ঢাকার অদূরে সাভারের আশুলিয়ায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলিয়ার নাগরিক রেহানা পারভীনকে স্বামীর যোগসাজশে অপহরণের পর হত্যা ও গুম করার অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনার প্রায় দুই মাস পর তাঁর লাশ খুঁজে পায় পুলিশ। রেহানাকে হত্যা ও গুমের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দুজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। আজ শুক্রবার দুপুরে নবাবগঞ্জ থানা মিলনায়তনে ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহমেদ মুঈদ এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান।
পুলিশ সুপার বলেন, রেহানা পারভীনের সঙ্গে তাঁর স্বামী আওলাদ হোসেনের সাংসারিক টানাপোড়েন ছিল। গত ৬ জুন অস্ট্রেলিয়া থেকে স্বামীসহ দেশে ফেরেন রেহানা। এর মধ্যে শ্বশুরবাড়ি ও আত্মীয়স্বজনের বাসায় কয়েক দিন বেড়াতে থাকেন। এরপর তাঁকে স্বামীর বোনের বাসা আশুলিয়ার নয়াহাট মৌনদিয়া চৌরাপাড়া নিয়ে হত্যার পর লাশ মাটিতে পুঁতে রাখা হয়। ঘটনার পর স্বামী আওলাদ হোসেন অস্ট্রেলিয়া চলে যান। এরপর তাঁকে খুঁজে না পেয়ে রেহানার মা আইরিন আক্তার ৩১ আগস্ট নবাবগঞ্জ থানায় জিডি করেন। একই সময়ে অস্ট্রেলিয়ান ফেডারেল পুলিশ ও হাইকমিশন ইন্টারপোলের মাধ্যমে বাংলাদেশ পুলিশ সদর দপ্তরে রেহানার তথ্য চেয়ে বার্তা পাঠায়।
৮ সেপ্টেম্বর রেহানার মা বাদী হয়ে নবাবগঞ্জ থানায় অপহরণ এবং নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন। এরপর নবাবগঞ্জ থানা-পুলিশ মামলার তদন্ত শুরু করে। একপর্যায়ে ঢাকা জেলা পুলিশের জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার আশরাফুল আলমের নেতৃত্বে একটি দল ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে রেহানার ননদ পাপিয়া আক্তার ও প্রতিবেশী নবাবগঞ্জের পাতিলঝাপ গ্রামের আমজাদ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে। জিজ্ঞাসাবাদে তাঁরা ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তাঁদের দেওয়া তথ্যমতে লাশের সন্ধান পায় পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে আশুলিয়া থানার নয়াপাড়া থেকে পুঁতে রাখা রেহানার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ সময় লাশটি অর্ধগলিত অবস্থায় ছিল।
সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার আহমেদ মুঈদ আরও বলেন, আওলাদ হোসেন স্ত্রী রেহানাকে হত্যার পর লাশ গুম করে ১৩ জুলাই অস্ট্রেলিয়া পাড়ি জমান। তিনি নবাবগঞ্জের ছোট রাজপাড়া গ্রামের আবদুল মান্নানের ছেলে। তাঁদের তিন ছেলে ও দুই কন্যাসন্তান আছে।
সংবাদ সম্মেলনে নিহত রেহানার মা আইরিন আক্তার বলেন, তাঁর মেয়ের নামে কয়েক কোটি টাকার সম্পত্তি আছে ঢাকা ও দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব আত্মসাৎ করতেই পরিকল্পিতভাবে খুনি আওলাদ, পাপিয়া, আমজাদসহ অন্য সহযোগীরা তাঁর মেয়েকে নৃশংসভাবে হত্যা করেন। তিনি তাঁর মেয়ের হত্যাকারীদের বিচার চেয়ে ফাঁসি কার্যকরের দাবি জানিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
সংবাদ সম্মেলনে রেহানার বাবা লেহাজউদ্দিনসহ স্বজনেরা ও নবাবগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মমিনুল ইসলাম, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা নুর খান উপস্থিত ছিলেন।