট্টির বাসায় নিয়ে নির্যাতন করা হয়। বেলা দেড়টার দিকে ছেড়ে দিলে রিমন আহত অবস্থায় সেখান থেকে বের হয়ে মুঠোফোনে বিষয়টি তাঁর বন্ধুদের জানান। পরে শহরের ফেন্সিস্টোর মোড় থেকে রিমনকে উদ্ধার করে তাঁর বন্ধুরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার জন্য নিয়ে যান।

খবর পেয়ে কাউন্সিলর সোহেল খানের নেতৃত্বে ১৫-২০ জন ধারালো অস্ত্র নিয়ে হাসপাতালে যান এবং জরুরি বিভাগে ঢুকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে ছয়জনকে আহত করেন। আহত ব্যক্তিরা হলেন জিহাদ হোসেন (১৯), আবদুল্লাহ (২২), ইমরান খান (২২), নোমান সরদার (২১), এস এম মামুন (২৬) ও রিমন হোসেন (২৩)। এর মধ্যে মামুন উপজেলা যুবলীগের তথ্যবিষয়ক সম্পাদক। বাকিরা হলেন উপজেলা ছাত্রলীগের কর্মী।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হাসপাতালের জরুরি বিভাগে ঢুকে হামলার সময় সেখানে চিকিৎসা দিচ্ছিলেন একজন নারী চিকিৎসক। হামলার ঘটনা এবং আহত ব্যক্তিদের বেধড়ক মারধর ও কুপিয়ে জখম করার ঘটনা দেখে অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। এ সময় হাসপাতালের অন্যান্য কর্মী ওই চিকিৎসককে উদ্ধার করে নিরাপদে নিয়ে যান।
মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌর মেয়র কামাল খান প্রথম আলোকে বলেন, কাউন্সিলর সোহেল খানের নেতৃত্বে এই হামলা হয়েছে। হামলার সময় জরুরি বিভাগের মেঝে, দেয়াল রক্তে রঞ্জিত হয়েছে। আহত ব্যক্তিরা সবাই ছাত্রলীগ ও যুবলীগের নেতা–কর্মী। কাউন্সিলর সোহেল স্থানীয় সংসদ সদস্য পংকজ দেবনাথের অনুসারী বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে সোহেল মোল্লা বলেন, ‘স্থানীয় সংসদ সদস্যের কর্মসূচি অনুযায়ী জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে রোববার দুপুরে আমার বাড়ির পাশে দোয়া ও ভোজের আয়োজন করি। দুপুর সাড়ে ১২টায় অনুষ্ঠান শেষ হওয়ার পর ছাত্রদলের একটি ছেলে দোয়া অনুষ্ঠান ও সংসদ সদস্যের ছবিসংবলিত ব্যানার ছিঁড়ে ফেলছিল। এটা দেখে আমাদের দলীয় কয়েকজন কর্মী তাঁকে ধরে ফেলেন। এরপর আমি গিয়ে ছেলেটিকে রক্ষা করে আমার বাসায় নিয়ে যাই। আধা ঘণ্টা পরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ছেলেটিকে তার বাসায় পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করি। এরপর আমি আবার বাইরে গেলে খবর পাই আমার বাড়ি ভাঙচুর হচ্ছে। আমি বাড়িতে ফিরে এসে স্থানীয় লোকজনকে নিয়ে সন্ত্রাসীদের ধাওয়া দিলে তাঁরা পাশেই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আশ্রয় নেয়। আমরাও সেখানে যাই এবং সেখানে সামান্য ধস্তাধস্তি হয়। এর বেশি কিছু নয়। তবে ওখানে যাঁরা ছিলেন, তাঁরা সবাই ছাত্রদলের লোক।’

মেহেন্দীগঞ্জে আওয়ামী লীগে দীর্ঘদিন ধরে দুটি পক্ষের দ্বন্দ্ব চলছে। এ নিয়ে প্রায়ই পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষ হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন নিয়ে কয়েকটি খুনের ঘটনাও ঘটে। এর মধ্যে একটি পক্ষে আছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মইদুল ইসলাম, সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র কামাল খান। এই পক্ষ বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সমর্থনপুষ্ট। অপর পক্ষে আছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক পংকজ দেবনাথ। পৌর কাউন্সিলর সোহেল খান সংসদ সদস্যের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

জানতে চাইলে মেহেন্দীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম সন্ধ্যায় বলেন, ছাত্রলীগ কর্মী রিমনকে ধরে নিয়ে সংসদ সদস্যের অনুসারী কাউন্সিলর সোহেল মোল্লা মারধর করেন। এরপর রিমনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে চিকিৎসা দিতে নিয়ে গেলে সেখানেও সোহেল মোল্লার নেতৃত্বে হামলা-ভাঙচুর চারানো হয়েছে। তবে পুলিশ যাওয়ার আগেই হামলাকারীরা ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যায়। দোষী ব্যক্তিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। শহরে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তবে এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি।