‘লন্ডনে আমার ভাই থাকে। সে বলেছে রাকিবকে এবার পাঠিয়ে দে। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। দুমাস পর রাকিবের চলে যাওয়ার কথা ইংল্যান্ডে। সেখানে সে পড়বে। কিন্তু আমার কপালে এটাই লেখা ছিল।’
রেলওয়ে থানায় বসে কথাগুলো বলতে বলতে চোখ ভিজে যাচ্ছিল মোতাহের হোসেন খানের। তাঁর দুই ছেলে ও এক মেয়ে। বড় ছেলে রাকিব ট্রেনের ধাক্কায় মারা গেল। এই শোক কীভাবে সইবেন এই বাবা।
শোকাতুর মোতাহের হোসেন খান বলেন, ‘আমার ছেলে মেধাবী। নানার বাড়িতে মানুষ হয়েছে। ভাই–বোনের মধ্যে সে সবার বড়। এসএসসি ও এইচএসসিতে গোল্ডেন জিপিএ–৫ পেয়েছিল। তার চাচা লন্ডন থেকে বলেছে রাকিবকে পাঠিয়ে দিতে। সে ওখানে পড়ালেখা করবে। একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তার ভর্তির সবকিছু প্রায় শেষপর্যায়ে ছিল। দু মাস পর চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু এবার একেবারেই চলে গেল ছেলেটা।’
হাটহাজারী নজুমিয়া হাট এলাকায় মোতাহের হোসেন খানের বাড়ি। রাকিব থাকতো নানা বাড়ি খন্দকিয়া গ্রামে। সেখানে চার বন্ধু মিলে গড়ে তুলেছিলেন কোচিং সেন্টার। নাম ‘আর অ্যান্ড জে কোচিং সেন্টার’। মোস্তফা মাসুদ ওরফে রাকিব, রিদুয়ান চৌধুরী, জিয়াউল হক ওরফে সজীব ও ওয়াহিদুল আলম জিসান। মিরসরাইয়ের খৈয়াছড়া পর্যটন স্পট থেকে ফেরার সময় ট্রেনের ধাক্কায় মাইক্রোবাস আরোহী এই চার বন্ধুসহ ১১ জনের মৃত্যু হয়েছে। বাকিরা কোচিং সেন্টারের ছাত্র ও চালক।
উদ্যমী তরুণদের স্বপ্ন ছিল বড় হবে। আকাশ ছোঁবে। আকাশ ছোঁয়ার জন্য রাকিব যেতে চেয়েছিলেন ইংল্যান্ডে, উচ্চশিক্ষার জন্য। বিধিবাম। উচ্চশিক্ষা নেওয়া আর হলো না। কোচিং সেন্টারের শিক্ষার্থীদেরও উচ্চশিক্ষা নিতে বিদেশ যাওয়ার স্বপ্ন দেখাতেন তাঁরা। শিক্ষার্থীদের একজন মোসহাব আহমেদ হিশাম। এলাকায় সবাই হিশাম নামে চেনেন। তার মা, ভাই, বোন সবাই কানাডায় থাকেন। আগামী মাসে অনুষ্ঠিতব্য এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে তার কানাডা চলে যাওয়ার কথা ছিল। এর আগেই শুক্রবার লাশ হয়ে ফিরল মোসহাব।
শ্রাবণের বৃষ্টিহীন এক দুপুরে সবাইকে অঝোর ধারায় কাঁদিয়ে দূর অজানায় চলে গেল মোসহাব। ছোট থেকেই চাচা আকবর হোসেন মানিকের কাছেই বড় হয়েছিল। তাঁর ভাই–বোনেরাও চট্টগ্রামে থাকেন না। মানিক চাচাই তাকে সন্তানের স্নেহে মানুষ করেছেন। সেই চাচার বুকফাটা আর্তনাদে ভারী হয়ে আসছিল লাশ হস্তান্তরের স্থান রেলওয়ে থানার পরিবেশ। বারবার বলছিল,‘ আমার হিশামকে এভাবে কাফনে দেখার আগে আমার কেন মৃত্যু হলো না।’