রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় পোষ্য কোটা পুনর্বহালের দাবিতে দ্বিতীয় দিনের মতো কর্মসূচি পালন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। আজ মঙ্গলবার বেলা ১১টা থেকে ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সৈয়দ নজরুল ইসলাম প্রশাসন ভবনের পাশে লিচু চত্বরে ‘অবস্থান ধর্মঘট’ পালন করেন তাঁরা।
কর্মসূচিতে বক্তারা বলেন, পোষ্য কোটা কোনো কোটা নয়, এটা তাঁদের প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার। তাঁদের সন্তানেরা সব শর্ত মেনেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। তাঁরা ১ শতাংশ নয়, ৫ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার বহাল চান। তাঁদের অধিকার আদায় না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। অধিকার আদায় না হলে বিশ্ববিদ্যালয় অচল করে দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুষদের কর্মচারী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা আমাদের শত্রু নয়। তারা আমাদের সন্তান, আমাদের ভাই। সেদিন (প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তাদের অবরুদ্ধ) তারা যে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছে, ওই দিন আমরা ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছি। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনামকে আমরা ধরে রাখতে চাই। তার মানে এই নয় যে আমাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে আমরা বসে থাকব। আমাদের অধিকার থেকে আমরা পিছপা হব না। আমরা ১ শতাংশ নয়, ৫ শতাংশই বহাল চাই। এটা কোনো কোটা নয়, এটা আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার। এই সুবিধা ব্যাংক, রেল, বিমান, বিদ্যুৎসহ সব জায়গায় আছে। আমাদেরও অধিকার ফিরিয়ে দিতে হবে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতির সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) মুক্তার হোসেন বলেন, ‘যাঁরা বলছেন, কোটার কবর দিতে পারলে কোটামুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় হবে। আমরাও তাঁদের সঙ্গে একমত। বাংলদেশের সকল স্বায়ত্তশাসিত, সরকারি প্রতিষ্ঠানে যদি প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার থাকে, তবে আমরা কেন বঞ্চিত হব? আমরাও আমাদের প্রাতিষ্ঠানিক অধিকার ফেরত চাই। যত দিন না আমাদের অধিকার প্রতিষ্ঠিত হবে, তত দিন পর্যন্ত আমরা আন্দোলন চালিয়ে যাব।’
কর্মসূচিটি সঞ্চালনা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসার সমিতির দপ্তর সম্পাদক রিয়াজ উদ্দিন। এ সময় তিন শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাগ্রোনমি অ্যান্ড অ্যাগ্রিকালচারাল এক্সটেনশন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার জাকিরুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৭৭ সাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাদের এই অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা একটা মীমাংসিত বিষয়। এটা বন্ধ করার এখতিয়ার উপাচার্য রাখেন না। আমরা চাই না, গুটিকয়েক শিক্ষার্থীর কারণে হাজার হাজার শিক্ষার্থী ক্ষতিগ্রস্ত ও বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হোক। আজ এখানে আমাদের এক হাজার মানুষ দেখছেন, কাল দু-তিন হাজার মানুষ দেখবেন। আমাদের পিওনরা গেট-দরজা খুলবেন না, ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ হবে। আমরা কোনো অফিসে বসব না, দেখি আপনারা কাদের দিয়ে কাজ করান।’
গত বুধবার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষক ও কর্মকর্তার সন্তানদের জন্য বরাদ্দ পোষ্য কোটা পুরোপুরি বাতিল করে শুধু সহায়ক ও সাধারণ কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ কোটা রাখার সিদ্ধান্ত নেয় প্রশাসন। কিন্তু এতে অসন্তোষ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা। পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিলের দাবিতে পরদিন সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
এতে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন বিশ্ববিদ্যালয়ের দুজন সহ–উপাচার্য, প্রক্টর, জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসকসহ দুই শতাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী। প্রায় ১২ ঘণ্টা অবরুদ্ধ থাকার পর তাঁরা মুক্ত হন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ওই দিন রাতে পোষ্য কোটা সম্পূর্ণ বাতিল ঘোষণা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সালেহ্ হাসান নকীব। এ সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আজ প্রশাসন ভবনের পাশে দুই ঘণ্টা অবস্থান ধর্মঘট করলেন তাঁরা।