বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র হত্যা

১ বছরেও পূরণ হয়নি ৩ দাবি

বুলবুলের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি করা হলেও মাত্র ৫ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে।

বুলবুল আহমেদ
বুলবুল আহমেদ

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছুরিকাঘাতে নিহত শিক্ষার্থী মো. বুলবুল আহমেদ হত্যাকাণ্ডের এক বছর পার হয়ে গেল গতকাল মঙ্গলবার। হত্যা মামলাটি এখন বিচারাধীন। ঘটনার পর সাধারণ শিক্ষার্থীরা চার দফা দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন। তবে বছর পেরিয়ে গেলেও তিনটি দাবি পূরণ হয়নি।

শিক্ষার্থীরা বলেন, গত বছরের ২৫ জুলাই সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাশে গাজী-কালু টিলা-লাগোয়া ‘নিউজিল্যান্ড’ এলাকায় ছিনতাইকারীরা বুলবুলকে ছুরি দিয়ে আঘাত করে। পরে তাঁকে সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে রাত পৌনে আটটার দিকে চিকিৎসকেরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। এ ঘটনায় রাতেই সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হোসেন।

থানা-পুলিশ সূত্র জানায়, এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে তিন ছিনতাইকারীকে চিহ্নিত করে পুলিশ। এ তিনজনকেই মামলায় আসামি করা হয়।

নিহত বুলবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। বুলবুলের মৃত্যুর সংবাদ পাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা রাতেই ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন। তাঁরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে প্রতিবাদ জানান। পরে কর্তৃপক্ষ দোষী ব্যক্তিদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও ক্যাম্পাসে নিরাপত্তা বাড়ানোর আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা অবরোধ থেকে সরে আসেন।

পরদিন সাধারণ শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে চার দফা দাবি উত্থাপন করেন। দাবিগুলো হচ্ছে বুলবুল হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের দ্রুত সময়ের মধ্যে সর্বোচ্চ শাস্তি কার্যকর করতে প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ানো, নিহত বুলবুলের পরিবারকে দ্রুত ক্ষতিপূরণ হিসেবে এককালীন ৫০ লাখ টাকা ও আগামী ১২ বছর প্রতি মাসে ৫০ হাজার টাকা প্রদান, ক্যাম্পাসে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং বুলবুল হত্যার স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ ও ২৫ জুলাইকে বুলবুল হত্যা দিবস ঘোষণা করা। এর মধ্যে ক্যাম্পাসে নিরাপত্তার জন্য ক্লোজড সার্কিট (সিসিটিভি) ক্যামেরা সচল ও সংখ্যা বৃদ্ধি করা; অনিরাপদ ও অন্ধকারাচ্ছন্ন স্থানে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা; টিলা এলাকায় নিরাপত্তা প্রহরী বাড়ানো এবং প্রাচীর এলাকায় কাঁটাতারের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সে সময় তাঁদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছিল। বুলবুলের পরিবারকে ৫০ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার দাবি তুললেও সে সময় কর্তৃপক্ষ সহায়তা হিসেবে দিয়েছিল ৫ লাখ টাকা। বুলবুলের স্মৃতি রক্ষার্থে কর্তৃপক্ষ উদ্যোগ নেয়নি। তবে ঘটনার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় সিসিটিভি ক্যামেরা বসানোর পাশাপাশি সন্ধ্যার পর পর্যাপ্ত আলো নিশ্চিতে বৈদ্যুতিক খুঁটি স্থাপন করা হয়েছিল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি সংগঠনের সমন্বয়ে গঠিত সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আহ্বায়ক শাহরিয়া আফরিন বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত তাঁদের তিনটি দাবি পূরণ করেনি। এটি একেবারেই হতাশাজনক।

প্রক্টর মো. কামরুজ্জামান চৌধুরী বলেন, সরকারের কাছ থেকে টাকা পাওয়া গেলে বুলবুলের পরিবারকে টাকা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। সে অনুযায়ী শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। ক্যাম্পাসে সড়কবাতি স্থাপন, সিসিটিভি সাঁটানোসহ পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা বাড়ানো হয়েছে।

সিলেট মহানগরের জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল আলম বলেন, মামলার অভিযোগপত্র পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে আদালতে জমা দিয়েছে। বর্তমানে মামলাটি বিচারাধীন।

বুলবুলের বাড়ি নরসিংদী সদরের চিনিশপুরম নন্দীপাড়া গ্রামে। তাঁর বড় বোন সোহাগী আক্তার গতকাল বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জানান, তাঁর ভাইয়ের মৃত্যুর এক বছর পূর্তিতে গত সোমবার নরসিংদী সদরের ভেলানগরের বাসায় পরিবারের সদস্যরা মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছিল। গতকাল মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে পরিবারের সদস্যরা বুলবুলের কবর জিয়ারত করেন।