জেলার রাজনীতি  ২৯

কক্সবাজারে আন্দোলনে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি, আওয়ামী লীগে অসন্তোষ

চারটি সংসদীয় আসনে বর্তমান দলীয় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা মাঠে নেমেছেন।

কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগ চলছে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনায়। সম্মেলন হওয়ার দীর্ঘ ১১ মাসেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি হয়নি। এ নিয়ে রয়েছে অসন্তোষ। জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে জেলার চারটি সংসদীয় আসনের প্রতিটিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ইতিমধ্যে দলের একাধিক নেতা মাঠে নেমেছেন। ফলে দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়েছে।

অন্যদিকে জেলা বিএনপির সম্মেলন হচ্ছে না এক যুগের বেশি সময় ধরে। তাতে দলীয় কোন্দল ও অসন্তোষ ছিল নেতা-কর্মীদের মধ্যে। তবে কয়েক মাস ধরে সরকার পতনের এক দফা আন্দোলন নিয়ে নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন।

আওয়ামী লীগে অসন্তোষ

দীর্ঘ সাত বছর পর জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন হয় ২০২২ সালের ১৩ ডিসেম্বর। সম্মেলনে ফরিদুল ইসলাম চৌধুরীকে সভাপতি ও মুজিবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করা হয়। এরপর এক মাসের মধ্যে পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠনের কথা বলা হলেও ১১ মাসেও তা হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের কয়েকজন নেতা বলেন, জেলার চারটি সংসদীয় আসনে বর্তমান দলীয় সংসদ সদস্যদের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে দলের একাধিক নেতা মাঠে নেমেছেন। তাঁরা প্রার্থী হওয়ার ঘোষণাও দিয়েছেন।

কক্সবাজার-৩ (সদর-রামু) আসনে সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছেন নয়জন। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান, কক্সবাজার পৌর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ নজিবুল ইসলাম, আইনজীবী মিজান সাঈদের সঙ্গে আছেন সংসদ সদস্যের দুই ভাই–বোনও।

কক্সবাজার-৪ (উখিয়া-টেকনাফ) আসনেও একই অবস্থা। এ আসনের সংসদ সদস্য শাহীন আকতারকে পাঁচ বছর দলের কোনো সভা–সমাবেশে দেখেননি নেতা-কর্মীরা। তাঁর সব কাজকর্ম সামলাচ্ছেন স্বামী ও একই আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আবদুর রহমান বদি। কয়েক মাস ধরে বদি দলের মনোনয়নের জন্য দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। তবে বদিকে ঠেকাতে ইতিমধ্যে মাঠে নেমেছেন দলের অন্তত আটজন নেতা।

কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য জাফর আলমের সঙ্গে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমানের বিরোধ দীর্ঘদিনের। জাফর আলম চকরিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। জাফর আলমের বিরুদ্ধে একই আসনে দলের একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে নেমেছেন। এর মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক সালাহ উদ্দিন আহমদ, সহসভাপতি ও চকরিয়া উপজেলার সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল করিম অন্যতম।

কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক সুবিধাজনক অবস্থানে থাকলেও দলের একটি পক্ষ তাঁর বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। মনোনয়ন–দৌড়ে আছেন কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক সিরাজুল মোস্তাফা, জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি ও কুতুবদিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, পরিবেশবিজ্ঞানী আনসারুল করিম।

জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেন্দ্র করে এখন যেসব আসনে দলীয় কোন্দল মাথাচাড়া দিয়ে উঠছে, প্রার্থী ঘোষণার পর তা আর থাকবে না বলে মন্তব্য করেন কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী। প্রথম আলোকে তিনি বলেন, প্রার্থীদের আমলনামা দলের সভাপতি শেখ হাসিনার হাতে। তিনি যাঁকে দলের প্রার্থী ঘোষণা করবেন, তাঁর পক্ষে সবাইকে মাঠে নামতে হবে।

বিরোধ ভুলে ঐক্যবদ্ধ বিএনপি

এক যুগের বেশি সময় ধরে সম্মেলন না হওয়ায় জেলা বিএনপিতে বিরোধ মাথাচাড়া দিয়েছিল। ২০১৭ সালের ২২ নভেম্বর সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শামীম আরার পদ ঠিক রেখে জেলা কমিটি পুনর্গঠন করা হয়। সভাপতি প্রার্থী ও কক্সবাজার–৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য লুৎফুর রহমানকে কেন্দ্রীয় মৎস্যবিষয়ক সম্পাদক করা হয়। এরপর বিভেদ ভুলে উভয় পক্ষ সরকারবিরোধী আন্দোলনে নামে। 

জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক ইউসূফ বদরী বলেন, আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৪ বছরের শাসনামলে বিএনপি ও এর সহযোগী সংগঠনগুলোর অন্তত সাত হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে শতাধিক মামলা হয়েছে। এর মধ্যে গত এক মাসে সাতটি মামলা হয়েছে। তবে নির্যাতন-নিপীড়ন সত্ত্বেও বিএনপির নেতা-কর্মীরা মাঠে আছেন। এ জন্য আগের বিভেদও ভুলে গেছেন তাঁরা। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে দলের কয়েকজন নেতা বলেন, ভারতে অবস্থানরত বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদের নিয়ন্ত্রণে চলছে জেলা বিএনপি। এ কারণে জেলা কমিটির সম্মেলন আটকে আছে। ২০১৫ সালের ১১ মে ভারতের মেঘালয় রাজ্যের শিলং থেকে সালাহ উদ্দিনকে আটক করে পুলিশ।

জেলা বিএনপির সভাপতি শাহজাহান চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘নির্বাচন নিয়ে আমরা ভাবছি না। আমরা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন দাবিতে এবং হাসিনা সরকার পতনের আন্দোলন নিয়ে মাঠে ব্যস্ত আছি। মাঠে থাকার কারণে দলের আগের কোন্দলও নেই। বিরোধ ভুলে বিএনপির নেতা-কর্মীরা একজোট হয়ে কেন্দ্রীয় সব কর্মসূচিতে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিচ্ছেন।’