বগুড়ায় এক সপ্তাহের ব্যবধানে মুরগির ডিমের দাম খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে প্রতি হালিতে ৯ থেকে ১২ টাকা বেড়েছে। এ ছাড়া হাঁসের ডিমের দাম হালিতে বেড়েছে ১৫ টাকা। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে পরিবহন খরচ বেড়ে গেছে—এই অজুহাতে ডিমের দাম এক লাফে এতটা বাড়ানো হয়েছে।
‘গরিবের প্রোটিন’ হিসেবে পরিচিত মুরগির ডিম এক সপ্তাহ আগে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি হালি ৩৬ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ৩৮ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এখন সেই ডিম পাইকারি পর্যায়ে প্রতি হালি ৪৫ টাকা এবং মহল্লার মুদিদোকানে খুচরা পর্যায়ে ৪৮ টাকা হালি দরে বিক্রি হচ্ছে। ৪৫ টাকা হালি দরের হাঁসের ডিম খুচরা পর্যায়ে বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে।
বৃহস্পতিবার ডিমের পাইকারি বাজার বগুড়া শহরের রাজাবাজার (রেললাইন বাজার) এবং মহল্লার মুদিদোকান ঘুরে এসব চিত্র পাওয়া গেছে।
রাজাবাজারে রয়েছে ডিমের ছয়-সাতটি আড়ত। আজ পাইকারি এ বাজারে লেয়ার মুরগির ডিম প্রতি হালি ৪৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি সাদা কক মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি হালি ৪৪ টাকা দরে।
অন্যদিকে শহরের মুদিদোকানগুলোতে লেয়ার মুরগির ডিম প্রতিহালি ৪৮ টাকা, সাদা ডিম ৪৪ টাকা এবং হাঁসের ডিম ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
শহরের আলতাফুন্নেছা খেলার মাঠের পাশে একটি পাইকারি আড়ত থেকে নিয়মিত ডিম কেনেন গৃহবধূ সেলিনা সুলতানা। গত শুক্রবার তিনি প্রতি হালি ডিম কিনেছেন ৩৮ টাকা দরে। সপ্তাহের মাথায় বৃহস্পতিবার একই আড়তে ডিম কিনতে গেলে দাম চাওয়া হয় প্রতি হালি ৪৫ টাকা।
ক্ষুব্ধ এই গৃহবধূ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তেলের দাম বাড়ার পর নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন লেগেছে। সবজি থেকে শুরু করে চাল, ডাল, মসলা, সয়াবিন, মাছ, মাংস—সব জিনিসের দাম ঊর্ধ্বমুখী। আগে ১০ হাজার টাকায় সংসারের মাসের খরচ চলে যেত। এখন ১৫ হাজার টাকায় হিমশিম খেতে হচ্ছে।’
সেউজগাড়ি এলাকার ক্রেতা আয়েশা সিদ্দিকা এক সপ্তাহ আগে এক হালি হাঁসের ডিম কিনেছেন ৪৫ টাকা হালি দরে। বৃহস্পতিবার দোকানে গিয়ে দেখেন, সেই ডিম এক লাফে হালিতে ১৫ টাকা বেড়ে এখন ৬০ টাকা।
দাম বাড়লেও লাভ বাড়েনি বলে উল্লেখ করেছেন ডিম ব্যবসায়ী ফরিদুল ইসলাম। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর পরিবহন খরচ বেড়েছে। এ কারণে ডিমের দাম বেড়েছে। আগে প্রতি হালি ডিমে দু-তিন টাকা লাভ করতাম, এখনো তা–ই করছি।’
কাঁচা মরিচে ঝাল বেড়েছে
বগুড়ার খুচরা ও পাইকারি বাজারে কাঁচা মরিচের দাম আরও বেড়েছে। গত সপ্তাহে শহরের রাজাবাজারে পাইকারি পর্যায়ে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এক হাত বদলের পর শহরের ফতেহ আলী কাঁচা বাজারে খুচরা পর্যায়ে এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ২২০ টাকা দরে। বৃহস্পতিবার পাইকারি পর্যায়ে এক কেজি কাঁচা মরিচ ২৪০ টাকা এবং খুচরা পর্যায়ে ২৮০ থেকে ৩০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে।
জানতে চাইলে পাইকারি বিক্রেতা রাজা মিঞা বলেন, কৃষকের মরিচখেত নষ্ট হয়েছে। মোকামে টাকা দিয়েও কাঁচা মরিচ মিলছে না।
ফতেহ আলী বাজারে কাঁচা মরিচ কিনতে এসেছিলেন শহরের ঠনঠনিয়াএলাকার সাজেদুল ইসলাম। তিনি বলেন, কিছুদিন আগেও এক কেজি কাঁচা মরিচ মিলেছে ৪০ টাকায়। এখন দাম বেড়ে ৩০০ টাকা হয়েছে।
রাজাবাজার ব্যবসায়ী মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আমদানিকারক পরিমল প্রসাদ প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের দাম ঊর্ধ্বমুখী হওয়ায় ভারত থেকে কাঁচা মরিচ আমদানিতে প্রতি কেজিতে খরচ পড়ছে ১০০ টাকার বেশি। এর সঙ্গে অন্যান্য খরচ যোগ করে ২২৫ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ বিক্রি করতে হচ্ছে।
মসলার বাজারেও উত্তাপ
সপ্তাহের ব্যবধানে জিরা, এলাচি, দারুচিনি, লবঙ্গ, মেথিসহ সব ধরনের মসলার দাম প্রতি কেজিতে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা বেড়েছে। রাজাবাজারের পাইকারি মসলার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুচরা ও পাইকারি পর্যায়ে প্রায় সব ধরনের গরম মসলার দাম গত সপ্তাহের তুলনায় বেশি চাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। মসলার সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। তবু আমদানি খরচ বেশি হচ্ছে—এমন অজুহাত তুলে দাম বাড়িয়েছেন ব্যবসায়ীরা।
রাজাবাজারে পাইকারি পর্যায়ে বর্তমানে জিরা প্রতি কেজি ৬৭০, সাদা এলাচি প্রতি কেজি ১ হাজার ৬০০, কালো এলাচি ১ হাজার, মৌরি প্রতিকেজি ২৩০, মেথি প্রতি কেজি ১৬০, কাজুবাদাম ১ হাজার ৩০০ ও কাঠবাদাম ১ হাজার ১০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সপ্তাহখানেক আগে একই বাজারে জিরা প্রতি কেজি ৩৬০, সাদা এলাচি ১ হাজার ৩০০, কালো এলাচি ৯০০, মৌরি ১৬০, মেথি ৯০, কাজুবাদাম ১ হাজার, কাঠবাদাম ৯০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। কেজিতে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম বেড়েছে দারুচিনি, সাদা গোলমরিচ, কালো গোলমরিচসহ সব ধরনের মসলায়।
মসলার আমদানিকারক রাজভান্ডারের মালিক ও রাজাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক পরিমল প্রসাদ প্রথম আলোকে বলেন, ডলারের দাম অস্থিতিশীল, টাকা দিয়েও ডলার মিলছে না। এতে আমদানিতে বেশি খরচ পড়ছে। এর ওপর আবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন খরচও বেড়েছে। সব মিলিয়ে মসলার বাজারে বেশ ‘গরম’।