টাঙ্গাইলের গোপালপুর

১০ একর জমি উদ্ধার করে সূর্যমুখী চাষ প্রশাসনের

গোপালপুরে বেদখল হওয়া ১০ একর জমি উদ্ধার করে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সূর্যমুখী চাষ
ছবি: প্রথম আলো

টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলায় গণপূর্ত বিভাগের বেদখল হওয়া ১০ একর জমি উদ্ধার করে সেখানে সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছে জেলা প্রশাসন। এখন বাগানজুড়ে ফুটেছে সূর্যমুখী। নয়নাভিরাম সেই বাগান দেখতে প্রতিদিন ভিড় করছেন বিভিন্ন এলাকার মানুষ।

এ বাগান থেকে ১০ টন সূর্যমুখী বীজ ফলনের আশা করছে কৃষি বিভাগ। সূর্যমুখীর চাষকে উৎসাহিত করতে এ বীজ টাঙ্গাইলের প্রতিটি উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিনা মূল্যে ছড়িয়ে দেওয়ার কথা বলেছেন জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার।

জেলা প্রশাসন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গোপালপুর পৌরসভার ভুয়ারপাড়া এলাকায় গণপূর্ত বিভাগে একটি ইটভাটা ছিল। সেটি ৭০ বছর আগে বন্ধ হয়ে যায়। পরে জমিটি পরিত্যক্ত থাকায় স্থানীয় ব্যক্তিরা বিভিন্নভাবে দখল করা শুরু করেন। কেউ কেউ ওই জমি থেকে মাটি কেটে অন্যত্র সরিয়ে ফেলেন। পরে প্রশাসনের উদ্যোগে জমিটি ১ নম্বর খাস খতিয়ানে আনা হয়। সম্প্রতি ওই ১০ একর জমির অবৈধ দখলদারদের উচ্ছেদ করে জমিটি উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’, সেই নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য সেখানে সূর্যমুখী চাষ করা হয়। উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় উপজেলা কৃষি বিভাগ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২৩০ হেক্টর জমিতে চলতি মৌসুমে ১২টি উপজেলায় সূর্যমুখী চাষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে ২৪২ হেক্টর জমিতে সূর্যমুখীর চাষ হয়েছে। উৎপাদনের সম্ভাব্য উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ৪৬৪ মেট্রিক টন।

গতকাল মঙ্গলবার গোপালপুরে ওই বাগানে গিয়ে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে সূর্যমুখীর সমারোহ। ১০ একর বাগানের চারপাশ বাঁশ ও নেট দিয়ে ঘিরে রাখা হয়েছে। মানুষ আসছেন বাগান দেখতে। সূর্যমুখী ফুলের সঙ্গে ছবি তুলছেন অনেকে। হেমনগর এলাকা থেকে আসা শামীম হোসেন জানান, ঢাকা থেকে তাঁদের স্বজনেরা এসেছেন, তাঁদের এই বাগান দেখাতে নিয়ে এসেছেন। এত বড় সূর্যমুখী বাগান দেখে তাঁরা অভিভূত। বাগানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আব্বাস আলী বলেন, ফুল ফোটার পর থেকেই প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকার মানুষ এ বাগান দেখতে আসছেন।

গোপালপুরের শহিদুল ইসলাম জানান, এখানে সূর্যমুখী চাষ করায় একদিকে তৈলবীজ উৎপাদিত হচ্ছে, অপর দিকে মানুষের বিনোদনের একটি জায়গায় পরিণত হয়েছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শামীমা আক্তার বলেন, ‘১০ একর জমিতে ৪০ কেজি সূর্যমুখীর বীজ ব্যবহার করা হয়েছে। উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সেচের ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমাদের দেশের আবহাওয়া সূর্যমুখী চাষের জন্য অনেক উপযোগী। দুই হাজার টাকা কেজি বীজ কিনে রোপণ করেছিলাম। আমরা আশা করছি, এখান থেকে প্রায় ১০ টন সূর্যমুখী বীজ উৎপাদিত হবে। এক মণ বীজ থেকে ১৭ থেকে ২০ কেজি তেল হয়। প্রতি কেজি সূর্যমুখী তেলের দাম ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা পর্যন্ত। সূর্যমুখীর উপকারিতা ও সয়াবিনের অপকারিতা সম্পর্কে মানুষকে অবগত করতে পারলেই সূর্যমুখী চাষ আরও বাড়বে।’

কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা জানান, দেশে এটি অন্যতম বৃহৎ সূর্যমুখী চাষ প্রকল্প। এ প্রকল্প দেখে অনেক মানুষ সূর্যমুখী চাষে উৎসাহিত হবেন। এতে তেল আমদানির নির্ভরতা অনেকটাই কমে আসবে। সূর্যমুখী চাষে খরচ কম। সে তুলনায় লাভ বেশি।
জেলা প্রশাসক জসীম উদ্দীন হায়দার বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত ‘এক ইঞ্চি জমিও যেন অনাবাদি না থাকে’, সেই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে সূর্যমুখী চাষ করা হয়েছে। বাগান থেকে যে পরিমাণ সূর্যমুখীর বীজ উৎপাদিত হবে, তা টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলাসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে বিনা মূল্যে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।