চট্টগ্রাম নগরের বলিরহাট এলাকায় বিস্ফোরণে দুই পরিবারের আট সদস্য আহত হয়েছেন। গতকাল বুধবার রাত তিনটায় বলিরহাটের আবদুর রউফ সড়কের মো. ইদ্রিসের বাড়িতে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘরের সেপটিক ট্যাংক থেকে এ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে বলে ধারণা করছেন ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা।
তবে এলাকাবাসী দাবি করছেন, বাড়ির সেপটিক ট্যাংকের পাইপ নালার সঙ্গে যুক্ত। আবার রাস্তার পাশের নালার ভেতর দিয়ে গ্যাসলাইন রয়েছে। সে লাইনে লিকেজ রয়েছে। সেখান থেকে গ্যাস বের হয়ে তা সেপটিক ট্যাংকের ভেতর জমতে জমতে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। তবে যে বাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে, সেখানে কর্ণফুলী গ্যাস বিতরণ কোম্পানি লিমিটেডের (কেজিডিসিএল) কোনো গ্যাস–সংযোগ নেই। আর নালার ভেতর দিয়ে যাওয়া গ্যাসলাইন লিকেজ হয়ে সেপটিক ট্যাংকে জমা হওয়ার কোনো সুযোগ নেই বলে দাবি করেছেন কেজিডিসিএলের কর্মকর্তারা।
বিস্ফোরণের ঘটনায় আহত ব্যক্তিরা হলেন মো. ইদ্রিসের স্ত্রী মায়মুনা আক্তার (৫৫), তাঁর পুত্রবধূ সোমা আক্তার (২৫), তাঁর মেয়ে ডলি আক্তার ও ডলি আক্তারের ছেলে জাহিদুল ইসলাম (১০)। মায়মুনা আক্তারের প্রতিবেশী নূর নাহার বেগম, তাঁর দুই মেয়ে সানজিদা আক্তার ও রিনা আক্তার, ছেলে মো. হৃদয়। তাঁরা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে বর্তমানে প্রতিবেশীদের বাসায় আছেন।
চট্টগ্রাম নগরের কালুরঘাট ফায়ার স্টেশনের জ্যেষ্ঠ স্টেশন কর্মকর্তা মো. বাহার উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, সেপটিক ট্যাংকের বিস্ফোরণ থেকে এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তবে স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে তাঁরা জেনেছেন, এলাকার নালার ভেতর দিয়ে গ্যাসের লাইন রয়েছে। ওই লাইনে লিকেজ রয়েছে। আবার বাড়িগুলোর সেপটিক ট্যাংকের পাইপের লাইন নালার সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। ফলে লিকেজ হওয়া গ্যাস পাইপের মাধ্যমে সেপটিক ট্যাংকে জমা হয়েছে। রাতের বেলায় কেউ বৈদ্যুতিক সুইচ চাপলে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। তবে বিস্ফোরণের সুনির্দিষ্ট কারণ তদন্তের পর জানা যাবে।
কেজিডিসিএলের মহাব্যবস্থাপক শফিউল আজম প্রথম আলোকে বলেন, বিস্ফোরণের ঘটনার তাঁদের কর্মকর্তা-প্রকৌশলীরা ঘটনাস্থলে গেছেন। তাঁরা যাচাই-বাছাই করে দেখেছেন, এটি সেপটিক ট্যাংকের বিস্ফোরণ। কেননা, ওই বাড়িতে কোনো গ্যাস–সংযোগ নেই। আর নালার ভেতর দিয়ে যাওয়া গ্যাস লাইন লিকেজ হলেও তা তো বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে যাবে না।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে দেখা গেছে, বিস্ফোরণে মো. ইদ্রিসের একতলার বাড়ির দুই পাশের দেয়াল ধসে পড়েছে। যেসব দেয়াল পড়ে যায়নি, তাতে ফাটল ধরেছে। দরজা-জানালা ভেঙে পড়েছে। ঘরের জিনিসপত্র লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। একপাশের দেয়াল ধসে পড়েছে পাশের নূরনাহার বেগমের বেড়ার ঘরে। বিস্ফোরণের পর থেকে সেখানে শত শত মানুষ ভিড় করেছে।
বিস্ফোরণে আহত মো. ইদ্রিসের মেয়ে ডলি আক্তার বলেন, ছেলেকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে এসেছিলেন। যখন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে, তখন তাঁরা ঘুমে ছিলেন। বিকট শব্দে জেগে ওঠেন তাঁরা। তখন দেখতে পান, ঘরে আগুন ধরে গেছে। দুই পাশের দেয়াল নেই। আগুনে তাঁর হাত পুড়ে গেছে। ছেলে, মা ও ভাবির শরীরের বিভিন্ন অংশ পুড়ে গেছে। তাঁদের আর্তচিৎকারে বাড়ির পাশের লোকজন ছুটে এসে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যান।
দেয়ালচাপায় আহত নূরনাহার বেগম চিকিৎসা নিয়ে আসার পর এক প্রতিবেশীর বাসায় আছেন। তিনি বলেন, তিনি ছেলেমেয়েকে নিয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। হঠাৎ বিকট আওয়াজের পর পাশের ঘরের দেয়াল তাঁর ঘরের ওপর এসে পড়ে। এতে তাঁরা চাপা পড়েছিলেন। পরে প্রতিবেশীরা এসে তাঁদের টেনে বের করে হাসপাতালে নিয়ে যান।