বন্যার পানিতে নিমজ্জিত অনেক এলাকা, কিছু ভোটকেন্দ্রেও পানি। হাতে গোনা কিছু ভোটার এলেন, তা–ও নৌকায় চড়ে। আগের তিন ধাপে তেমন কোনো সমস্যা না হলেও চতুর্থ ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটে দিতে এসে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে সিলেটের জকিগঞ্জ ও কানাইঘাটের ভোটারদের।
এই দুই উপজেলার বাসিন্দারা বন্যায় আক্রান্ত। একটি ভোটকেন্দ্রে তিনটি পরিবারকে আশ্রয় নিতেও দেখা গেছে। আজ বুধবার এই দুই উপজেলার ৯টি ভোটকেন্দ্র ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে।
সিলেট জেলা প্রশাসনের তথ্য বলছে, জেলায় বন্যায় আক্রান্তের সংখ্যা ৬ লাখ ৫৮ হাজার ৬৬২ জন। এর মধ্যে দুটি উপজেলায় আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ ৩৬ হাজার ৭৫৭ জন।
জকিগঞ্জের পানিবন্দী কেন্দ্র বারহাল ইউনিয়নের নিদনপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে বুধবার সকাল সাড়ে ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত অবস্থান করে দেখা গেছে, কেন্দ্রটির চারদিকে পানি। কেন্দ্রের মধ্যে ভোট দেওয়ার বুথ রয়েছে ১০টি। এর মধ্যে তিনটি বুথ পানিতে তলিয়ে গেছে। কেন্দ্রটির মাঠেও হাঁটুপানি। কেন্দ্রের সামনে নৌকায় করে ভোট দিতে আসছেন ভোটাররা।
ওই কেন্দ্রে নারীদের জন্য বরাদ্দ ৫ নম্বর ভোটকক্ষে ভোটার ছিলেন ১৩৯ জন। দুপুর ১২টা পর্যন্ত ওই কক্ষে কোনো ভোট পড়েনি। ওই কেন্দ্রে বন্যার কারণে আশ্রয় নিয়েছিলেন তিন পরিবারের বাসিন্দারা। তাঁরা জানিয়েছেন, চার দিন ধরে তাঁরা ওই ভোটকেন্দ্রে অবস্থান করলেও কেউ কোনো সহযোগিতা করেননি।
কেন্দ্রটির একটি কক্ষে আশ্রয় নেওয়া মনতল গ্রামের বাসিন্দা মোক্তার আলী (৫৬) বলেন, বাড়িতে হাঁটুপানি। চার দিন ধরে বিদ্যালয়টিতে পরিবারের ৮ সদস্যকে নিয়ে অবস্থান করছেন। কেউ তাদের সহযোগিতা করেননি। ২০২২ সালের বন্যায় বাড়িঘরের বেড়া ভেঙে গিয়েছিল। এবারও একই পরিণতির দিকে যাচ্ছে।
ভোটকেন্দ্রটির প্রিসাইডিং কর্মকর্তা এ কে এম নাঈম বলেন, ভোটকেন্দ্রে বন্যার কারণে তিনটি পরিবার আশ্রয় নিয়েছিল। তারা কেন্দ্রের অব্যবহৃত একটি কক্ষে অবস্থান করছে। যার ফলে ভোটে কোনো প্রভাব পড়ছে না। মানবিক কারণে তাদের সেখানে থাকতে দেওয়া হচ্ছে। পানি বাড়ায় ভোটার উপস্থিতি কম হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দুপুর ১২টা পর্যন্ত কেন্দ্রে ৬ শতাংশ ভোট পড়েছে।
ভোটকেন্দ্রের বাইরে একটি নৌকায় দেখা হয় নিদনপুর গ্রামের বাসিন্দা আবদুর রহিমের (৪৫) সঙ্গে। দুপুর ১২টা পর্যন্ত তিনি ভোট দেননি জানিয়ে বলেন, চরখাই বাজারে তাঁর ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। জরুরি কাজে সেখানে যেতে হচ্ছে। কাজ থেকে ফিরে ভোট দিতে যাবেন। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এলাকায় পানি উঠেছে। কিন্তু এখনো কেউ সহযোগিতা পেয়েছেন বলে শোনেননি। সবাই নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত।
ওই কেন্দ্র ছাড়াও উপজেলার মহিদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠও ছিল জলাবদ্ধ। কেন্দ্রের চারদিকে পানি থাকায় নৌকায় অথবা পানি ডিঙিয়ে ভোটারদের ভোটকেন্দ্রে যাতায়াত করতে হয়েছে। এতে কেন্দ্রটিতে ভোটার উপস্থিতি কম লক্ষ্য করা গেছে।
এদিকে কানাইঘাট উপজেলায় সড়কের বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মহিলা ভোটকেন্দ্রে পানি মাড়িয়ে চলাচল করত দেখা গেছে ভোটারদের। কেন্দ্রের ২ হাজার ২৯০টি ভোটের মধ্যে বেলা দুইটা পর্যন্ত ৩৯০ ভোট পড়েছে বলে জানিয়েছেন প্রিসাইডিং কর্মকর্তা।