পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া উপজেলার বুড়িরচর গ্রামের মো. ইমরান (১৯) দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী। পরিবারের দারিদ্র্যের কারণে তাঁকে নানা প্রতিকূলতার মধ্যে পড়াশোনা করতে হয়েছে। এ বছর তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হয়েছেন। আগামী ১৫ জুলাই তাঁর ক্লাস শুরু হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আসন বরাদ্দ না পাওয়ায় তাঁকে মেসে থাকতে হবে। থাকা, খাওয়া ও পড়াশোনার খরচ চালানো নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন মো. ইমরান।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, মো. ইমরানের বাবা মো. সোবাহান পেশায় দিনমজুর। বছর দুয়েক আগে নারকেলগাছ থেকে পড়ে গুরুতর আহত হয়ে এখন আর ভারী কোনো কাজ করতে পারেন না তিনি। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ইমরানের বড় ভাই শফিকুল ইসলাম ট্রাকচালক ছিলেন। গত ফেব্রুয়ারিতে সড়ক দুর্ঘটনায় পা ভেঙে এখনো চিকিৎসা নিচ্ছেন। ভাইয়ের উপার্জন বন্ধ থাকায় ইমরানের পড়াশোনার খরচ চালানো পরিবারের পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
মো. ইমরান বলেন, ‘লেখাপড়ার প্রতি আগ্রহ থাকায় পরিবার থেকে সব সময় সহযোগিতা পেয়েছি। বন্ধু ও শিক্ষকেরা সহযোগিতা করেছেন। বাবা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর বড় ভাই আমার পড়াশোনার খরচ চালাতেন। তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হওয়ার পর আমার পড়াশোনা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। ১৫ জুলাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস শুরু হবে। এ জন্য একটি মেসে উঠব। প্রতি মাসে মেসে থাকা-খাওয়ার জন্য পাঁচ হাজার টাকা খরচ হবে। সব মিলিয়ে ছয়–সাত হাজার টাকা প্রতি মাসে খরচ। তবে আমার পরিবারের পক্ষে এত টাকা দেওয়া সম্ভব নয়।’
২০২১ সালে বরিশাল সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয় থেকে জিপিএ–৩ পেয়ে এসএসসি পাস করেন ইমরান। এরপর ২০২৩ সালে রাজধানীর পল্লবী কলেজ থেকে জিপিএ ৪ দশমিক ৪২ পেয়ে এইচএসসি করেন। গত ২ মে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ইতিহাস বিভাগে ভর্তি হন। জন্মের পর থেকে মো. ইমরানের চোখে সমস্যা। ব্রেইল–পদ্ধতিতে পড়াশোনা করেছেন তিনি। পরীক্ষায় শ্রুতলেখকের সহযোগিতা নিয়েছেন।
বরিশাল সরকারি দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী বিদ্যালয়ের শিক্ষক খোকন চন্দ্র বর্মণ বলেন, ‘মো. ইমরান আমাদের বিদ্যালয়ে বিনা মূল্যে সরকারি খরচে পড়াশোনা করেছেন। তাঁর পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার জন্য সহযোগিতা প্রয়োজন।’