ময়মনসিংহের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে
ময়মনসিংহের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার দুপুরে

ভোট নিয়ে শঙ্কা ময়মনসিংহের ৫ মেয়রপ্রার্থীর ৪ জনেরই

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) এক প্রার্থীকে ভোট দিলে সেই ভোট চলে যাবে অন্য প্রার্থীর মার্কায়। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে সাধারণ ভোটারদের মধ্যে এমন আশঙ্কা আছে। মেয়র পদের পাঁচজন প্রার্থীর মধ্যে চারজনই একই আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন।

আজ বুধবার দুপুরে ময়মনসিংহের অ্যাডভোকেট তারেক স্মৃতি মিলনায়তনে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) মো. আলমগীরের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এমন শঙ্কার কথা জানান মেয়রপ্রার্থীরা। তবে এমন আশঙ্কা ভুল বলে জানান নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

আজ দুপুর সোয়া ১২টায় শুরু হয় মতবিনিময় সভা। সভা শুরু হওয়ার কিছুক্ষণ আগে থেকেই মিলনায়তনে আসেন মেয়রপ্রার্থী ইকরামুল হক, সাদেকুল হক খান, এহতেশামুল আলম, রেজাউল হক ও শহিদুল ইসলাম। শুরুতে স্বাগত বক্তব্য দেন ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা বেলায়েত হোসেন চৌধুরী। তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু করার জন্য প্রার্থীদের সহযোগিতা চান। পরে ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্টে নানা বিষয় তুলে ধরেন সহকারী রির্টানিং কর্মকর্তা সফিকুল ইসলাম। ময়মনসিংহ বিভাগীয় কমিশনার উম্মে সালমা তানজিয়ার সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর।

শুরুতে বক্তব্য দেন মেয়রপ্রার্থী ইকরামুল হক। তিনি বলেন, ‘ভোটাররা অনেকেই ইভিএম নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভুগছেন। ভোটাররা আমাদের কাছে বলছেন, ইভিএমে ভোট দিলে তাঁর ভোট তাঁর থাকবে কি না।’ এখনো নির্বাচনের ৮ থেকে ১০ দিন বাকি। এ সময়ের মধ্যে ভোটারদের ভালো করে প্রশিক্ষণ দেওয়ারও অনুরোধ জানান ইকরামুল হক।

মেয়রপ্রার্থী সাদেকুল হক খান বলেন, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে (শুধু কাউন্সিলর পদে) হেরে যাওয়ার পর অনেকেই অভিযোগ তুলেছিলেন, ইভিএমের ভোট সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে। ইভিএমে ভোট হয় ধীরগতিতে। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের অনেক ভোটার পড়াশোনা জানেন না। তাঁরা ভোট দেওয়া নিয়ে নানা উৎকণ্ঠায় আছেন। ভবিষ্যতে যেন ইভিএমের বদলে ব্যালটে ভোট হয়।

মেয়রপ্রার্থী এহতেশামুল আলম বলেন, গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্যালটে ভোট হয়েছে। সেটি সুষ্ঠু নির্বাচন ছিল। এর পর থেকে যেন সিটি নির্বাচনও ব্যালটে হয়। ভোটের আগে যেন প্রতিটি ওয়ার্ডের ভোটারদের ইভিএমে ভোট দেওয়ার প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

ইভিএমে ভোট গ্রহণের সমালোচনার পাশাপাশি জাতীয় পার্টির (জাপা) মেয়রপ্রার্থী শহিদুল ইসলাম বলেন, পেশিশক্তি আর টাকার শক্তি নির্বাচনকে বর্তমানে এমন পর্যায়ে নিয়ে গেছে যে মানুষ এখন নির্বাচনে অংশ নিতে চান না। ভোটারদের ভোট দিতে অনীহা সৃষ্টি হয়েছে।

মেয়রপ্রার্থী রেজাউল হক বলেন, ইভিএম উন্নত প্রযুক্তি। এখন প্রযুক্তির সময়। কাজেই ইভিএম পদ্ধতি বাদ দেওয়ার সুযোগ নেই। তবে এ প্রযুক্তির বিষয়ে ভোটারদের যথাযথ প্রশিক্ষণ দিতে হবে। নির্বাচনে প্রার্থীদের টাকা খরচের নির্ধারিত মাত্রা যাতে ছাড়িয়ে না যায়, সেটি দেখার জন্য নির্বাচন কমিশনের কাছে অনুরোধ করেন তিনি।

মেয়রপ্রার্থীদের বক্তব্যের পর প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। তিনি প্রার্থীদের আশ্বস্ত করেন, ইভিএম পদ্ধতিতে একজনকে ভোট দিলে অন্যজনের পক্ষে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। ইভিএম নিয়ে দুশ্চিন্তার কোনো কারণ নেই। ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট দেওয়ার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের কর্মীরা ময়মনসিংহে সাধারণ ভোটারদের শেখাচ্ছেন। যেখানে বেশি মানুষের সমাগম হয়, এমন স্থানে মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ইভিএমে ভোট দেওয়ার বিষয়ে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের লাইনেও ভোটারদের ইভিএম পদ্ধতিতে শেখানো হবে। ভোটাররা গোপন কক্ষে যাওয়ার আগপর্যন্ত সব প্রক্রিয়া শিখিয়ে দেওয়া হবে।

মো. আলমগীর বলেন, ‘আমাদের কাছে সব প্রার্থী সমান এবং একই রকম সম্মানিত। আমরা যেমন কঠিন, তেমনই ভালো। যদি কেউ ভোটের পরিবেশ নষ্ট করার অপচেষ্টা করেন, তাহলে ছাড় দেওয়া হবে না। আমাদের কোনো কর্মকর্তাদের যদি পক্ষপাতমূলক আচরণ করার প্রমাণ পাওয়া যায়, তাহলে তাঁকে শান্তিমূলক ব্যবস্থার আওতায় নেওয়া হবে।’

মেয়রপ্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় সভার পর কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীদের সঙ্গেও মতবিনিময় সভা করেন নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর। আগামী ৯ মার্চ ইভিএম পদ্ধতিতে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা আছে। এ নির্বাচনে মেয়র পদে ৫ জন, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে ৬৯ জন এবং কাউন্সিলর পদে মোট ১৪৮ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। একটি ওয়ার্ডে একজন মাত্র প্রার্থী হওয়ায় সেখানে ভোট হবে না।