চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রাবাসের আসন বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ‘ছাত্রদলের নেতা-কর্মীদের’ হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ কর্মসূচি পালিত হয়েছে। আজ শুক্রবার বিকেলে নগরের ষোলশহর রেলস্টেশন এলাকায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, চট্টগ্রাম’–এর ব্যনারে এই কর্মসূচি পালন করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ষোলশহর স্টেশন চত্বরে বেলা সাড়ে তিনটায় প্রতিবাদ কর্মসূচি শুরু হয়। এ সময় বিক্ষোভকারীরা ছাত্রদলের বিরুদ্ধে নানা স্লোগান ও বক্তব্য দেন। তাঁদের ব্যানারে লেখা ছিল, ‘চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে সাধারণ ছাত্রদের ওপর ছাত্রদল সন্ত্রাসীদের হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল ও প্রতিবাদ সমাবেশ।’
কর্মসূচিতে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট ছাড়াও চট্টগ্রাম কলেজ, সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা অংশ নেন। সমাবেশ শেষে নগরের ২ নম্বর গেট থেকে শুলকবহর পর্যন্ত মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা।
সমাবেশের ভিডিও নিজের ফেসবুক অ্যাকাউন্টে প্রকাশ করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসমন্বয়ক খান তালাত মাহমুদ। ফেসবুকে সংহতি জানিয়ে পোস্ট দিয়েছেন সংগঠনের নির্বাহী কমিটির সদস্য মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ।
এ বিষয়ে মোহাম্মদ রাসেল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নাম ব্যবহার করে কর্মসূচি করার বিষয়টি তাঁরা আগে জানতেন না। কর্মসূচি শুরুর আগে কেউ তাঁর সঙ্গে আলোচনা করেননি। রাসেল বলেন, ‘পলিটেকনিট ইনস্টিটিউটে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি আমরা জেনেছি। আমরা ক্যাম্পাসে দখলদারত্ব চাই না। আধিপত্য বিস্তার নিয়ে রেষারেষির জেরে সংঘর্ষ চাই না। আমরা শিক্ষাবান্ধব ক্যাম্পাস চাই।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম কলেজের সমন্বয়ক ইবনে হোসাইন বলেন, ছাত্রাবাসের কক্ষ দখল নিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন। এ ঘটনার প্রতিবাদে তাঁরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন। ক্যাম্পাসে নির্দিষ্ট কোনো ছাত্রসংগঠনের আধিপত্য ছাত্র-জনতা মেনে নেবে না।
সরকারি হাজী মুহাম্মদ মহসিন কলেজ শাখার সমন্বয়ক এ জি এম বাপ্পি বলেন, ‘গত ১৫ বছর আওয়ামী লীগ দলীয় ট্যাগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের হয়রানি করেছে। এখন এ রকম পরিস্থিতি আমরা মেনে নেব না। কোনো ক্যাম্পাসে দখলদারত্ব ও হলের আসনবাণিজ্য মেনে নেওয়া হবে না।’ তিনি বলেন, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের ছাত্রাবাসে ন্যায্যতার ভিত্তিতে যাঁরা আসন বরাদ্দ পেয়েছেন, তাঁদের আবাসিক হলে ওঠার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। না হলে আন্দোলনে নামবেন শিক্ষার্থীরা।
উল্লেখ্য, ছাত্রাবাসের আসন বরাদ্দ নিয়ে শিক্ষার্থীদের একটি পক্ষের সঙ্গে গতকাল ছাত্রদলের নেতা- কর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে চারজন আহত হয়েছেন। তবে হামলার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন ছাত্রদলের পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শাখার আহ্বায়ক মোহাম্মদ হানিফ।
‘সাধারণ ছাত্রছাত্রীবৃন্দের’ ব্যানারে সংবাদ সম্মেলন
এদিকে সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বেলা সাড়ে তিনটায় সংবাদ সম্মেলন করেছেন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের একদল শিক্ষার্থী। নগরের কাজীর দেউড়ির মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। এতে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষার্থী নাহিদুল হাই সাজ্জাদ।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনো সমন্বয়ক ছিলেন না। বর্তমানে ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের কর্মীরা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে মিছিল ও সভা করছেন।
নাহিদুল হাই সাজ্জাদ প্রথম আলোকে বলেন, ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতি নিষিদ্ধ। কিন্তু ছাত্রশিবির আধিপত্য বিস্তার করেছে। ইতিমধ্যে শিবিরের নেতা-কর্মীরা ছাত্রাবাসের কক্ষ দখল করেছেন। ফলে নতুন করে আবার আসন বরাদ্দ দিতে হবে। আর ছাত্ররাজনীতি সম্পূর্ণভাবে বন্ধ করতে হবে। কারও আধিপত্য শিক্ষার্থীরা মেনে নেবেন না।
অবশ্য চট্টগ্রাম পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ছাত্রশিবিরের কোনো কমিটি নেই বলে জানিয়েছেন শিবিরের চট্টগ্রাম নগরের (উত্তর) সভাপতি ফখরুল ইসলাম। তিনি বলেন, ওখানে তাঁদের কোনো কার্যক্রম নেই। তাঁরা ছাত্রাবাসের কোনো কক্ষও দখল করেননি।